দেশেই আছে পরমাণু বোমার প্রধান উপাদান

সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে মূল্যবান পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব অঞ্চলে এই তেজস্ক্রিয় খনিজের ঘনত্বও অনেক বেশি। এখন সরকার এগিয়ে এলেই এই খনিজ থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) সম্মেলন কক্ষে ‘ইউরেনিয়াম সার্চিং অ্যান্ড কোয়ান্টিফিকেশন: এন অ্যাটেম্পট অ্যান্ড সাকসেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ কে এম ফজলে কিবরিয়া।

পরমাণু শক্তি কমিশনের নিউক্লিয়ার সেফটি, সিকিউরিটি ও সেফগার্ডস বিভাগের প্রধান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা সম্পন্ন পাথর সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এসব পাথরে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে। কিছু কিছু পাথরে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে, যার ঘনত্ব ৫০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) এরও বেশি।

ড. ফজলে কিবরিয়া বলেন, পাথর সংগ্রহ করে ‘গামা স্প্রেকট্রোস্কপি’ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এগুলো ইউরেনিয়াম ধরা পড়ে। পরে ‘এনার্জি ডিসপার্সিব এক্সরে’ পরীক্ষার মাধ্যমে নমুনায় ইউরেনিয়ামসহ অন্যান্য সম্ভাব্য মৌল শনাক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, কিছু কিছু পাথরে উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর।

তিনি আরো জানান, জাপান ও কোরিয়ায় কয়েকটি নমুনা পাঠানো হয়েছিল। দু’দেশের পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে বাংলাদেশের ফলাফল সঙ্গতিপূর্ণ।

এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটাই বাংলাদেশে প্রথম চেষ্টা যার মাধ্যমে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাগুলোর নমুনা সংগৃহীত ঠিক কোনস্থানে কত ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে, সেসব স্থানের জিপিএস রেকর্ড সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে ইউরেনিয়াম রয়েছে এমন খবর জানা থাকলেও লোকেশনের সঠিক ডাটাবেজের অভাবে সেসব ফলাফল বর্তমান সন্ধানে তেমন কাজেই আসেনি। এমনকি কোনো কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) প্রকাশিত ইউরেনিয়াম উত্তোলন সম্বন্ধীয় বইয়ে উল্লেখিত তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী যেসব খনি থেকে বর্তমানে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করা হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশতেই এর ঘনত্ব ৩০০-১০০০ পিপিএম। এটা খুশির খবর যে, আমাদেরও উত্তোলনযোগ্য ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে। এখন প্রয়োজন কতটুকু এলাকাজুড়ে এমন ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে এবং দেশের আর কোথায় কোথায় এমন ঘনত্বের ইউরেনিয়াম রয়েছে তা খুঁজে বের করা। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

সেমিনারের ‘বাপশক’ এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. দিলীপ কুমার সাহা, ভৌত বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ড. আলেয়া বেগম, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী আনিছা বেগম, খাদ্য ও তেজস্ক্রিয় ইনিস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. খোরশেদ আলম, বৈজ্ঞানিক তথ্য বিভাগের পরিচালক ড. হিমাংশু, প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী জাফর সাদেক, তেজস্ক্রিয় খনিজ ইউনিটের প্রাক্তন পরিচালক ড. ইউনুস আকন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপর গবেষণা করেন এমন একশত জন বিজ্ঞানী অংশ গ্রহণ করে।



মন্তব্য চালু নেই