দুধে ভেজাল পানি, রক্তে স্যালাইন!

রাজধানীর মহাখালীর একটি ব্ল্যাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে ৩২ ব্যাগ মাদকাসক্তের রক্ত ধ্বংসসহ ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলীর ৬১/১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রোগী কল্যাণ ব্ল্যাড ব্যাংক নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্তদাতার রক্তের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগে ৫ জনকে দুই বছর করে এবং একজনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ার পাশা।
২ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রবিউল ইসলাম (৪০), রিপন উদ্দিন (৩৫), সাইদুল ইসলাম (৩৫), আব্দুল আজিজ (৩২), আনোয়ার কালু (৪২) এবং এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন- ইকবাল কবির (২২)।
অভিযান শেষে ব্ল্যাড ব্যাংকটি সিলগালা করে দেয়া হয়। অভিযানের সময় র‌্যাব-১ এর সদস্য ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডা. যোগেশ চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।
আনোয়ার পাশা জানান, রক্তের ৫টি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক (এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া)। কিন্তু যেসব রক্ত পাওয়া গেছে সেগুলোর কোনোটিকেই পরীক্ষা করা হয়নি।
অভিযানের সময়েই দেখা যায়, হেরোইনসেবীর রক্ত নিচ্ছেন কালু। তিনি গত ২০ বছর ধরে মাদকাসক্তদের বিভিন্ন ব্ল্যাড ব্যাংকে নিয়ে এসে তাদের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করেন। এছাড়াও তাজুল শেখ নামে ক্যান্সার রোগীকে পরীক্ষা ছাড়া রক্ত দেয়া হচ্ছিল। পঙ্গু হাসপাতালের এক রোগীর জন্য তার স্বজন দেড়হাজার টাকা দিয়ে ওই ব্ল্যাড ব্যাংক থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেন। তাকে কর্মচারী ইকবালের স্বাক্ষরিত একটি টেস্ট রিপোর্টও দেয়া হয়।
আনোয়ার পাশা আরো জানান, মাদক সেবীদের রক্ত হওয়ায় তাতে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং তাদের অনিরীক্ষিত রক্তের মাধ্যমে রক্তবাহিত রোগ সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অভিযুক্তরা জানান, মাদক সেবীরা মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে রক্ত বিক্রি করে। এ রক্ত বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এছাড়াও এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ রক্ত তৈরি করার কথাও জানান। অভিযুক্তরা মাদকাসক্ত এবং পেশাদার রক্তদাতাদের রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্টে ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে তা বেচাকেনা করে আসছে।



মন্তব্য চালু নেই