দালালমুক্ত থানা গড়তে চাই

বাংলাদেশের প্রতিটি থানা দালালমুক্ত করতে চান বলে জানিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে যে দূরত্ব আছে তা দূর কারারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে জেলা কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি দালাল মুক্ত থানা গড়তে চাই। পুলিশ এবং জনগনের মধ্যস্থতাকারী কিছু মানুষ আছে যাদের দালাল বলা হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়। তখন তারা ওই দালালদের কাছে যায়। দালালরা সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা নেয়। দালালরা কিছু নেয় হয়তো পুলিশকে কিছু দেয়। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে চাই ‘

দালালদের ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের কোনো সদস্য যদি কোনো থানায় দালালদের দেখতে পান তখন আপনারা সরাসরি থানার ওসির কাছে অভিযোগ করবেন।’

সভায় ঢাকা রেঞ্জের ডেপুটি জেনারেল এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য হোসনে আরা বাবলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই।

আইজি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এমন কোনো সদস্য নেই যারা ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করে না। তবুও সাধারণ মানুষের মাঝে পুলিশকে নিয়ে বিরূপ মনোভাব রয়েছে। মানুষ পুলিশের কাছে আসেনা। কোন সহযোগিতা করতে চায় না। কোনো ঘটনার সাক্ষী দিতে চায় না। আবারও পুলিশও সাধারণ জনগনকের কিছুটা শাসন করার মনোভাব পোষণ করেন। এর মূল কারণ খুঁজতে গিয়ে পেয়েছি পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মাঝে দূরত্ব। আমি কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে এ দূরত্ব মেটাতে চাই।’

কমিউনিটি পুলিশিং মানে জনগনের কাছে জবাবদিহিতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগনকে পুলিশের কাজে সহযোগিতা করার সংস্কৃতি গড়তে হবে। পুলিশ জনগনের সেবক। পুলিশের জনগনকে শাসন করার কোন ক্ষমতা নেই। পুলিশ শুধু আইনের সঠিক প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে জনগনকে সেবা প্রদানের জন্য।’

আইজিপি বলেন, ‘বৃটিশ আমল থেকেই মানুষের সাথে জনগনের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তখন পুলিশকে জনগনকে শাসন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সেই থেকে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনে একটি আস্তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জনগনের মাঝে সেই আস্থাটা আমি ফিরিয়ে আনতে চাই।’

সাধারণ জনগন, ও জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য ছাড়া কোনো কাজ সফলভাবে করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পুলিশকে জনগনের কাছে যেতে হবে। জনগনের সমস্যার কথা জানতে হবে। প্রয়োজনে কমিউনিটি পুলিশের কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বাটপারি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, পাচারকারী কোন অভিযোগ নেই। তাদেরকে নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায় কমিউনিটি পুলিশের কমিটি গঠন করতে হবে।’

কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষদের সামাজিক অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার করতে হবে। ছোটখাট অপরাধমূলক ঘটনাগুলো কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। কারণ, সব বিষয়ে মামলা করলে আদালতে গেলে কোনো লাভ হবে না। আবার কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের নিস্পত্তির না বিচার করলে চলবে না। বিচারে সিদ্ধান্ত একজনের পক্ষে অপরজনের বিপক্ষে যেতে পারে। নিষ্পত্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে। উভয় পক্ষ সম্মতি থাকলে কাগজপত্র করে সেগুলো নিস্পত্তি করতে হবে। কাউকে হয়রাণী করা যাবে না। নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করা যেমন নাগরিকদের অধিকার। তেমনি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে পুলিশকে সহায়তা করা সাধারণ নাগরিকদের কর্তব্য।’

এরআগে আইজি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে ৬ তলা বিশিষ্ট পুলিশ ব্যারাকের উদ্বোধন করেন।



মন্তব্য চালু নেই