ধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়াতে মঞ্চ চায় সরকার

দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক প্রেক্ষপটে জঙ্গিবাদী উত্থানের চেষ্টা আজ নয় অনেক পুরোনো। এক্ষেত্রে ধর্মীয় উগ্রতাকেই বেশিবার পূঁজি করে অপচেষ্টা চলেছে। কথিত ধর্মীয় চেতনায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা প্রতিরোধে দেশের সব ধর্মের লোকের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি প্লাটফর্ম (মঞ্চ) চাইছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকার নীতিহগতভাবে সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি এলাকায় সব ধর্মের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সর্ব ধর্মীয় সংগঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ উদ্যোগটি সরাসরি মনিটরিং করছে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সর্ব ধর্মীয় প্লাটফর্ম তৈরির প্রক্রিয়া অনেক দিনের। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আগামীকাল রাজধানীতে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত দেড়-দুই বছরে সারাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। স্বাধীনতার যুদ্ধে এ চিত্র বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

ধর্মীয় সহিঞ্চুতায় বিশ্বাসী হলে ধর্মীয় সংঘাত কিংবা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা ঘটতো না।

এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির স্থায়িত্ব চায় না সরকার। সেজন্য দলমত ও ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার একটি সম্মেলন হবে। সেখানে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকবেন। এরপর প্রতি বিভাগীয় জেলা শহরেও এমন সম্মেলন করা হবে। সব ধর্মের লোক মিলিয়ে একটি মঞ্চ তৈরি করা হবে।

সূত্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের পর বিভাগীয়, জেলা পর্যায় থেকে বিভিন্ন ধর্মের হাজারের বেশি নেতার উপস্থিতি থাকবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) কামরুল আহছান বলেন, গত শনিবার পুলিশ সদর দফতরে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিশ্চিত করা হয়, আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) সম্মেলনে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার খতিব, ইমাম, শিক্ষক ৫০০ জন, হিন্দু ধর্মের ২০০ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ১৫০ জন, খ্রিষ্টান ধর্মের ১৫০ জন এই সম্মেলনে উপস্থিতি থাকবে। এছাড়াও মহাপুলিশ পরির্দশকসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ডিএমপি কমিশনার। আমন্ত্রিত সব ধর্মের একজন করে নেতা বক্তব্য রাখবেন। জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মালম্বীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ আমন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ সহযোগিতা করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।

বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও বলেন, আমাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধর্মীয় উগ্রতা বন্ধে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। পরিস্থিতি বদলে গেছে। বৈশ্বিক জঙ্গিবাদী চাপ রয়েছে। সব ধর্মের মানুষের মধ্যকার সম্প্রীতি রক্ষা করা সম্ভব না হলে অস্থিরতা ও বিদ্বেষ আরো বাড়বে।

বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসেই প্রায় তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত তিন মাসে ৮২৫০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিহত, আহত, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত, গণধর্ষণ, জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের ঘটনা রয়েছে।

এসব বন্ধ হওয়া জরুরি। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হলে সত্যিকার অর্থে জঙ্গিবাদ কিংবা ধর্মীয় উগ্রতা ঠেকানো যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রাজধানীর বনানী পূজা কমিটির প্রেসিডেন্ট সুভাষ ঘোষ বলেন, সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে যেসব ধর্মের কিংবা ধর্মভিত্তিক দলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্রতায় মদদের অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেও যদি ডাকা হয় তবে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে বলা যাচ্ছে না।জাগো নিউজ



মন্তব্য চালু নেই