দুই নেত্রীকে হত্যা পরিকল্পনার তথ্যে গরমিল

বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদাকে হত্যার পরিকল্পনা বিষয়ে গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গিরা এনআইয়ের কাছে যে তথ্য দিয়েছে এবং আমরা ওপেন সোর্স থেকে এতদিন যে তথ্য পেয়েছি তার সঙ্গে গরমিল আছে। এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত দুইদিনের আলোচনায় তথ্যে অনেক গড়মিল পাওয়া গেছে। যারা বিস্ফোরক বানাচ্ছিল, তারা কি কাজে এবং কোথায় ব্যবহার করবে, এবিষয়ে এনআইএ তাদের প্রাথমিক তদন্তে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।

মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তরে ভারতের এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-এর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছেন। গতকাল ওয়ার্কিং লেভেলে কথা বলার সময় তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। আজও জেএমবি এবং বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হয়েছে। এছাড়াও তারা যাদেরকে গ্রেফতার করেছে, তারা বাংলাদেশি নাগরিক- নাকি ভারতীয় সে ব্যাপারেও কথা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু কিছু জঙ্গি গ্রেফতার এড়াতে ভারতে পালিয়ে গেছে। এসব বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে কমন কিছু কথা হয়েছে। আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

ভারতীয় গোয়েন্দারা তাদের প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, জঙ্গিদের মধ্যে কিছু ভারতীয় এবং কিছু বাংলাদেশি নাগরিকও থাকতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনার সংঙ্গে জড়িত সন্দেহে তারা কিছু নামের তালিকা দিয়েছে। আমরাও কিছু নামের তালিকা তাদের কাছে হস্তান্তর করেছি। এ বিষয় নিয়ে আমরা উভয়পক্ষই কাজ করবো।’

জেএমবি বা জঙ্গিবাদ ইস্যু ও সন্ত্রাসী নিয়ে দুই দেশেরই আগে থেকে যেহেতু ঐক্যমত্য রয়েছে, সেহেতু পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে জেএমবি সদস্য ও জঙ্গিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কিভাবে সহযোগিতা তড়িৎ করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আমাদের কাছে তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

এনআইএ প্রতিনিধি দল বুধবার ভারতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে। তারা আমাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করবেন। আমরাও তাদের তথ্যগুলো যাচাই করবো। তারপর একটি পুর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে যাওয়া যাবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু জঙ্গি সন্ত্রাসীর নাম আমাদের কাছে কমন পড়েছে। বোমারু মিজান, সালেহীন ও জামাই ফারুক ত্রিশালে বোমা মেরে জঙ্গি ছিনতাই করেছে। তারা গ্রেফতার এড়াতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এই নামগুলোই সম্ভবত অন্য নামে তাদের কাছে এসেছে।

তারা কিছু সন্ত্রাসীর চেহারার বর্ণনা দিয়েছেন, আমরাও কিছু চেহারার বর্ণনা দিয়েছি। এগুলো মেলানো হবে। এরপরই দুই দেশের প্রতিনিধিদল এটি ধরে কাজ করবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় প্রতিনিধিদল আমাদেরকে ভারতে যাওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। সেসব ঠিক করতে পারলে আমরাও পরবর্তীতে যেতে আগ্রহী।

বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাতে ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে। তাদের তদন্ত যেহেতু একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। হয়তো পরে আরো নতুন কোনো তথ্য বের হয়ে আসতে পারে।

যে তালিকা প্রতিনিধিদল দিয়েছে, তার যৌক্তিকতা কতটুকু–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা যে একেবারেই নিশ্চিত হয়ে বলেছে তা নয়। এরা সম্ভাব্য বাংলাদেশি হতে পারে। একটা এলাকায় যখন কেউ থাকে, তখন সেখানকার পারা প্রতিবেশিরা অনেকেই তার সম্পর্কে অবহিত থাকেন। এরকম প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতেই জঙ্গিদের চেহারার ও জাতীয়তার বর্ণনা দিয়েছেন। সেটি আমরা খতিয়ে দেখবো।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইএ সাজিদকে গ্রেফতার করেছে, তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের মাসুমের মিল রয়েছে। মাসুমের স্বজনদের ও অ্যাসোসিয়েটদের কেউ কেউ ছবি দেখে সনাক্ত করেছে। সেই হিসেবে আমরা অনুমান করছি, মাসুম ভারতে গ্রেফতারকৃত সাজিদ। এর আগে মাসুম পুলিশের হাতে দুইবার গ্রেফতার হয়েছিলো। কোটালিপাড়ায় ব্র্যাক অফিসে ডাকাতির ঘটনায় ২০০৫ সালে ও পরবর্তীতে ২০১২ সালে জঙ্গি তৎপড়তার জন্য ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছিলো।

জঙ্গি কর্মকান্ডে জামায়াতের অর্থায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইএ এ বিষয়ে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তারা বারবার বলেছে, জামায়াতের অর্থায়নের ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে তারা পৌঁছাতে পারেননি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জামাই ফারুক ওরফে শওকত, বোমারু মিজান এবং সালেহীনকে গ্রেফতারের বিষয়ে তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরাও তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের কোনো না কোন ভাবে বর্ধমানের ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে। এটি তারা বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে সন্দেহ করেছে।

তিনি বলেন, ত্রিশালের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তারা ভারতে অন্য নাম ব্যবহার করে বসবাস করতে পারে। সেকারণে আমরা তাদের ছবি দিয়েছি। ভারতীয় গোয়েন্দারা তাদের সেখানে পেলে গ্রেফতার করবেন।



মন্তব্য চালু নেই