আন্তর্জাতিক যোগ দিবস আজ

দিল্লির রাজপথে মোদীর নেতৃত্বে যোগযজ্ঞ

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ আর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস, দিল্লির রাজপথে ৩৭ হাজার মানুষের জমায়েতে বজ্রাসন আর পদ্মাসনে বসে যার নেতৃত্ব দেন নরেন্দ্র মোদী নিজে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোববার ভোরে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র ইন্ডিয়া গেইটের কাছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণে এই যোগচর্চাই ছিল এ দিবসের মূল আয়োজন।

সাদা পাজামা আর ফুল হাতা গেঞ্জির সঙ্গে তেরঙা স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে রাজপথে বিছানো লাল মাদুরে যোগাসনে বসেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

মাইকে যোগ গুরু রামদেবের নির্দেশনা অনুসরণ করে মোদীর পেছনে বিভিন্ন আসন চর্চা করেন অংশগ্রহণকারীরা। রাজপথের সবুজ চত্বরে এসময় ভাসছিল তানপুরার লহরি।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ভারতীয় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ও পুলিশ মিলিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ ৩৫ মিনিটের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বলে এনডিটিভির খবর।

৩০ কোটি রুপি খরচ করে দিল্লির এই যোগ জমায়েতের আরেকটি লক্ষ্য ছিল একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষের যোগসাধনের গিনেজ রেকর্ড গড়া।

এর আগের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০০৫ সালে গোয়ালিয়রে। বিবেকানন্দ আশ্রমের সেই আয়োজনে ২৯ হাজার ৯৭৩ জন অংশ নিয়েছিলেন।

আইএএনএস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লির নয়নাভিরাম এই জনপথেই প্রতিবছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজ হয়।

সেখানে মধ্য জুনের গনগনে সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে কিশোর-যুবা শিক্ষার্থী আর নানা বয়সী নাগরিকদের উদ্দেশে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শুরু হয় একটি প্রশ্নের মধ্য দিয়ে।

“এই রাজপথ একদিন যোগপথ হয়ে উঠতে পারে- কেউ কখনো ভেবেছিল?”

৬৪ বছর বয়সী মোদী বলেন, যোগ কেবল দেহকে নমনীয় করার ব্যায়াম নয়, আত্মিক উন্নয়নেরও তরিকা। যোগ কেবল শরীরচর্চা নয়, তাহলে সার্কাসের দরাবাজও যোগী হয়ে যেত।

যে গুরুরা ভারতীয় এই প্রাচীন শাস্ত্রকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করেছেন, তাদের প্রতি ভক্তি জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী।

তিনি বলেন, “মানব মনকে শান্তি আর সম্প্রীতির শিক্ষা দেওয়ার নতুন এক যুগের সূচনা হল আজ।”

টুইটার আর ফেইসবুকে মোদীর পৃষ্ঠায় প্রায়ই যোগের উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেখা যায়। তিনি নিজেও প্রতিদিন যোগসাধন করেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর। মূলত তার কূটনীতিতেই জাতিসংঘ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ঘোষণা করে।

কেবল ভারত নয়, জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩টি দেশের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন ছাড়া সব রাষ্ট্রেই যোগ দিবসের কিছু না কিছু অনুষ্ঠান থাকবে বলে বিবিসির খবর।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণে রোববার যোগচর্চা হবে সিয়াচেন হিমবাহ আর গভীর সাগরের বুকেও।

নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ৩০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিজেও আসনে বসবেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনেরও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা।

হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার বিভিন্ন নমুনা থেকে ধারণা করা হয়, আর্যরা বেদ নিয়ে ভারতবর্ষে আসার অনেক আগে থেকেই এ ভূখণ্ডের পূর্ব অংশে, বিশেষ করে বঙ্গে যোগের চর্চা ছিল।পরে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সঙ্গে যোগ হয় যোগ সাধনা।

শাস্ত্রের ভাষায়, জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনই হল যোগ, যার জন্য দরকার দেহ ও মনের প্রগাঢ় সংযোগ।

অবশ্য মোদীর এই যোগপ্রচারের বিরোধিতা রয়েছে খোদ ভারতেই। দেশটির মুসলমানদের একটি অংশের অভিযোগ, যোগ হিন্দু উপাসনার একটি অংশ এবং মোদী তা সবার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রগতিশীলদের মধ্যেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগউদ্যোগ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাদের মতে, মোদী ভারতের এই প্রাচীন শাস্ত্রকে হিন্দু জাতিয়তাবাদী রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছেন।

এসব সমালোচনার জবাবে ভারত সরকার বলেছে, রোববারের যোগ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আর মুসলমানরা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন বলে যেসব খবর আসছে, তা ‘অতিরঞ্জিত’।

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=NEydwXDKkSc



মন্তব্য চালু নেই