দুঃসময়ে ভারত আমাদের পাশে থেকেছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুঃসময়ে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে।’

ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় ভারতের জনগণ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় কার্য দিবসের শুরুতেই জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।

স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদন নিয়ে নিজের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আমার কথা হয়েছিল। সেখানে তিনি আমাকে বলেছিলেন, এ বিলটি অনুমোদন করিয়ে দেবেন। তিনি কথা রেখেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে, বন্ধুত্বের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব- এটা আমরা প্রমাণও করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী ২০ মিনিটের বক্তব্য শেষে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে স্থল সীমান্ত অনুমোদন হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ছাড়াও বিরোধী দলীয় নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেসসহ দেশটির সব রাজনৈতিক দল, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ধন্যবাদ জানান।

এদিকে দুই দেশের ছিটমহল বিনিময় এবং অপদখলীয় ভূমির বিরোধ অবসানে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হলেও সংবিধান সংশোধন না করে ভারত প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছিল না। দীর্ঘ দিনের তৎপরতার ফলে গত মে মাসের শুরুতে ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে ভূমি বিনিময়ে সংবিধান সংশোধনের ওই প্রস্তাব (সীমান্ত বিল) পাস হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছিটমহলবাসী দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলে। স্বাধীনতার স্বাদ তারা পায়নি। অনিশ্চিত জীবনযাপন করছিল। এখন তারা নাগরিকত্ত্ব পাবে। ভোট দেয়ার অধিকার পাবে। বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতা দিয়েছেন তেমনি বাঙালির প্রতিটি সফলতার ক্ষেত্রে তৈরি করে গিয়েছিলেন। স্থল সীমানা চুক্তি সুমদ্রসীমা আইন সবই তিনি করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু আইন করে গিয়েছিলেন বলেই, আমাদের ভিতটা এতো শক্ত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই তা বাস্তবায়ন হয়ে যেতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা এই ব্যাপারে কোনো উদ্যেগ নেয়নি। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা সরকার গঠন করে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার সুযোগ পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ভারত সফরের যাই, তখন চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলি। এরপর ২০১১ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরে আসেন। সেই সফরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন বিলটি লোকসভায় তুলবেন। সেই অনুযায়ী বিলটি লোকসভায় উত্থাপন করা হয়, এরপর রাজ্যসভায় পাঠানো হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু দারিদ্র। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধানে একে অন্যের দিকে এগিয়ে আসতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে আরো বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলে শ্রমবাজারে আনতে পারলে দারিদ্রতা অনেকাংশে কমে আসবে।’



মন্তব্য চালু নেই