নওগাঁর রাণীনগরের নদী-বিলে ধরা পড়ছে দেশী প্রজাতির মাছ

নওগাঁর রাণীনগরে নদী ও বিলগুলোতে পানি কমার সাথে সাথে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। মাছ ধরার নেশায় নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন ধরণের জাল দিয়ে মাছ ধরতে কেটে যাচ্ছে মৎস্যজীবিসহ সাধারণ মানুষের দিন রাত।

নওগাঁ জেলা থেকে ৮কিলোমিটার দক্ষিনে খাল-বিল, নদী বেষ্টিত উপজেলা রাণীনগর। এই উপজেলার পশ্চিমে কাশিমপুর, মিরাট ও গোনা ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে নওগাঁর ছোট যমুনা নদী। মিরাট ইউনিয়নে রয়েছে উন্মুক্ত জলাশয় বিল চৌর ও বিল মুনছুর। চলতি বছরে দু’দফা বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন ছোট বড় নদ-নদী খাল বিল পানিতে ডুবে যাওয়ায় তীব্র তাপদাহে পানি কমতে থাকায় ধরা পড়ছে প্রচুর দেশীয় জাতের মাছ। গত সোমবার উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা, ধনপাড়া, মিরাট, বৈঠাখালি, ও গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, পিরেরা, বেতগাড়ী, দুর্গাপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মৎস্যজীবিসহ স্থানীয় অন্য পেশার মানুষ বন্যায় ক্ষতির কারণে হাতে তেমন কাজ না থাকায় কর্মহীন এইসব মানুষেরা নদী ও খাল বিলে জাল দিয়ে মাছ ধরে প্রতিদিন ৫শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত আয় করছে। এই অভাব অনটনের সময়ে মাছ ধরে বাড়তি আয় যেন পরিবারের ডাল ভাত জোগানোর আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এবার নদ-নদী খাল বিলে প্রচুর পরিমানে দেশীয় জাতের মাছ ধরা পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে পুঁটি, টেংড়া গচি, চিংড়ি, শাটি, মলা, ঢেলা, চান্দা, বোয়াল পাতাশি রাইকর সহ বিভিন্ন জাতের দেশী প্রজাতির মাছ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ১লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৮ জন লোক বসবাস করে। এর মধ্যে মৎস্যজীবির সংখ্যা ৩হাজার ৭শ’জন। মৎস্য চাষীর সংখ্যা ৪হাজার ৭শ’জন। মৎস্যজীবি সমিতির সংখ্যা ৬০টি। রাণীনগরে বার্ষিক মাছের চাহিদা ৩ হাজার ৯৯১ মেট্রিকটন। পুকুর ও দীঘির সংখ্যা ৪৮৪টি, মৌসুমী জলাশয়ের সংখ্যা ৩১০টি নদীর সংখ্যা ৫টি বিলের সংখ্যা ৬টি, প্লাবন ভূমির সংখ্যা ১৬টি, বানিজ্যিক মৎস্য খামারের সংখ্যা ৩১টি, মৎস্য অভয়াশ্রম ১টিসহ বিভিন্ন ধরণের জলাশয়ে মৎস্যজীবিরা মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মৎস্যজীবি জাহাঙ্গীর, লেজাম, রেজ্জাক, রফিকুল জানান, প্রতি বছরের তুলনায় নদ-নদীতে এবার দেশীয় প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ছে। আমদানি বেশি হওয়ায় মাছের দামও কমে গেছে। তারপরও প্রতিদিন কয়েকজন মিলে জাল টেনে ও বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরে ৪/৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। দাম বেশি থাকলে ওই পরিমাণ মাছই আরো বেশি টাকা পাওয়া যেত। বন্যার কারণে এবার তারা দেশীয় জাতের মাছ বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাচ্ছে।

উপজেলার কুজাইল বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেকেন্দার আলী জানান, বর্তমানে কুজাইল বাজারে প্রচুর দেশীয় জাতের মাছ আমদানি হচ্ছে। দাম কম থাকায় মৎস্যজীবিরা যথাযথ দাম পাচ্ছেনা। তারপরও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাছ এখান থেকে পাইকাররা নিয়ে যায়। রাণীনগরে একটিসরকারি ব্যবস্থাপনায় মাছ প্রক্রিয়া কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রধান মন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই