ধর্ষণ থেকে বাঁচলেও রেহাই মেলেনি

ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পেতে নদী সাঁতরে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান উবাইদা (১৮)। সৈন্যদের নাগালের বাইরে চলে গেলেও গুলির সীমানা অতিক্রম করতে পারেননি তিনি। পলকের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হন উবাইদা। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে পাশের ধানক্ষেতে কাতরাতে থাকেন। রক্তক্ষরণ শেষ না হতেই নদী সাঁতরে তার সামনে হাজির হয় কয়েকজন সেনা সদস্য। খুব কাছ থেকে গুলি করে উবাইদার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। গ্রাম ছাড়ার সময় উবাইদার লাশ ফেলে রেখে যায় একটি রোহিঙ্গা বাড়িতে।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় মংডু এলাকার দুদান গ্রামে শনিবার রাতে শিশুসহ চার রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করে দেশটির সেনাবাহিনী।

নিহতদের মধ্যে উবাইদা, ইউনুছ (২২) ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় দুই শিশু রয়েছে।

বলি বাজার ২৪ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের ১০০ বার্মিজ সেনা দুদান গ্রামের ছোট্ট এলাকা খায়েন চংয়ে অভিযান চালায় শনিবার বেলা ২টায়। আগের দিন তারা কিয়েটিয়েপায়েন (স্থানীয় নাম কিয়েরি ফেরাং) গ্রামে যে তাণ্ডব চালায় তাতে ভীত ছিল খায়েন চং এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এলাকায় অভিযানের খবরে বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর হাতে আটক, নির্যাতন, ধর্ষিত এবং নিহত হওয়ার ভয়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করতে থাকেন। ওইদিন কাউকে আটক করতে ব্যর্থ হয়ে সেনাসদস্যরা বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। বিকেল চারটার দিকে সেনাবাহিনী খায়েন চং এলাকা ছেড়ে চলে যায়। পরে তারা দুদান গ্রামে অভিযান চালায়। সে গ্রামের মানুষও পালাতে শুরু করে। নারীরা বার্মিজ সেনাদের হাতে ধর্ষিত হওয়ার ভয়ে পালাচ্ছিল। তাদেরই একজন উবাইদা।

নদী সাঁতরে সৈন্যদের কাছ থেকে দূরে চলে এসেছিলেন বলে মনে করেছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু গুলির সীমানা অতিক্রম করতে পারেননি তিনি। রাইফেলের গুলি এসে লাগে তার গায়ে। গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে পাশের ধানক্ষেতে কাতরাতে থাকেন উবাইদা।

ওদিকে ইউনুছ সৈন্যদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর গুলিতে আহত উবাইদা তখনও শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাঁতরে আসে তিন সেনা সদস্য। এবার খুব কাছ থেকে গুলি করে রোহিঙ্গা তরুণীর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। তারপর লাশটি নিয়ে চলে যায়। স্থানীয় সময় বেলা ৬টার দিকে গ্রামটি ছেড়ে যাওয়ার আগে উবাইদার লাশটি একটি রোহিঙ্গা বাড়িতে ফেলে যায়।

উবাইদার মর্মান্তিক ঘটনাটি খুব কাছ থেকে দেখেন পাশ্ববর্তী একটি গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকা এক রোহিঙ্গা। মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা এই রোহিঙ্গার বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়, উবাইদার পাশে সাঁতার কাটার সময় আরও দুজন শিশু হারিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেনাদের গুলিতে ওই দুই শিশুও মারা গেছে। এছাড়া আরও কয়েকজন নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত শতাধিক বেসামরিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে, আটক করেছে আরও এক হাজার। সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষিত হয়েছে ৮০ জন রোহিঙ্গা নারী। সেনারা তিন হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

গত ৯ অক্টোবর বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে সেনাবাহিনী এই ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ (ক্লিয়ারেন্স অপারেশন) চালাচ্ছে বলে দাবি করছে। সূত্র: পিপলস ভয়েস।



মন্তব্য চালু নেই