দিনে চা বিক্রেতা রাতে লেখক

ভারত এখন চা বিক্রেতার দেশ হয়ে গেছে। গেল বছর ভারতের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করলো সাবেক চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি। আর চলতি বছরই ভারতে লক্ষন রাও নামে অপর এক চা বিক্রেতার নাম জানা গেল। অবশ্য, লক্ষণ রাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো একমুখী দক্ষতাকেই পুঁজি করেননি। সামাজিক নিয়মানুসারে অর্থ উপার্জনের জন্য দিনের বেলা লক্ষণ রাও হয়ে যান চা বিক্রেতা, আর দিনের আলো মুছে গিয়ে সন্ধ্যে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন একজন লেখক।

সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি লক্ষণ রাওকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরই মূলত চারিদিকে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে তিনি মহারাষ্ট্রের অমরাবতী গ্রাম থেকে বাবার দেয়া চল্লিশ রুপি সম্বল করে রাজধানী দিল্লিতে পা রাখেন। মাত্র দশম শ্রেণী পাস করা লক্ষণকে দিল্লিতে এসে শুরু করতে হয় পুরোদস্তুর কঠিন সময়। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক কাজ করতে থাকেন তিনি, কিন্তু একটা সময় সবকিছু ছেড়ে চা বিক্রিতেই মন দেন তিনি। এই চা বিক্রি আর রাত করে লিখে তিনি এপর‌্যন্ত ২৪টি বই লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, রাজনৈতিক বই, সমাজ সংস্কারমূলক বইসহ বিশ্লেষণাত্মক বই।

দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রাও জানান, ‘গত বিশ বছর ধরে আমি বই থেকে কোনো অর্থ উপার্জন করিনি।’ যেকোনো সমাজেই প্রকাশকরা একজন চা বিক্রেতার বই গরজ সহকারে প্রকাশ করবে এমনটা ভাবা খুব মুশকিল। লক্ষণ রাও তার লেখা বই নিয়ে প্রকাশকদের দ্বারস্থ হলেও কোনো লাভ হয়নি। শেষমেষ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই নিজের বই ছাপানোর। চিন্তাকে বাস্তবে রুপ দিতে ১৯৭৯ সালে রাও তার প্রথম বই ‘নাই দুনিয়া কি নাই কাহানি’ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক নিজের চেষ্টাতেই তিনি বই প্রকাশ করে গেছেন। এ পর‌্যন্ত রাওয়ের লিখিত বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইটির নাম ‘রামদাস’। ১৯৯২ সালে এক তরুনের জীবনের ঘটনাকে উপজীব্য করে তিনি এই বইটি লিখেছিলেন। বইটি তৃতীয় মুদ্রন পর‌্যন্ত করতে হয়েছিল এবং মোট চার হাজারেরও বেশি কপি বিক্রি হয়।

BOOKS

যদি ভেবে থাকেন লক্ষন রাও শুধু চা বিক্রি আর বই লিখেই গেছেন তাহলে ভুল ভাবছেন। এসবের মাঝে তিনি ধীরে ধীরে হিন্দি ভাষায় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং জানা যায় তিনি খুব তারাতারিই মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন। তার লিখিত বইয়ের কল্যাণেই রাষ্ট্রপতি ভবনে পর‌্যন্ত তাকে যেতে হয়েছিল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গেও সাক্ষাত হয়েছিল তার।

সময়ের হাত ধরে লক্ষণ রাও আজ আর অমরাবতী গ্রামের সেই গৃহ পালানো তরুন নেই। এখন তার নিজের নামে ফেসবুক পেইজ আছে যা মূলত চালায় তার সন্তান। লক্ষণ রাওয়ের বই এখন আমাজান বা ফ্লিপকার্টডটকমের মতো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে। আমাজান ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানান, ‘আমাদের ওয়েবসাইট থেকে তার বইগুলো ভালোই বিক্রি হচ্ছে। মি. রাওয়ের মতো লেখক আমাদের প্লাটফর্মে পেয়ে আমরা সত্যিই খুশি।’ একটা সময় ছিল যখন লক্ষণ রাওকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বই বিক্রি করতে হতো। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লক্ষণকে খুঁজে তার কাছ থেকেও বই কিনে নিয়ে যান।



মন্তব্য চালু নেই