ধর্ষণ-হত্যা-দুর্নীতিমুক্ত দেশই স্বাধীন বাংলাদেশ

আজ (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ একটি কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ঘোষণা করেছিলো- ‘আজ থেকে আমরা স্বাধীন, আমরা মুক্ত।’ এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই শুরু হলো যুদ্ধ। মুক্তির জন্য যুদ্ধ। অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ নয়মাসের সেই যুদ্ধ শেষে বিজয় অর্জিত হলো ১৬ ডিসেম্বরে। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পর এখনও বাংলাদেশে হরহামেশাই ঘটছে ধর্ষণ এবং হত্যার মতো ঘৃণ্য সব কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে দুর্নীতি তো আমাদের পিছুই ছাড়ছে না। এইসব কারণে এতো বছর পরও দেশ নামে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গড়ে ওঠছে না। তাইতো ২০১৬ সালের স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের মানুষ মনে করছে, ধর্ষণ-হত্যা-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশই স্বাধীন বাংলাদেশ।

শনিবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবসের পড়ন্ত বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা পরিণত হয়েছিলো লোকারণ্যে। পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীবাসীর অনেকেই এখানে এসেছিলেন একটু মুক্ত হাওয়ায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষার কথা জানতে চাইলে তারা প্রায় একই রকম কথা জানান। তাদের মধ্যে একজন হলেন এস. আলম শিকদার। তিনি কলাবাগান লেকসার্কাসের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। স্বাধীনতা দিবসে সংসদ ভবন এলাকায় এসেছেন ঘুরতে। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিতি বলেন, ‘দেশ যখন পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত হবে, মারামারি-হানাহানি বন্ধ হবে সেদিনই সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জিত হবে।’

রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে বিকেলে হাঁটতে আসা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পত্রিকাতে যখন দেখি শুধু নেতিবাচক সংবাদে পত্রিকা ভরে আছে, তখন মনে হয় না আমরা স্বাধীন। এখনো এই বাংলাদেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা হয়, গুম হয় এবং ধর্ষিত হয়। মানুষতো স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না। তাহলে দেশকে স্বাধীন বলা যায় কী করে?’

তেজগাঁও কলেজের অনার্স শেষবর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এবারের স্বাধীনতা দিবসের চাওয়া হলো তনু হত্যার সঙ্গে জড়িত নেকড়েদের অচিরেই উচিৎ বিচার করা হউক। সে যত বড় প্রভাশালীই হউক না কেন- যেন তাকে ছাড় না দেয়া হয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসা মেহেদী হাসান আনসারী বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে সবার আগে বেকার সমস্যা সমাধান করা উচিত। তাহলেই অন্যান্য অপরাধ কমে আসবে।’

বাবা-মার সাথে মুহাম্মদপুর টাউন হল এলাকা থেকে এসেছে ছোট্ট শিশু আরিফ আরোয়ার। কথা হলো তার সঙ্গেও। সে বলে, ‘স্বাধীনতা দিবস খুব ভাল লাগে। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে পারি।’

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদুল বাকী বলে, ‘আমার প্রত্যাশা থাকবে- শিশুদের যেন স্বাধীনভাবে চলতে, খেলতে এবং শিক্ষার নিরাপদ সুযোগ দেয়া হয়।’

২৬ মার্চ উপলক্ষে সংসদ ভবন এলাকায় শেষ বিকেলে ঘুরতে আসা মানুষগুলো এভাবেই স্বাধীনতা দিবসের অনুভূতি এবং তাদের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করছিল। তাদের সবার কথায় একটি বিষয়ই ঘুরেফিরে উঠে এসেছে- আর তা হলো, শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয়, চিন্তা ও মননের স্বাধীনতা একটি রাষ্ট্রের জন্য এবং রাষ্ট্রের মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই