দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় তীব্র যানজট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

পদ্মার তীব্র স্রোত আর ভাঙনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অচলাবস্থা কিছুতেই কাটছে না। ৪টি ঘাটের মধ্যে কোনো রকমে চালু রয়েছে ১ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট। বন্ধ রয়েছে ২ ও ৩ নম্বর ঘাট। এতে পারাপারের অপেক্ষায় উভয়ঘাটে আটকা পড়া শত শত যানবাহনের যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এরমধ্যে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে নদীপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে ৪ শতাধিক যানবাহন। এর মধ্যে শতাধিক রয়েছে গরুবাহী ট্রাক। যাত্রীবাহী বাসও শতাধিক। বাকিগুলো পণ্যবাহী ট্রাক। পাটুরিয়া অংশেও পারের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দৌলতদিয়ায় ২ ও ৩ নম্বর ফেরিঘাট মেরামতের কাজ চলছে। ১ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে চলছে পারাপার। তাই নদী পার হতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ নম্বর ঘাটটি মেরামতের কাজ চলছে কয়েকদিন ধরে। প্রায় ২০-২১ ঘণ্টা সংস্কার কাজ করার পর মাত্র ৩ ঘণ্টা চালু থাকছে এ ঘাটটি। এমন অবস্থায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, ঈদের আগেই অচলাবস্থা কাটিয়ে তারা ৪টি ঘাটই সচল করবে। বর্তমানে এ রুটে ছোট-বড় ১৪টি ফেরি চলাচল করছে বলে দাবি করেছেন বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা।

দৌতদিয়ায় পারের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক জব্বার মুন্সি জানান, তিনি খুলনা থেকে ঢাকা যাচ্ছেন। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে গত ৩ দিন ধরে বসে আছেন পারের অপেক্ষায়। পথ খরচের টাকা ফুরিয়ে আসছে।

রাজবাড়ীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মিদুল রঞ্জন জানান, প্রবল স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সে কারণে পণ্যবাহী ট্রাকচালক ভাইদের মাওয়া ঘাট অথবা বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যাতায়াত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র কারিগরি সহকারী রবিউল আওয়াল বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মেরামত করে ঘাট চালুর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই তীব্র স্রোতে আবারো ভেঙে যাচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে মোকাবেলা করার সাধ্য আমাদের নেই। তবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ঘাটগুলো সচল রাখার।’

এদিকে পাটুরিয়া অংশে পারের অপেক্ষায় থাকা বাসযাত্রী সুজন বলেন, ‘আমি কাশিয়ানি যাব। ঢাকা থেকে কাশিয়ানি যেতে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষা করছি সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে। কখন যেতে পারব তা কেউ বলতে পারছে না।’

একই গাড়ির আরেক যাত্রী নাছিমা সুমি বলেন, ‘আমরা শুনতে পারলাম দৌলতদিয়ায় ৪টি পল্টুনের মধ্যে দুটি সচল আছে বাকি দুটি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামত কাজ চলছে। মেরামত কি আগে করতে পারে না কর্তৃপক্ষ। এভাবে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’

গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক আকতার হোসেন বলেন, ‘আমি যাব নাজিরপুর। নাজিরপুর যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা আর সেখানে পাটুরিয়া ঘাটে বসে আছি ৫ ঘণ্টা। কখন যাব, আবার কখন ফিরব ঢাকাতে, খুব টেনশন হচ্ছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) পাটুরিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিদ্দীন রাসেল জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় এ রুটে যাত্রীবাহী যানবাহন বাড়তে শুরু করেছে। এ রুটে ১৮টি ফেরির মধ্যে ছোট-বড় ১২টি ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের পল্টুন ভেঙে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজকালের ভেতর ৪টি ঘাট পুনরায় সচল হবে।



মন্তব্য চালু নেই