দয়াবান দালাল

সিরিয়ার চলমান সঙ্কটের কথা এখন আর কারো অজানা থাকার কথা না। সিরিয়ার লাখো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেছে নিচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোকে। আর এজন্য তাদের অনেক ঝড় ঝাপটাও পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই মারা যাচ্ছেন আবার কেউ প্রান ফিরে পাচ্ছেন। প্রতিদিনই ঘটছে নানা হৃদয় বিদারক ঘটনা যা নাড়া দিচ্ছে পুরো বিশ্ববাসীকে। তেমনি এক ঘটনা আয়নাল কুর্দি নামের ছোট্ট শিশুর মৃত্যু। যা বিশ্ব বিবেককে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। বেঁচে থাকার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সেদিন সে বাবার হাত ধরে অজানা ভবিষ্যত পানে বের হয়েছিল। কিন্তু বাবা পারেনি তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে। নিষ্ঠুর পৃথিবীর কিছু বর্বর মানুষের কর্মকাণ্ডে প্রাণ দিতে হয়েছিল ছোট্ট এই শিশুটিকে। তবে সবসময় একইরকম ঘটবে তা ভাবাটাও কিন্তু ঠিক না। যেমনটা আমরা দেখতে পাই জিজিত ও তার মেয়ে মায়ার ক্ষেত্রে।

জিজিত তার একবছরের ছোট মেয়েকে নিয়ে সিরিয়ায় থাকতেন। পেশায় একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি দামেস্কের একটি হাসাপাতালে কাজ করতেন। মেয়েকে নিয়ে দিন বেশ ভালই কাটছিল তার। কিন্তু ভাল সময় যেন বেশিদিন থাকে না। সিরিয়ার কথিত ইসলামিক জঙ্গিরা তাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে এবং যুদ্ধে যেসব জঙ্গিরা আহত হয় তাদের চিকিৎসা দিতে বলে। কিন্তু জিজিত তাদের এই প্রস্তাব মেনে না নিলে তারা অনেকবার তার উপর হামলা চালায়। এরপর জিজিত সিদ্বান্ত নিল দেশ ছাড়ার। জিজিতের ভাষ্যমতে ‘নিজের দেশ ছেড়ে যাওয়া মোটেও আমার জন্য সহজ ছিল না, আমি আমার দেশকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু আমি বাধ্য’।

শিশু

সিরিয়া ছাড়তে হলে শরণার্থীরা যে দালালদের খপ্পরে পরে না এটা ভাবাটা অবশ্যই ভুল হবে। অধিকাংশ শরণার্থীরা ইউরোপের কোন দেশে যেতে দালালদের আশ্রয় নেয়। জিজিতও আবু শাহাব নামে এক দালালের সাহায্য নেয়, যে কিনা তাকে ইউরোপে পৌঁছে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। শাহাব জিজিতকে তার স্ত্রীর আভিনয় করতে বলে। কারণ শাহাব ছিল সুইডিশ নাগরিক সেক্ষেত্রে মায়া যদি তার মেয়ে হয় তাহলে অনায়াসে সে তার বাবার সঙ্গে সুইডেন পৌছাতে পারবে। আর জিজিতকে বলা হয় সিরীয় নাগরিক। কিন্তু চেকিংয়ের সময় শাহাব ও মায়া সহজে পার পেয়ে গেলেও জিজিতকে সিরীয় নাগরিক হওয়ার জন্য আটকে দেয়া হয়। জিজিতের ভাষ্যমতে ‘সে আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমার পৃথিবী যেন একমুহুর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল। আমি পাগলের মত চিৎকার করছিলাম’। এদিকে একদিন পর জিজিতের কাছে শাহাবের ফোন আসল। শাহাব বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমারও সন্তান আছে, আমিও কারো বাবা। আমি মায়াকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি সে ভালো আছে।

শিশু২

জার্মানিতে থাকত জিজিতের একজন বন্ধু তার নাম হাসনা। সে শাহাবকে অনুরোধ করে মায়াকে তার কাছে পৌছে দিতে। জিজিত ফোনে হাসনাকে সব খুলে বললে হাসনা তার মেয়েকে রাখতে রাজি হয় শুধু তাই নয়, প্রতিদিন তার মেয়ের ছবিও পাঠাতো জিজিতের কাছে।

এরপর অনেক ঝড়ঝাপটা পাড়ি দিয়ে অবশেষে জিজিত পৌছালো তার মেয়ের কাছে। অনেক দিন পর মাকে দেখে চিনতে যেন একটু কষ্ট হচ্ছিল মায়ার। তবে হাজার হলেও মাকে তো আর ভোলা যায় না। জিজিত ও মায়া এখন জার্মানিতেই থাকেন। মায়া একটু একটু জার্মান ভাষা শিখছে। জিজিতের ইচ্ছা তার মেয়েকেও তার মত ডাক্তার বানাবে।



মন্তব্য চালু নেই