নওগাঁয় শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) : চলনবিল এলাকার নওগাঁয় শুঁটকি তৈরিতে এখন চরম ব্যন্ত সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে। জেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক শুঁটকি তৈরির সঙ্গে জড়িত। তবে শুঁটকি ব্যবসায়ী ও এ কাজের সঙ্গে জড়িত মৎস্যজীবিদের সহজ শর্তে সরকারি ঋণ ও প্রশিক্ষন দেযার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর ও মান্দা উল্লেখ্য স্থান। জেলার এই তিন উপজেলাটি চলনবিল এলাকা হওয়ায় সারা বছর দেশীয় জাতের সব ধরণের মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে মাছের পরিমাণ পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বৃহৎ অংশ পানির নীচে তলিয়ে থাকে ৩ থেকে ৪ মাস । উপরস্ত আত্রাই বাজারটি আত্রাই নদীর উপর। আত্রাই নদীতে প্রায় সারা বছরই মাছ পাওয়া যায়। এর ফলে আহসানগঞ্জ রেল ষ্টেশনের (আত্রাই) এর পূর্ব পার্শে। একটি বৃহৎ মাছ বাজার ( আড়ৎ) আছে। প্রতিদিন এই বাজার থেকে শতশত মণ সব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। আহসানগঞ্জ বাজার এলাকার উত্তম কুমার জানান, এবারে এলাকা জুড়ে বন্যায় বিভিন্ন পুকুর পানিতে ডুবে যাওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিলে ধরে পড়েছে দেশীয় প্রজাতির রকমারী শতশত মণ মাছ। প্রতিদিন নৌ পথে, ট্রেন, ট্রাক, ভটভটি যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, এ এলাকায় সারা বছর দেশীয় জাতের সকল ধরণের প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছও কম দামে কেনা বেচা হয়ে থাকে।এখান থেকে মাছ কিনে উপজেলার প্রায় এক হাজার লোক শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের সেলিনা বেগম জানান, প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে বাজার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। এরপর ভালো করে পানিতে পরিস্কার করে লবন মিশিয়ে রোদে শুকাতে দেন। মাছের আকার ও রোদের তাপমাত্রা উপর মাছ শুকায়। সংসারের কাজের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারা শুটকি তৈরি করে থাকেন। এতে তাদের একদিকে যেমন শ্রমিক নেয়ার টাকা বেঁচে যায় তেমনি তাদের বাড়তি আয় হয়। সদুপুর গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, গত বছর এলাকা বন্যা ছোট আকারে হওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার তারা কোমর বেঁধে শুঁটকি তৈরিতে ঝেঁপে পড়েছেন। ষ্টেশন বাজার এলাকার ছমিরন বিবি জানান, তাদের কোন জমিজমা নেই। তাদের মাছ কেনা-বেচার মধ্যে দিয়েই পরিবারের আয় রোজগার। বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় ভালো মাছ পাওয়া যায়। পরিবারের পুরুষ মানুষ নদী ও খালে মাছ ধরেন আর তারা শুঁটকি তৈরি করে থাকেন। বছরের এই ৬ থেকে ৭ মাস মাছের শুঁটকি তৈরি করে কেনা-বেচা করে সারা বছরের সাংসারিক খরচ আয় করে থাকেন।। রাম, মাজেদুল, পচু, গেদা,ছাত্তার ও রুবেল হোসেন জানান, রোদ, বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সব কিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছেন। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সাথে সাথে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। দুই- আড়াই কেজি মাছ রৌদে শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। বাজারে কাঁচা মাছের আমদানি কম থাকলে বেশি দামে মাছ কিনতে হয়। তখন শুঁটকি তৈরির খরচ বেশি হয়। এতে লাভ কম হয়। বাজারে যদি মাছ বেশি থাকে তাহলে কম দামে মাছ পাওয়া যায়। তাতে ভালো লাভ হয়। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের গ্রামের জিল্লুর রহমান জানান, ২০/২৫ বছর আগে থেকে ভরতেঁতুলিয়া, সদুপুর ও ষ্টেশন বাজার এলাকার প্রায় এক হাজার লোক শুঁটকি তৈরির সাথে জড়িত। বছরের সারা বছর শুঁটকি তৈরি হলেও বর্ষা মৌসুমের ৬ থেকে ৭ মাস পুরোদমে শুঁটকি তৈরির কাজ চলে। শুঁটকি তৈরীতে সরকারিভাবে কোন আর্থিক ঋণ বা প্রশিক্ষণ দেয়া হতো তাহলে তাদের শুঁটকি মাছের গুনগত মান বৃদ্ধি, বেশি লাভের পাশাপাশি ব্যবসা বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো। ভরতেুঁলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্রাইয়ের শুঁটকির চাহিদা থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নিলফামারী, সৈয়দপুর,কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের প্রায় ১৫/২০ জেলাতে করা হয় আত্রাইয়ের শুঁটকি মাছ। এবারে ব্যবসাটা লাভজনক হবে বলে আমরা আশাবাদি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হাান্নান জানান, জেলার তিনটি উপজেলা আত্রাই,রাণীনগর ও মান্দায় প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক এ কাজের সাথে জড়িত। তাদের প্রশিক্ষন না থাকায় মান সম্পন্ন শুঁটকি তৈরি করতে না পারায় দাম ভালো পান না। এ কাজের সাথে জড়িতদের সাথে দ্রুত আলোচনা করে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা ও ব্যবসায়ী লাইসেন্সন যদি থাকে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়া পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই