নতুন চমক আসছে যুবদলে

রাজপথে বিএনপির আন্দোলনের ‘অন্যতম প্রাণশক্তি’ জাতীয়তাবাদী যুবদলে এখন ত্রাহি অবস্থা। বেশ কয়েকবার এই সংগঠনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও সেই প্রক্রিয়া ঝিমিয়ে পড়ায় এখন হতাশ নেতা-কর্মীরা।

দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, এতে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। আশঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনারও। তবে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এবার অবধারিতভাবেই যুবদলের নতুন কমিটি আনছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। আর এতে থাকছে নতুন চমক। দলীয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে এসে এবার সংগঠন গোছানোর চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পুনর্গঠন করা হবে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক জেলা কমিটি। একই সঙ্গে নতুন কমিটি আনা হচ্ছে অঙ্গসংগঠনগুলোতেও। এর অংশ হিসেবে যুবদলে হাত দিচ্ছেন বিএনপি প্রধান। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরপরই পুনর্গঠনের কাজে হাত দেওয়া হবে।

সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে যুবদলের শাখা থাকলেও নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনে এখন জিমিয়ে পড়েছে যুবদলের কার্যক্রম। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে নামমাত্র নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ঘটলেও তেমন সাড়া জাগাতে পারছে না এ সংগঠনটি। তাই পুরোনো নেতৃত্বে যুবদল আন্দোলনে সফলতা এনে দিতে পারবে না বলেই বিএনপি মনে করছে। সে জন্য ভবিষ্যৎ আন্দোলনে সফলতা এনে দিতে পারবে যুবদলের জন্য এমন নেতা খোঁজা হচ্ছে।

সূত্রের দাবি, যুবদলের ব্যর্থতায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপরই তিনি যুবদলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া হঠাৎ করেই থেমে যায়। তবে তিন মাসের আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকার রাখতে না পারায় এবার এই সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, যুবদলের সভাপতি হিসেবে খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সানাউল হক নীরুর নাম আলোচনায় আছে। তবে দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা ‘এক নেতার এক পদ’ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এই উক্তির পক্ষে মতামত দেন। সে জন্য খায়রুল কবির খোকনকে নরসিংদী জেলা বিএনপির দায়িত্বেই দেখতে চান বিএনপি নেত্রী। তা ছাড়া তার স্ত্রী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা এবার ওই সংগঠনের সভানেত্রী হতে পারেন। একই পরিবারের দুজন দুই সংগঠনের দায়িত্ব দিচ্ছেন না বিএনপি নেত্রী। এ্যানিকেও মূল দলে রাখার পক্ষে খালেদা জিয়াসহ দলের অন্যান্য নীতিনির্ধারকরা। তবে ছাত্রদলের একসময়ের আলোচিত নেতা সানাউল হক নীরুর নাম যুবদলের সভাপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর তাকে আবার দলে ফিরিয়ে এনে যুবদলের দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও প্রাক্তন ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতন। এছাড়া যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবের নামও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে নীরব ছিলেন পুরোপুরি অনুপস্থিত। বিএনপি নেত্রীও তার প্রতি ক্ষুব্ধ। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন মীর নেওয়াজ আলী।

মহানগর উত্তর-দক্ষিণ : কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে নতুন নেতৃত্বে চমক দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। উত্তরে বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন মামুন হাসান (সভাপতি) ও এস এম জাহাঙ্গীর (সাধারণ সম্পাদক)। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং সর্বশেষ তিন মাসের আন্দোলনে মাঠে দেখা যায়নি তাদের। তবে কঠিন প্রতিকূল পরিবেশেও ব্যক্তি চেষ্টা এবং দলের প্রতি ভালোবাসায় মাঠে ছিলেন অনেক নেতা, যারা এবার নেতৃত্বপ্রত্যাশী। নেতা-কর্মীরা চাইছেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঢাকায় শক্তিশালী অবস্থানের জন্য ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত এসব নেতৃত্ব আনা প্রয়োজন। ঢাকা উত্তরের সভাপতি হিসেবে এস এম জাহাঙ্গীরের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ আবেদীন প্রিন্স, হারুনুর রশিদ হারুন, উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল হোসেন, শফিকুল ইসলাম মিলটন আলোচনায় রয়েছেন। তবে এর মধ্যে প্রিন্সের জন্য বিএনপি নেত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন দলের প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, দলের সংকটকালীন সময়ে যিনি খালেদা জিয়ার একজন আস্থাভাজন নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বর্তমান সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজনু। তবে এর মধ্যে মজনু দক্ষিণের সভাপতি পদ পাচ্ছেন, এটি একপ্রকার নিশ্চিত। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে আছেন বর্তমান সহসভাপতি শরীফ হোসেন এবং মাসুদ আহমেদ মিলনসহ অনেকে।

যুবদলের পুনর্গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলের সকল পর্যায়ে পুনর্গঠনের আওতায় আনার চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন দলের কোনো ক্ষেত্রেই পুনর্গঠন হচ্ছে না, সে জন্য স্বভাবতই নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি চাওয়া আছে। মূল দল, জেলা কমিটি, তৃণমৃল পর্যায় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেরও পুনর্গঠনের আওতায় ওলটপালট হবে। এর অংশ হিসেবে যুবদলও পুনর্গঠনের আওতায় আসছে। তবে যাদের মধ্যে প্রজ্ঞা, সততা, কমিটমেন্ট, নিষ্টা ও দলের জন্য ভালোবাসা আছে, তাদের সামনে আনা হবে বলে জানান বিএনপির শীর্ষ এই নেতা।



মন্তব্য চালু নেই