দুটি টিভি চ্যানেল, একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও মারুফ কামাল

দুটি টিভি চ্যানেল ও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ টেলিফোনে কথা বলেছেন। ওই তিনটি মিডিয়াই দাবি করেছে, তাদের অমিত শাহ বলেছেন তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেননি।

এই তিনটি মিডিয়া হলো চ্যানেল ২৪, একাত্তর টিভি ও বিডিনিউজ২৪ ডটকম। তিনটির মধ্যে দুটি মিডিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের কড়া সমর্থক। অন্যটিও আওয়ামী লীগপন্থী বলেই পরিচিত।

নিউজটি প্রথম ব্রেক করে চ্যানেল ২৪।এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক করে একাত্তর টিভি। দুটো চ্যানেলই স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে সংবাদটি প্রচার করে।সন্ধ্যা ৭টার খবরে দুটো চ্যানেলে এটি ছিল লিড নিউজ। বিডিনিউজ২৪ ডটকম আরো পরে নিউজটি দেয়।

চ্যানেল ২৪-এ সম্প্রচারিত নিউজটি ছিল এরকম
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে টেলিফোনে কোন কথা হয়নি, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-এর। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন, অমিত শাহ নিজেই। তিনি বলেছেন, ইট ইজ আ রিউমার।

হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ। আর তা শুরু বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কথিত টেলিফোন আলাপের জের ধরে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ কথা বলেছেন বেগম জিয়ার সাথে। খোজ নিয়েছেন তার শারীরিক অবস্থার।

শুক্রবার এ নিয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ দাবি করে অমিত শাহ সাথে বেগম খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপের বিষয়টি সঠিক নয়।

তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে আবারো দাবি করা হয় কথা হয়েছে অমিত শাহ সাথে।

আর এ নিয়ে যখন চারিদিকে ধুম্রজাল তখন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় অমিত শাহর সাথে। ফোনালাপের বিষয় জানতে চাইলে এক কথায় না বলেন তিনি।

চ্যানেল 24: হ্যালো।
অমিত শাহ: হ্যালো।
চ্যানেল 24: স্যার, মাই নেম ইজ মোর্শেদ হাসিব, আই এম কলিং ফ্রম ঢাকা বাংলাদেশ, ওয়ার্কি ফর এ চ্যানেল 24।
অমিত শাহ: হ্যা, বলিয়ে।
চ্যানেল 24: স্যার হ্যামনে সুনা, দ্যাট ইউ কলড বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া টু এনকয়ারি এবাউট হার হেল্থ অ্যান্ড হার সিচুয়েশন।
অমিত শাহ: নো নো নো নো। নো এনি কল ফর আওয়ার সাইড, নো কল। টোটালি রিউমার, টোটালি রিউমার। হু পাবলিসিং ?
চ্যানেল 24: বিএনপি বিএনপি পাবলিসিং।
অমিত শাহ: নো নো, টোটালি রিউমার।

এরপর বিজেপি প্রধানের ব্যাক্তিগত সচিবও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে জানান, টেলিফোন আলাপের বিষয়টি সত্য নয়।

একাত্তর টিভি
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়নি ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র। টেলিফোনে অমিত শাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একাত্তর টেলিভিশনকে এ কথা জানিয়েছেন বলে দাবি করেছে চ্যানেলটি।

সন্ধ্যা সাতটায় একাত্তর টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রুপা অমিত শাহ’র ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।

একাত্তর জানায়, অমিত শাহ’র ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরটি রুপা সংগ্রহ করেন বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদীর কাছ থেকে। প্রায় ২০ ঘণ্টার চেষ্টার পর একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিনিধি অমিত শাহকে টেলিফোনে পান বলে দাবি করে একাত্তর টিভি।

একাত্তর টেলিভিশন তাদের প্রতিবেদনে অমিত শাহ’র সঙ্গে আলাপের রেকর্ড শোনায়। সেখানে মাত্র দু’টি বাক্য শোনা গেছে। এর মধ্যে একটি হলো- “দিস ইজ অ্যা ফেইক নিউজ।”

বিডিনিউজ২৪-এর নিউজটি এরকম
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার খবরটি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিলেন ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ।

বিএনপির দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর সে বিষয়ে জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক সুবীর ভৌমিক টেলিফোন করলে তিনি বলেন, “আরে ভাই, ম্যায়নে তো উনহে কল নেহি কিয়া, ইয়ে সব বাকোয়াজ খবর কিউ ছাপতে হ্যায়। (আমি তো উনাকে ফোন করিনি, এসব ভুয়া খবর কেন আসে)।”

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন যে বুধবার রাতে খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে তার খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন অমিত শাহ।

এর সত্যতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তোলার পর শনিবার বাংলাদেশের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল অমিত শাহকে টেলিফোন করলে তিনি টেলিফোন করার বিষয়টি উড়িয়ে দেন।

“দিজ ইস টোটালি রিউমার,” চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে বলেন অমিত শাহ। একাত্তর টেলিভিশনকে তিনি বলেন, “দিস ইজ এ ফেক নিউজ।”

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তাদের দাবিতে অনড় থেকে বলে আসছে, অমিত শাহ ফোন করেছিলেন এবং তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

অমিত শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যায়নে দুসরে বাংলাদেশ মিডিয়াকো ভি ইয়ে বোলা হ্যায়, বাত করেঙ্গা তো কিউ ডিনাই করেঙ্গে, পার আগার নেহি কিয়া তো খবর নেহি আনা চাহিয়ে। (আমি বাংলাদেশের অন্য সংবাদ মাধ্যমকেও এটাই বলেছি, কথা বললে অস্বীকার করব কেন, কিন্তু যখন কথাই বলিনি, তখন তো খবর হওয়া ঠিক নয়।)”

অমিত শাহর কথিত টেলিফোন নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা খবরটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র যশদীপ ভৌমিক বলেন, “অমিত শাহজি কেন ফোন করতে যাবেন? বাংলাদেশের যা ঘটছে তা তো একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”

এদিকে অমিত শাহের টেলিফোন নিয়ে আলোচনার মধ্যে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছিল যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রে, যা ভুয়া বলে ধরা পড়ে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রটি তাদের প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের এক সহকারী তাদের এই বিবৃতিটি পাঠিয়েছিলেন।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা বিবৃতি পাঠিয়ে খালেদাকে নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়ার খবর অস্বীকার করেন।

মারুফ কামালের ব্যাখ্যা
এসব সংবাদ প্রচারের পর বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে আবারও দাবি করা হয়েছে যে, অমিত শাহের সাথে খালেদা জিয়ার টেলিফোনে কথা হয়েছে। চেয়ারপার্সনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে এই দাবি করেন।

তিনি বলেন, “গত ৭ জানুয়ারি রাতে আমার উপস্থিতিতেই খালেদা জিয়ার সাথে অমিত শাহের সৌজন্যমূলক আলাপ হয়েছে। এই তথ্য শতভাগ সঠিক।”

তবে টেলিভিশনে বিজেপি প্রধানের যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, তা আসলেই অমিত শাহের কণ্ঠ কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না বলেও উল্লেখ করেন মারুফ কামাল।

তিনি বলেন, “বর্তমানে নির্বাচনী প্রচার অভিযান আর দলের সদস্য সংগ্রহের কাজে গুরুতরভাবে ব্যস্ত অমিত শাহের পক্ষে ঢাকার কোনো সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ার সুযোগ ছিল না।”

মারুফ কামাল দাবি করেন, “দেশের বিরাজমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে সকলের নজর অন্যদিকে ফেরাবার উদ্দেশ্যে একটি সহজ বিষয়কে জটিল করে তোলা হচ্ছে। ”

কিভাবে হবে বিতর্কের সমাধান
বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। তিনটি মিডিয়ার খরব যে বিএনপি বিশ্বাস করছে না- তা মারুফ কামাল খানের বিবৃতি্তেই স্পষ্ট। এখন ভারতের বিজেপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা বা বিবৃতি দিলেই কেবল এই বিতর্কের অবসান ঘটবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



মন্তব্য চালু নেই