ধর্মভিত্তিক জোট ‘পাকাচ্ছেন’ এরশাদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে এক তাবুর নিচে নিয়ে আসছেন বিরোধীদলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ইতোমধ্যে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। শিগগিরই দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করে জোটের ঘোষণা দেবেন। আর পৃথক এ জোট গঠন হলে মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্যরা পদত্যাগ করবেন।

গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে জাপা প্রধান এরশাদ বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতেই পৃথক জোট গঠন করা হচ্ছে। বেশকটি দলের সঙ্গে কথা হয়েছে। অচিরেই চূড়ান্ত আলোচনা করে ঘোষণা দেয়া হবে। জোট গঠন হলে নির্বাচনের আগেই মন্ত্রিসভা থেকে জাপার সদস্যরা পদত্যাগ করবেন।

জাপার মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলছেন, ইসলামী আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখা ও জনগণের অধিকারের প্রশ্ন মাথায় রেখেই পৃথক জোটের কথা ভেবেছেন তারা। পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুটি ইসলামী ভাবধারার দল যোগাযোগ করছে।’

জাপা থেকে বলা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বকীয়তা দেখাবে জাপা। পার্টির চেয়ারম্যান অনেকদিন আগে থেকেই বলে আসছিলেন এককভাবে নির্বাচন করার। একক শক্তি প্রদর্শনের। তবে কোনো দল যদি স্বেচ্ছায় জাপার তাবুর নিচে এসে দাঁড়ায় তাহলে সাদরে গ্রহণ করা হবে।

পার্টির চেয়ারম্যান সোজাসুজিই বলে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মতোই জাপা একটি জোট গড়বে। এ জন্য আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। গেল ২০ ফেব্রুয়ারি এরশাদ বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি একভাবে নির্বাচন করবে আর আমি এককভাবে নির্বাচন করব। আমার সঙ্গে যদি কয়েকটি দল আসে তাতে ক্ষতি তো কিছু নেই। ২০ দল, ১৪ দল আছে, আমারও এ রকম একটা জোট হবে। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমি এখনো কোনো ঘোষণা দিইনি। যাদের যোগ্য মনে করব, তাদের সঙ্গে নেব।’

জাপার এই জোট গড়ার প্রক্রিয়াকে অনেকেই সাধুবাদ জানালেও কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাপা চেয়ারম্যান আগামীতে হয়তো বিরোধীদলের মর্যাদাই পেতে চান। সে কারণেই বৃহৎ দুই দলকে চাপে ফেলতে জোট গড়ার হিসেব নিকেশ করছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে বিএনপিকে ঠেকাতে এরশাদের এটা একটা নতুন রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জোট গঠন করতে পারলে আখেরে লাভ হয় বড় দলেরই। ছোটদলগুলো কোনো সুফল পায় না। তাই যে ধারার জোটই হোক না কেন, গঠন করতে পারলে লাভবান হবে জাপাই।

তবে নতুন জোটের বড় ধরনের কোনো কার্যক্রম করার সক্ষমতা আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘ষাটের দশকের তুখোড় বাম রাজনীতিবিদরা এখন বড় দুটি দলের নেতা হয়ে রাজনীতি করছেন। দলীয়ভাবে যারা মোটামুটি সক্ষম, তারাও এখন জোটবদ্ধ। একই কথা সম্ভাব্য অন্য জোটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

শেলী প্রশ্ন তোলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দল যে সক্ষমতা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্ভাব্য নতুন জোটের সে শক্তি আছে কি? তবে নতুন কিছুকে স্বাগত জানানোই যেতে পারে।’

তবে জোট গঠন নিয়ে কিছু বলতে নারাজ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তার শুধু একটাই কথা, আগে জোট গঠন হোক, পরে কথা বলা যাবে।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জোট গঠন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এসব জোটে তুলনামূলকভাবে বড় দল দ্বারা ছোট দল শাসিত হয়। কিন্তু কোনো রেজাল্ট আসে না।’

দীর্ঘ দশ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিয়ে এতদিন নানা নেতিবাচক মন্তব্য করে আসছিলেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। বলছিলেন, বিএনপি দুর্বল হয়ে গেছে। তার এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। জোট গঠনের মধ্য দিয়ে এরশাদ তার সেই শক্তিরই জানান দিতে চান।



মন্তব্য চালু নেই