কালশী বিহারী ক্যাম্পে পুড়িয়ে হত্যা

ধরাছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা

রাজধানীর মিরপুরের কালশী বিহারী ক্যাম্পে হামলা ও অগ্নিসংযোগের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে রবিবার। ওই ঘটনায় ৯ জনকে আগুনে পুড়িয়ে ও একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হলেও এখনো প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার প্রকৃত কারণও অজানা রয়ে গেছে, তাই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে প্রকৃত অপরাধীরা। পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি মামলা করা হলেও তা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ, তদন্তেরও কোনো অগ্রগতি নেই।

২০১৪ সালের ১৪ জুন শবে বরাতের রাতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয়, বিহারী ক্যাম্পবাসী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিহারী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ইয়াসিন আলীর পরিবারের ৯ সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।

নিহতরা হলেন- ইয়াসিন আলীর স্ত্রী বেবী আক্তার (৪৫), ছেলে আশিক (২৫), তিন মেয়ে শাহানি (২০), আফসানা (১৮) ও রুকসানা (১৪), যমজ লালু (১২) ও বুলু (১২), অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ শিখা (১৯) ও শাহানির ছেলে মারুফ (৩)। এ ছাড়াও গুলিতে মো. আজাদ (৩৫) নামে একজন মারা যান।

ভুক্তভোগী স্বজনদের অভিযোগ, ওই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল রানা ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সহযোগীদের হাত থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিকভাবে ঘটনার তদন্ত করছে না। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা ভিকটিম তাদের বক্তব্যও তদন্ত কর্মকর্তারা শোনেননি।

বিহারীদের সংগঠন স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানীজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) সভাপতি আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ৯ জনকে পুড়ে মারা হয়। এর বিচার কি আমরা পাব না? আমাদের ওপর হামলা হল, উল্টো আমরাই হলাম আসামি।’

এসপিজিআরসির সাধারণ সম্পাদক এম শওকত হোসেন জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তারা ভিকটিমদের কাছে এসে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাননি। যাদের জবানবন্দী তারা রেকর্ড করেছেন তাদের কেউই ঘটনাস্থলে ছিল না।

ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে আসলেই জড়িত, তাদের সবার নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। গুরুত্ব সহকারেই তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘যারা নেতৃত্ব দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তারা পলাতক।’

হামলায় স্থানীয় এমপি ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় তদন্ত এগোচ্ছে না- বিহারী নেতৃবৃন্দের এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‍তিনি বলেন, মামলার তদন্ত তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কোনো প্রভাবশালীর কারণে এ তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার প্রশ্নই নেই।

ওই দিনের ঘটনায় যে পরিবারের ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান সে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য ফারজানা আক্তার (১৬)। পবিত্র শবে বরাতের রাতের ওই ঘটনার কয়েক মাস পরই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার বাবা ইয়াসিন আলী।

সেদিনের ঘটনায় পরিবারের বাকি ৯ জনের সঙ্গে ফারজানা দগ্ধ হলেও ভাগ্যগুণে বেঁচে যান। মসজিদে থাকায় বাবা ইয়াসিন আলীও ওই দিন প্রাণে বেঁচে যান। ফারজানাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। ফারজানা যখন মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তখন একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা ইয়াসিন।

মোহাম্মদপুরে খালা শাহিদা বেগম ও খালু আসলাম খানের পরিবারে বসবাসরত ফারজানা জানান, পবিত্র শবে বরাতের রাতের সেই নারকীয় ঘটনার জন্য পড়ালেখায় এক বছর পিছিয়ে গেছেন তিনি। ওই বছর তিনি মিরপুরের ইউসেফ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তেন। পরিবার হারানোর সেই পুরনো স্মৃতি তাড়া করে বলে কালশীতে আর ফিরে যাননি।

গুলিতে নিহত মো. আজাদের ভগ্নিপতি মো. সুমন বলেন, ‘এ হামলায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত ছিলেন। তাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হবে কিনা তা আমাদের জানা নেই।’দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই