দু’দিন আগেই দুইশতাধিক গ্রামে ঈদ

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে ঈদুল-আজহা। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, ভোলা, শেরপুর, লক্ষ্মীপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, মৌলভিবাজার ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার প্রায় দুইশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মুসলমান এই দিনটি উদযাপন করছে।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলার ৪ উপজেলার ৩০টি গ্রামে ঈদুল আজহা পালন হচ্ছে। অন্তত ১০ হাজার ভক্ত ও মুরিদান এ ঈদে অংশগ্রহণ করবেন। সুরেশ্বর দরবার শরীফে সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের মুত্তায়ালী ইকবাল নুরী জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় শত বছর যাবৎ সুরেশ্বর পীরের দরবারে সকল ভক্ত ও তাদের মুরিদানেরা একই নিয়মে ঈদ উৎসব পালন করে আসছে।
সে সূত্র ধরে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর, চণ্ডিপুর, ইছাপাশা, থিরাপাড়া, ঘড়িষার, কদমতলী, নিথিরা, মানাখানা, নশাসন, ভুমখারা, ভোজেশ্বর,জাজিরা উপজেলার কালাইখার কান্দি, মাদবর কান্দি, সদর উপজেলার বাঘিয়া, কোটাপাড়া, বালাখানা, প্রেমতলা, ডোমসার, শৌলপাড়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা, পাপরাইল ও চরাঞ্চলের ১০টি গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবারে ১০ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবে।

মাদারীপুর: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। তাই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুরে শনিবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার মোল্ল্যা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা, জাজিরা, মহিষেরচর, জাফরাবাদ, চরকালিকাপুর, তাল্লুক, বাহেরচরকাতলা, চরগোবিন্দপুর, আউলিয়াপুর, ছিলারচর, কুনিয়া, মস্তফাপুর, কালকিনির সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, আলীনগর, বাঁশগাড়ী, খাসেরহাট, আউলিয়াপুর, রামারপোল, ছবিপুর, ছিলিমপুর, ক্রোকিরচর, সিডিখান, কয়ারিয়া, রমজানপুর, বাটামারা, রাজারচর, শিবচরের পাচ্চর, স্বর্ণকারপট্টিসহ মাদারীপুর জেলার চারটি উপজেলার প্রায় ৫০ গ্রামে ঈদ হচ্ছে।

দিনাজপুর: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও দিনাজপুরের ১৪টি গ্রামে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
শনিবার সকাল সোয়া ৮টায় দিনাজপুর শহরের ডেফোডিল কমিউনিটি সেন্টারে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এই জাময়াতে শতাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আবু ইসাহাক।
এ ছাড়াও চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, বারো জামায়াত চত্বর, সাইতারা রাবার ড্যাম, কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর, রসুলপুর ও বিরামপুর উপজেলার কয়েকটি স্থানে পৃথকভাবে পবিত্র ঈদুল-আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
পরে পশু কোরবানি দেন তারা।

সাতক্ষিরা: সাতক্ষীরায়ও এবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একগ্রুপ ঈদ জামাতের উদ্যোগ নিয়েছে।
শনিবার সকাল ৭টা ৪৫টায় সাতক্ষীরা পৌর অডিটরিয়ামে উক্ত ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্যোক্তরা জানান, উক্ত ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন মো. মাকসুদুর রহমান। তবে তিনি অনুপুস্থিত থাকলে ইমামতি করবেন মো. রবিউল ইসলাম। অডিটরিয়ামের ঈদ জামাতে মহিলাদের জন্যেও নামাজের ব্যবস্থা আছে বলে জানানো হয়েছে।

চাঁদপুর: আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে শনিবার ঈদুল আজহা পালন হচ্ছে। চাঁদপুরের ওইসব গ্রামের সাদ্রা দরবার শরীফের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিবছরই ঈদ পালন করে আসছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রাসহ ৪০টি গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিনেও আগাম ঈদ উদযাপন নিয়ে সৃষ্ট এ জটিলতার অবসান হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভরামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আগামীকাল শনিবার ঈদ পালন করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর: জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ৭টি গ্রামে শতাধিক পরিবার শনিবার ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় নোয়াগাও ঈদগাঁ মাঠে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
এই ইউনিয়নে নোয়াগাঁও, জয়পুর, শহীনাল, বিশুয়া গ্রাম ঈদ উদযাপন হচ্ছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে কাঞ্চনগ্রাম, পশ্চিববিঘা, রামঘঞ্জ শহরের কাঠবাজার এলাকায় ঈদ হচ্ছে।
নোয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর হোসেন মাহাবুব জানান, প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এই এলাকার ৪ গ্রামের মানুষ ঈদ করে আসছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল করিম মাস্টার জানান, এই ইউনিয়নের ৩ গ্রামের ৫০ পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করে আসছে।

চট্টগ্রাম: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৩০টি গ্রামে শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হচ্ছে। সাতকানিয়া মির্জারখীল দরবারের মুরিদরা একইদিনে কোরবানিও দেন।
শনিবার সকাল ১০টায় দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আরেফুল হাইয়ের বড় ছেলে মুফতি মাওলানা মকছুদুর রহমান ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
দরবার শরীফ সূত্রমতে, সাতকানিয়ার মির্জারখীল, গাটিয়া ডেঙ্গা, মাদার্শা, চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, কানাইমাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, জামিরজুরি, বাঁশখালীর কালিপুর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, ছনুয়া, আনোয়ারার বরুমছড়া, তৈলারদ্বীপ, লোহাগাড়ার পুটিবিলা, কলাউজান, বড়হাতিয়া এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ ও ফটিকছড়িতে দরবারের মুরিদ রয়েছেন।
এছাড়া বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও হ্নীলার বেশকিছু গ্রামে এবং দেশের বিভিন্নস্থানে মির্জারখীল দরবারের অনেক মুরিদ নিজ নিজ গ্রামে একই সময়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

পটুয়াখালী: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচের সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর প্রায় ২২টি গ্রামে শনিবার ঈদ-উল-আজহা পালিত হচ্ছে।
সকাল ৯টায় জেলার বদরপুর দরবার শরীফে ঈদের সব থেকে বড়ো জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া জেলার গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে মুসুল্লিরা পশু কোরবানি করেন।

মৌলভীবাজার: প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় আলহাজ আব্দুল মাফিক চৌধুরী পীর সাহেবের অনুসারীরা ঈদ-উল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।
শনিবার সকাল সোয়া ৬টায় ঈদ-উল আজহার নামাজের জামায়াতের ইমামতি করেন হাফিজ মাজিদুর রহমান সজিব।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২০০৮ সাল থেকে এই এলাকায় মুসল্লিরা সার্কিট হাউস এলাকার আহমদ সাবিস্তা নামক বাসার চাঁদে ঈদের জামাত আদায় করে আসছেন।
জামাত শেষে একের অপরের সঙ্গে কোলাকুলির মাধ্যমে সৌহাদ্যের বন্দনে আবদ্ধ হন। পরে সকলের মধ্যে ঈদের সেমাই বিতরণ করা হয়।
আলহাজ আব্দুল মাফিক চৌধুরী পীর সাহেব সৌদি আরবে হজ পালনে রয়েছেন। তার অনুসারীরা পুরাতন হাসপাতাল সড়কের গোলাম রেজা রিপন, কদুপুর গ্রামের আবুল কালাম পাকু, কনকপুর গ্রামের সুমন আহমদ, কমলাকলস গ্রামের রকিব বকস্, রাতগাঁও গ্রামের মোজাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা
কলেজের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মালিক জানান, মৌলভীবাজার শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের অর্ধ শতাধিক পরিবার শনিবার পবিত্র ঈদ-উল আজহা পালন করছেন। ইসলামের রীতি অনুযায়ী সঠিক নিয়মেই ঈদুল আজহা পালন করছি।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।
শনিবার সকাল ৮টায় পৃথক পৃথক তিনটি জামায়াতে ঈদের নামজ আদায় করা হয়। গ্রামগুলো হচ্ছে ওই উপজেলার তুষভাণ্ডর ইউনিয়নের হাড়িশ্বরের মুন্সিপাড়া, বগুড়া পাড়া ও চলবলা ইউনিয়নের পানিখাওয়ার ঘাট। এসব গ্রামে পৃথক তিনটি জামাতে নারী ও পুরুষসহ শতাধিক পরিবার ঈদ উল আজহার নামাজ ও ঈদ উৎসব পালন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, আহমাদিয়া জামাত (কাদেরিয়া ত্বরিকার) অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর ঈদের নামাজসহ সব ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে। ওই তিনটি গ্রামে নামাজ শেষে গরু, ছাগল কোরবানি করা হয়।
মুন্সিপাড়া ঈদগাহ মাঠের খতিব মওলানা ইমান আলী জানান, আহমাদিয়া জামাত প্রতিবছর সৌদি আরবের সংগে মিল রেখে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযাহা, শবে-কদর, শবে-বরাত, শবে-মেরাজসহ সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন এ এলাকার মানুষ।

এ ছাড়াও নোয়াখালী, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ ও শেরপুরে কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা শনিবার ঈদ পালন করছেন।



মন্তব্য চালু নেই