দৌড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় আরাফাত

শামসুজ্জামান আরাফাত দৌড়ে এসেছেন সেই টেকনাফ থেকে। বঙ্গবন্ধু সেতুর সামনে পড়লেন বিপাকে। দৌড়ে বা হেঁটে সেতু অতিক্রমের কোনো সুযোগ নেই। টিমের পক্ষ থেকে তাকে বলা হলো এটুকু রাস্তা যেনো তিনি গাড়িতেই পার হন। কিন্তু এতোটুকু ছাড় দেওয়ার মানুষ আরাফাত নন। করে বসলেন অদ্ভুত এক কাজ। যমুনার জলে ঝাপ দিলেন। উদ্দেশ্য সাঁতরে পার হবেন, হলেনও। এই হলেন শামসুজ্জামান আরাফাত।

সোমবার (৬ মার্চ) তেঁতুলিয়ার ভারত সীমান্ত রেখা ছুঁয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দৌড়ে অতিক্রম করলেন তিনি।

দ্য গ্রেট বাংলাদেশ রান নামে এ দৌড় আরাফাত শুরু করেছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পরিবেশ টাওয়ার থেকে। মোট ২০ দিনে এক হাজার চার কিলোমিটার পথ শেষে করেছেন ৬ মার্চ। তারুণ্যকে স্বাস্থ্য সচেতন করার প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এই বিশ দিনের পথচলায় আরাফাতকে অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক বন্ধুর পথ।

‘মহাসড়কে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা যানবাহন একটা বড় ঝুঁকি ছিলো। যমুনা সেতু আমরা দৌড়ানোর অনুমতিও পাইনি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে। যদিও উদ্দেশ্য জানতে পেরে পরে উৎসাহও দিয়েছেন তারা। তবে সাধারণ মানুষ দিয়েছেন অকুণ্ঠ সমর্থন। অনেক সময় রাস্তার ধারে কোনো বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম অথবা রান্না করে খাওয়ার অনুমতি চেয়েছি। তারা শুধু অনুমতিই দেননি, আমাদের নানা ধরনের সাহায্যও করেছেন।’

এভাবেই বিবরণ দিচ্ছিলেন এ আয়োজনের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন।

আরাফাত প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার দৌড়েছেন। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ দৌড়েছেন ৭০ কিলোমিটার আর সর্বনিম্ন ৩১ কিলোমিটার। অনেক সময় ক্লান্তি এবং ব্যথায় কাতর হলেও থেমে যাননি আরাফাত। আইস থেরাপি নিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। শামসুজ্জামান আরাফাত বলছিলেন তার এই স্বপ্ন যাত্রার গল্প। নাসিরের টিমটি তাকে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন সাপোর্ট দিয়েছে পুরো সময়।

‘আমাকে মানুষ অনেক সময়ই পাগল বলেছেন। হয়তোবা তারা জানে না বলেই বলেছেন। কিন্তু এ দৌড়ের মাধ্যমে এটিকে একটি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছি। আমার দৌড়ের মূল বিষয়ই ছিলো সুস্বাস্থ্যময় তারুণ্য গড়ে তোলা। তারুণদের অনেকে মাদক গ্রহণ করেন। তারা যদি এসব ছেড়ে দৌড়ান তাহলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। আমার এ দৌড়ের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো এটি।’

আরাফাত তার এই দৌড়ের জন্য অনেক আগে থেকেই কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দৌড়াতেন। এর আগে তিনি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর সাঁতরে পাড়ি দিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ম্যারাথনে। এখন তার স্বপ্ন ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দেওয়া। দৌড়, সাঁতারসহ বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য ক্রীড়ার সমন্বয়ে আয়রন ম্যান টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াও শামসুজ্জামান আরাফাতের স্বপ্ন।

দ্য গ্রেট বাংলাদেশ রানের পৃষ্ঠপোষক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। সহযোগিতায় ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর এ আয়োজনে পরিকল্পনাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলো উড পেকার।



মন্তব্য চালু নেই