দৃষ্টি দিতে আসছে বায়োনিক আই

আজ থেকে কয়েক দশক আগে নির্মিত কল্পবিজ্ঞান কাহিনী নির্ভর ছবি ‘স্টার ট্রেক’এ বেশ কিছু উন্নত প্রযু্ক্তির ব্যবহার দেখানো হয়। সময়ের স্রোতে যার অনেকগুলোই এখন বাস্তব রূপ পেয়েছে। সেসব প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম ছিল অন্ধ মহাকাশচারীর ব্যবহৃত বিশেষ চশমা। ছবিতে দেখানো হয়, উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্যে অন্ধ হলেও তিনি স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা ও কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি একদল মার্কিন বিজ্ঞানী সেই স্বপ্নের প্রযুক্তির বাস্তব রূপ দিয়েছেন। তাদের দাবি, স্টার ট্রেকের সেই বিআইই (Bionic implanted eyeballs) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অন্ধদের দৃষ্টিদান এখন আর অবাস্তব বিষয় নয়।

অবশ্য বিশেষ এই কনট্রাক্ট লেন্স (telescopic contact lenses) এখনও পরীক্ষাধীন। তবে যেটুকু সফলতা এসেছে তাতেই অন্ধদের জন্য এটি বেশ সহায়ক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ এই লেন্সের সাহায্যে একজন অন্ধ ব্যক্তি তার পরিবেশ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাবেন।

কেননা, আশেপাশে যা যা রয়েছে তার নিখুঁত বর্ণনা দৃষ্টিহীনের মস্তিস্কে পাঠিয়ে দেয় ওই বিশেষ চশমা। ফলে চোখে না দেখলেও অন্ধ ব্যক্তিটির মনে একটি দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। যে দৃশ্যকে অনুসরণ করে আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই তারা চলাফেরা করতে পারেন।

বিশেষ ওই গ্লাসটি দুটি ভাগে দৃষ্টিহীনের মনে মূল দৃশ্যটি উপস্থাপন করে থাকে। গ্লাসটিতে বসানো রয়েছে বিশেষ ক্যামেরা ও ক্ষুদ্র কম্পিউটার। ক্যামেরার যার সাহায্যে আসল দৃশ্যটি ধারণের পর সেই সংকেতটি বিশেষ কম্পিউটারে পাঠানো হয়। কম্পিউটার সেই দৃশ্যটি অন্ধব্যক্তির অপটিক নার্ভে বিশেষ সংকেত পাঠাতে থাকে। ফলে রেটিনার সংকেতের মতোই অপটিক নার্ভ সেই সংকেতটিকে পড়তে পারে। ফলে দৃষ্টিহীন সেই ব্যক্তি চোখের পেছনে হলেও মূল দৃশ্যটি দেখতে পারে। বুঝতে পারে আলোর বিচ্ছুরণ কিংবা কোনো নড়াচড়া।

অবশ্য যাদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে তারা জানিয়েছেন, মস্তিস্কে কৃত্রিম সৃষ্টি ওই দৃশ্যটি এখন পর্যন্ত সাদাকালো হিসেবেই মনে ধরা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই এই দৃশ্যটিকে আরও বাস্তব এবং রঙিন হিসেবে উপস্থাপণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তিটিকে এখনই সাধারণের ব্যবহারযোগ্য করছেন না। নতুন এই প্রযুক্তিটি প্রথমে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাহিনীর যেসব দক্ষ সেনারা অন্ধত্বের কারণে ঝড়ে গেছেন তাদের ফেরাতেই এটিকে ব্যবহারের চিন্তা ভাবনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটেরান এফেয়ার্স (Department of Veterans Affairs)সম্প্রতি সিনেটকে জানিয়েছে, দেশে অকার্য হয়ে থাকা এমন অন্তত ১৩ লাখ ২০ হাজার অভিজ্ঞ লোক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এদেরকে নতুন প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে দিলে আবারও তারা মূল স্রোতে ফিরতে পারবেন।

দীর্ঘদিন ধরেই অন্ধত্বকে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। আঘাত কিংবা চোখের নানা কঠিন রোগের কারণে সাধারণত রেটিনা নষ্ট হওয়ায় অন্ধত্ব বরণ করেন অনেকে। তবে সেকেন্ড সাইট নামক প্রতিষ্ঠানটি ‘আরগুস ২’ (Argus II) নামের যে বিশেষ চশমা আবিস্কার করেছে তা দৃষ্টিহীনদের আক্ষেপ অনেকটাই ঘোচাবে বলে বিশ্বাস তাদের।



মন্তব্য চালু নেই