দীর্ঘদিন ধরে এক তহবিলেই অলস পড়ে আছে শত কোটি টাকা

টাকা আছে শত কোটি। দীর্ঘদিন ধরে অলস পড়ে আছে। ওই অলস টাকার সঙ্গে আরও জমা হচ্ছে। এই টাকা জমা হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে’। জমতে জমতে তা শতকোটি ছাড়িয়েছে। টাকার পাহাড় জমেছে। কিন্তু খরচ করার পথ জানা নেই। কিভাবে এই টাকা খরচ করা হবে, তা-ও আগে থেকে ঠিক করা হয়নি, পরেও ঠিক করা হয়নি। যদিও গত ৪ বছর ধরে ‘টাকা খরচ করার পথ’ বের করা হচ্ছে বলে জানানো হলেও অগ্রগতি ওই পর্যন্তই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, দেশের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ খাতের বিশেষ করে ব্রডব্যান্ডের অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়নের মাধ্যমে সেবা সম্প্রসারণ করতে ২০১০ সালের পয়লা আগস্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের (সংশোধিত ২০১০) মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) নামের একটি ‘তহবিল’ সৃষ্টি করা হয়।

লাইসেন্সকৃত মোবাইলফোন অপারেটর ছাড়াও সরকার, দেশি বা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ভিন্ন বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অনুদান এ তহবিলে জমা করার বিধানও রাখা হয়। ২০১১ সালে মোবাইল অপারেটরগুলো টুজি লাইসেন্স নবায়নের সময় তাদের বার্ষিক মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে বিটিআরসি।

জানা গেছে, ২০১২ সালের জুন মাসে একটি বিধিমালা তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (আগে ছিল মন্ত্রণালয়) পাঠায় বিটিআরসি। বিধিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০১৩ সালের ১৯ আগস্ট ‘ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ চেয়ে মন্ত্রণালয় বিটিআরসিতে চিঠি ফেরত পাঠালে ৩১ অক্টোবর কমিশন এর জবাব দেয়। যদিও এখনও পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটর্স বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবীর জানান,ওই তহবিলে ৬০০-৭০০ কোটি টাকার মতো জমা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই তহবিলের টাকা কিভাবে খরচ হবে তা এ বিষয়ে গঠিত কমিটি ঠিক করবে।

তবে বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা পড়েছে ৭২৫ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন এ মন্ত্রণালয়ে কোনও মন্ত্রী না থাকায় ওই কমিটি চূড়ান্তভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যদিও এ কমিটি এরই মধ্যে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। কিছুদিন হলো এ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী এসেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবার কমিটি তহবিলের টাকা খরচের বিষয়ে চূড়ান্ত উদ্যোগ নিতে পারবেন।

মোবাইলফোনের লাইসেন্সিং গাইডলাইনে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই তহবিলের টাকা ব্যবহার করতে পারবে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের টাকা শুধু ব্যবহার করা যাবে টেলিযোগাযোগের উন্নয়নে এবং তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সম্পর্কিত সেবা/অবকাঠামোর উন্নয়ন-সহ পরামর্শমূলক কাজে।

কিন্তু গত ২৯ আগস্ট একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, সরকার বিটিআরসির ফান্ড (সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল) গবেষণা এবং স্বতন্ত্র ইন্সটিটিউটে (প্রযুক্তি আপগ্রেড করতে) ব্যবহার করবে। যদিও ওই গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা বলেন, ওই তহবিল গবেষণা এবং সাইবার সেফটির জন্য ব্যবহার হওয়া উচিত।

এদিকে, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান মনে করেন, এই তহবিলের টাকা দিয়ে দেশের অনুন্নত এলাকায় উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের টাকা দিয়ে এসব কাজই করা হয়েছে।দেশের যেসব এলাকায় ইন্টারনেট সোবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যেতে চায় না, সেসব এলাকায় এই ফান্ডের মাধ্যমে অবকাঠামো তৈরি করে ‘কানেক্টিভিটি’ বাড়ানো হলে দেশ এর সুফল পাবে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুস্তাফা হুসাইন বলেন, এই ফান্ড থেকে গ্রামীণ এলাকায় টেলিযোগাযোগ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট ‘কাভারেজ’ তৈরি করা যেতে পারে। মালয়েশিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ওইসব দেশে এই ফান্ড দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, ইন্টারনেট একসেসে ব্যবহার হয়েছে। কোথাও-কোথাও ব্রডব্যান্ড সংযোগও পৌঁছানো হয়েছে।

এছাড়া গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষামূলক, ধর্মীয়,চিকিৎসা সেবা ও সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এবং জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিতদেরও ‘বেসিক’ টেলিযোগাযোগ সেবার আওতায় আনতে এই তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছে।

মুস্তাফা হুসাইন আরও বলেন, আমাদের দেশেও এসব কাজ করা যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, গাইডলাইনেই বলা হয়েছে বিটিআরসি এসব কাজে তহবিল ব্যয় করতে পারবে। বাংলা ট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই