দ্বন্দ্বের জেরে সচিবের ক্ষমতা খর্ব করলেন শিক্ষামন্ত্রী

এইচএসসিতে ভর্তি জটিলতার জেরে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের ক্ষমতা খর্ব করলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মঙ্গলবার থেকে মন্ত্রণালয়ের সব সিদ্ধান্ত মন্ত্রীকে না জানিয়ে চূড়ান্ত করা যাবে না- এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন খোদ মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি এ নির্দেশনা জারি করেছেন বলে মন্ত্রীর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে পক্ষ থেকে কয়েকবার চেষ্টা করেও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না বলে জানান। তবে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান নজরুল ইসলাম খান, যিনি এন আই খান নামে অধিক পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সাবেক এ প্রকল্প পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে আমলা মহলে পরিচিত। তিনি মন্ত্রণালয়ের আসার পর থেকেই মন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিরোধ শুরু হয়।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রমে মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ও তার অনুমতি ছাড়াই ভর্তি নীতিমালা করায় মন্ত্রী-সচিব দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়।

এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে মন্ত্রী গত শনিবার হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনে সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। পরদিন সচিবালয়ে মন্ত্রী-সচিব পাশাপাশি বসে ভর্তি ভোগান্তির জন্য দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন। কিন্তু আগের দিনের বৈঠকে সচিবকে বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন মন্ত্রী। পরদিন সোমবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে ভর্তি ভোগান্তি নিয়ে নানা আলোচনা হয়। সেখান থেকেই সচিবের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানিয়েছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে অতি গোপনে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মন্ত্রীর একটি নির্দেশনা পড়িয়ে শোনানো হয় এবং তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। মন্ত্রী স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে (শিক্ষামন্ত্রী) বলে দিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের সব সিদ্ধান্ত মন্ত্রী চূড়ান্ত করবে। আমাকে না জানিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখন থেকে আর নেয়া যাবে না।’ যদিও এ নির্দেশনার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্ত সচিব থেকে শুরু করে উপ-সচিব পর্যায়েও চূড়ান্ত করা হয়।

এর আগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত একটি নীতিমালা নিয়েও মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেখানে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দেন সচিব, পরদিন যা বাতিল করেন মন্ত্রী। এছাড়াও শিক্ষাসচিবের অবাস্তব বিভিন্ন পরিপত্র নিয়েও তার ওপর বিরক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

দ্বন্দ্ব নিয়ে যা বলেছিলেন তারা
মন্ত্রী-সচিবের দ্বন্দ্ব নিয়ে সরাসরি কথা বলেছিল দু’জনের সঙ্গেই। আলাপকালে দু’জনই বিষয়টিকে উড়িয়ে দেন। ১ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।’ গত রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমরা মিলেমিশে কাজ করি। আমাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিমত হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক।’ সূত্রঃ বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই