দেখতে কেমন ছিলেন যিশু খ্রিস্ট?

দেখতে কেমন ছিলেন যিশু খ্রিস্ট এমন প্রশ্ন নানাজনের। তবে ভরসানির্ভর উত্তর আজো পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধর্মগ্রন্থ বা লোকমুখে প্রচলিত কথা থেকেও এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বড়ই মুশকিল। সব গল্পই অস্পষ্ট। যিশু খ্রিস্টের চেহারার যে আদল খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমাদের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে, তার তুলনায় ছবিতে দেখানো মুখটির ধরন অনেক অনেক অনেক বছর আগেকার। প্রথম শতাব্দীর ইহুদি পুরুষদের খুলি নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংগৃহীত ফরেনসিক তথ্য অনুযায়ী কম্পিউটারের মাধ্যমে চিত্রায়িত হয়েছে ছবিটি। ‘ঈশ্বরের পুত্র’ খ্যাত যিশু খ্রিস্টের মুখে নতুন করে তুলি বুলিয়েছেন এক ব্রিটিশ অ্যানাটমিক্যাল আর্টিস্ট। যিশু খ্রিস্টের প্রতিকৃতিতে এতদিন ধরে একজন দীর্ঘ, ঝাঁকড়া স্বর্ণালী চুলের শ্বেতাঙ্গ পুরুষের আদল তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু গবেষণা বলছে, প্রকৃতপক্ষে যিশুর চেহারা সম্ভবত একদমই উল্টো ছিল। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক রিচার্ড নিয়েভ উত্তর ইসরায়েলের গ্যালিলির আশপাশ থেকে সংগৃহীত তিনটি প্রাচীন ‘সিমেটিক’ খুলি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিবিসির এক ধারাবাহিকের অংশ হিসেবে বিভিন্ন অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে যেসব পদ্ধতি বারবার ব্যবহার করেছেন তিনি, সেসব পদ্ধতিতেই খুলিগুলো নিয়ে গবেষণাও করেছেন। এভাবেই একটি মুখছবি ‘অঙ্কন’ বা ‘নির্মাণ’ করেছেন তিনি। পুনঃনির্মিত ছবিটি আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে, জানিয়েছে ইনডিপেন্ডেন্ট। বিশেষজ্ঞ মেডিকেল আর্টিস্ট অধ্যাপক নিয়েভ খুলিগুলোর বিভিন্ন অংশের ‘এক্স-রে’র জন্য ব্যবহার করেছেন কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি। খুলিগুলোর পুরুত্ব মূল্যায়নের মাধ্যমে যিশুর মুখের ত্বক ও মাংসপেশি পুনঃসংযোজন করেছেন তিনি। প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাগুলোর প্রাচীন চিত্রের মাধ্যমে যিশু খ্রিস্টের চুলের রঙ নির্ধারণ করেছেন তিনি এবং চুলের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থ বাইবেল নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। যিশু খ্রিস্ট দেখতে ঠিক কেমন ছিলেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আজো পাওয়া যায় না। চলতি বছরের শুরুতে ইতালীয় গোয়েন্দারা নিজেদের ধারণার প্রতিফলন ঘটিয়ে যিশু খ্রিস্টকে উপস্থাপন করেছিলেন একটি কিশোর ছেলেকে। এর জন্য গবেষণায় তারা ব্যবহার করেছিলেন ‘শ্রাউড অব তুরিন’। গির্জাগুলোতে আমরা যিশুর যে ছবিগুলো দেখি তাতে দেখানো হয়েছে যিশুর গায়ের রঙ বরফের মত সাদা, চুল ছিল লম্বা। যেহেতু ছবিগুলো শিল্পীর হাতে আঁকা। তাই সে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েই যিশুকে সবার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। যুগে যুগে এভাবেই আমরা যিশুকে একজন সুদর্শন পুরুষ হিসেবে নিজেদের মনে জায়গা দিয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো যিশু কি দেখতে সত্যিই এমন ছিলেন। ইতিহাস বলে, বেথেলহেমের যেই স্থানে যিশুর জন্ম হয়েছিল সেখানকার মানুষজন সাধারণত শ্যাম বর্ণের হয়ে থাকে। যদি তাই হয় তবে যিশুর গায়ের রং অতটা উজ্জ্বল কভাবে হলো। এর ব্যাখ্যায়, যেহেতু অধিকাংশ ইউরোপীয়ানরা খ্রিস্টধর্মালম্বী, তাই তারা নিজেদের মতো করেই যিশুকে সবার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তবে যেটুকু জানা যায়, খুব একটা আকর্ষণীয় দেখতে ছিলেন না তিনি। ইতিহাস বলে, যিশু যে সময়টাতে এসেছিলেন সেটা ছিল চতুর্থ শতকের কাছাকাছি এবং বাইজানটাইন আমল। সেই আমলের মানুষেরা সাধারণত সোনালী রংয়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধাণ করতেন। কিন্তু গির্জার বেশিরভাগ আঁকা ছবিগলোতে যিশুকে সাদা পোষাক পরা অবস্থায় দেখায়। আবার অনেক জায়গায় বলা হয়েছে, গির্জাগুলোতে যিশুর চেহারার যে গঠন দেখানো হয়েছে তাতে তার চেহারার সঙ্গে রোমান সম্রাট অগাষ্টাসের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যিশুর মাথার চুল এবং লম্বা দাঁড়ি নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। যিশুর লম্বা দাড়ি নিয়ে জানা যায়, হয়তো বা তিনি কখনো দাড়িই কামাতেন না। কিন্তু ইতিহাস বলে ভিন্নকথা। সেই যুগের মানুষরা বেশ পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। সেই আমলের রাজা তার সহকর্মীদের নিয়ে মাসের একটি দিন দাঁড়ি কামানোর জন্যই বসতো। বিষয়টি বিবেচনা করলে যিশুর লম্বা দাড়ি না হয়ে বরং ছোট দাড়ি হবার কথা। সবদিক বিবেচনা করে যিশুর যে চিত্র আমাদের কল্পনায় প্রকাশ পায় তাতে দেখা যায়, যিশু মোটেও সুদর্শন ছিলেন না। তবে কেমন ছিলেন তিনি? সেই প্রশ্নের সন্ধান করতেই গবেষণা শুরু করেছেন নৃতাত্ত্বিক রিচার্ড নেভ। বিবিসিতে এর ওপরে ২০০১ সালে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়েছিল। সেখানে দেখানো হয়েছে, যেহেতু বেশির ভাগ খ্রিস্টানই ইউরোপের বাসিন্দা, তাই যিশুর গঠনের বর্ণনাটাও অনেকটা ইউরোপীয়দের মত। খ্রিস্টধর্মালম্বীরা যিশুর পুনরায় ফিরে আসার অপেক্ষায় প্রতিবছর বেশ জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালন করেন যিশুর জন্মদিন।



মন্তব্য চালু নেই