দেশকে সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলব : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশকে সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলব। দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’

শুক্রবার বিকেলে ঐহিতাসিক সোহরওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচির শেষ দিনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘৪১ সালের আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তখন আর কারো কাছে হাত পেতে চলতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগই স্বাধীন করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। যারা কোনো কিছুর জন্ম দেয় তাদের মায়া-দরদ থাকে। আর যারা উড়ে এসে বসে তারা ধ্বংস করে। ১৯৮১ সালেও যাদের ভাঙা সুটকেস ছিল। এখন তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ১৫-১৬টি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংকের মালিক হয়েছে। এতো টাকা কোথায় থেকে এসেছে। সবই খুঁজে বের করা হবে।’

বিদেশে টাকা পাছার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুইচ ব্যাংকে কার কত টাকা আছে, খালেদা জিয়ার কত আছে, আর কোথায় কি আছে সব বেরিয়ে আসবে। উনিও ধরা খেতে পারেন। আরো যত ব্যাংকে টাকা আছে আমরা ফিরিয়ে আনবো। এক ছেলের টাকা এনেছি। বাকীগুলোও আনব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বমন্দা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রেখেছি। পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেছি। নিজেদের টাকায় করব, কারো কাছে ধরণা দিব না।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে আসেননি। এখন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে বিদেশি প্রভুদের পা ধরছে। এতে দেশের বদনাম হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিদেশের কাছে ধর্ণা দেয় না। পা ধরে না। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যায়। জনগণই মূল শক্তি। বিএনপির নেত্রীকে বলছি এসব বন্ধ করুন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না। মানুষ খুন করা, বিদেশিদের কাছে পা ধরা বন্ধ করুন। এতে দেশের বদনাম হয়। এসব বাদ দিন। ধৈর্য ধরুন।’

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া অভিযোগ করছেন জিয়াকে নাকি আমরা হত্যা করেছি? তাকে জিজ্ঞাসা করি, এতদিন কোথায় ছিলেন। যখন জিয়ার লাশের বাক্স নিয়ে আসা হল তখন স্বামীর লাশ সেখানে আছে কিনা জানতে চাননি কেন? আপনার ছেলেও তো তার বাবার লাশ দেখতে যায়নি? বিএনপি নেত্রী ১৯৯১ সালে অভিযোগ করলেন, এরশাদ জিয়ার খুনি। কিন্তু পরে আবার তিনি এরশাদের কাছ থেকে দুটি বাড়ি নিলেন। আর যেদিন জিয়া মারা গেছেন প্রথম বিবৃতি আমিই দিয়েছিলাম। বিবৃতিতে বলেছিলাম, সাংবিধানিক গণতন্ত্র চাই। কারণ সেদিন কথা বলার মতো সাহস কারো ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি যখন দেশে ফিরে এসেছি তখন জিয়াউর রহমান ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করেছি। যাযাবর জীবন-যাপন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। খুনিদের খালেদা জিয়া পুরস্কৃত করেছিল। গ্রেনেড হামলা করে খুন করা তারই অভ্যাস। তিনি নিজে খুনি, ছেলে খুনি, স্বামী খুনি। সারাদেশের মানুষ জানে তিনি খুনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আলাপ-আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। টেলিফোন ধরার জন্য তৈরি হতেই নাকি তার দেরি হবে। অবশ্য থ্রিজি আসাতে এখন ফোনেও চেহারা দেখা যায়। কিন্তু আমি তো তার চেহারা দেখার জন্য ফোন করতে চাইনি।’

গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার জন্য ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপি মানুষকে নির্যাতন করেছিল। ১৯৭১ সালে যাদের পরাজিত করেছি তাদের দোসর হিসেবেই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল খালেদা জিয়া। কিন্তু পারেনি। আওয়ামী লীগের জন্ম, প্রতিষ্ঠা, সংগ্রাম সব কিছু মানুষের স্বাধীতার জন্য। আর সেই স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা যিনি রেখেছেন, তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি ইতিহাসের যা কিছু পেয়েছে আওয়ামী লীগই দিয়েছে।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যকাণ্ডের বিচার হয়েছে, যুদ্ধারপরাধীর বিচারও বাস্তবায়ন হবে।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচির শেষ দিনের সমাবেশ শুরুর আগ থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসলেও কিছু সময় থেকে সভাস্থল ত্যাগ করাতে মঞ্চের সামনে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি দিয়ে বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সেয়দ আশরাফুল ইসলাম, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, পঙ্কজ দেবনাথ, শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।



মন্তব্য চালু নেই