দুই কারণে ঢাকা বারে বিএনপির ভরাডুবি

ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার কাউন্সিল) নির্বাচনে গত টানা দুই কার‌্যবর্ষে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের এবার ভরাডুবি ঘটেছে। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

ঢাকার নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের এই সংগঠনের ২০১৬-১৭ কার্যবর্ষের নির্বাচনে ২৭টি পদের মধ্যে মাত্র ছয়টি পদে জয়ী হয় বিএনপি-সমর্থিত নীল দল। এর আগে গত ২০১৪-১৫ কার্যবর্ষের নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টি এবং ২০১৫-১৬ কার্যবর্ষের নিবাচনে ২০টি পদে বিজয়ী হয়েছিল তারা।

দুই বছরের বাবধানে এই রকম ভরাডুবির কারণ কী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় কোন্দল, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং পাঁচ শতাধিক আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিলই অন্যতম কারণ।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার নিম্ন আদালতে বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। কয়েক বছর আগে এই বিভক্তি প্রকাশ্যে ছিল। তবে বর্তমানে তা প্রকাশ্যে না থাকলেও নিজেদের ফোরামের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি কোন্দলরত নেতারা। দলীয় প্রার্থীদের প্রচরণায় যৌথভাবে অংশ না নেয়ায় সাধারণ আইনজীবীদের ভোট পক্ষে টানা যায়নি।

অন্যদিকে বিএনপিদলীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান হাসান গত দুটি নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাকে ২০১৬-২০১৭ কার্যবর্ষের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দল থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী অ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান এবার প্রচারণা শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হন তিনি; মনোনয়ন দেয়া হয় আইনজীবী আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চুকে। ফলে হোসেন আলী খান হাসান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থেকে যান। তিনি সেভাবে প্রচারণা না চালিয়েও ৫৬৯ ভোট পান। তাকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা সভাপতি পদে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেননি।

সংশ্লিষ্ট অনেক আইনজীবী মনে করেন, বিএনপি ফোরামে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেক সাধারণ আইনজীবী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। অ্যাডভোকেট হোসেন আলী খান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে না থাকলে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী বাচ্চু বিজয়ী হতেন এবং সভাপতি প্রার্থীকেও বিজীয় করতে পারতেন।

এদিকে নির্বাচনের আগে বিএনপি-সমর্থিত চলমান কমিটি সমিতির বকেয়া চাঁদার জন্য ৫ শতাধিক আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল করে। এই আইনজীবীদের মধ্যে যাদের বয়স ৪০ বছর, তারা নতুন করে সদস্য হলেও আর বেনিভোলেন ফান্ডের টাকা পাবেন না। সদস্যপদ বাতিল হওয়া আইনজীবী ও তাদের সিনিয়র আইনজীবীরা বিপক্ষে প্রচারণা চালানোয় বিএনপির প্রার্থীদের পরাজয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

তবে ঢাকার নিম্ন আদালতের বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “আমাদের দলে কোনো বিভক্তি নেই। আসলে আওয়ামী লীগের এবারের অধিকাংশ প্রার্থী গত ৩টি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। সাধারণ আইনজীবীদের কাছ থেকে তারা সিমপেথি ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় এক হাজার আইনজীবী ভোট দিতে আসেননি, যা আমাদের পরাজয়ের কারণ।”

গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ২৭টি পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সদা প্যানেল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিজয়ী হয়। বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেল পায় ছয়টি পদ।

সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের সাইদুর রহমান মানিক নীল প্যানেলের মো. খোরশেদ আলমকে ১ হাজার ১৪৪ ভোটে পারাজিত করেন। তারা যথাক্রমে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৩২ এবং ৩ হাজার ৩৮৮।

সাধারণ সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের আইয়ুবুর রহমানের কাছে ৪৭৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন নীল প্যানেলের আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু। তাদের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে ৩ হাজার ৯২১ এবং ৩ হাজার ৪৪৬।

সাদা প্যানেলের সম্পাদকীয় অন্যান্য পদে বিজয়ীরা হলেন, সহসভাপতি পদে আবু বকর ফরহাদ, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুস সালাম খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মো. শাহাদাত হোসেন ভুইয়া, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে আলী আহমেদ (আলী), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লাকী আক্তার ফ্লোরা, দফতর সম্পাদক পদে আব্দুল হাই (মামুন) ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে মো. বাহালুল আলম (বাহার)।

অন্যদিকে সম্পাদকীয় পদের নীল প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আফরোজা বেগম (শেলী), ট্রেজারার পদে আবু বক্কর সিদ্দিকী ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মো. শফিকুল ইসলাম।

সদস্য পদে সাদা প্যানেলের নির্বাচিতরা হলেন আমিনুল আহসান (মাসুম), ইমারত হোসেন (বাচ্চু), হাজেরা বেগম (আজরা), মোহাম্মাদ আবু সাঈদ সিদ্দিক (টিপু), নাসিম জাহান (রুবি), নুরজাহান আক্তার (পারভীন), মরিয়ম বেগম (তুলি), সাহিদা পারভীন (নদী) মো. বিল্লাল হোসেন লিজন, নুরুল ইসলাম তালুকদার, তাইবুর রহমান তুহিন ও মোহাম্মাদ নুর হোসেইন।

নীল প্যানেলে বিজয়ী সদস্যরা হলেন, আজমেরী আহমেদ চৈতি, মো. আব্দুল মোমেন খান (মামুন) ও মোহাম্মাদ রোকনুজ্জামান (সুজা)। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই