দল গোছাতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

জাতীয় শোকদিবসের কর্মসূচি শেষ করে সংগঠন গোছাতে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে যে সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সে সব জায়গায় সম্মেলন কার্যক্রম এ মাসেই শুরু হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ সব সম্মেলন শেষ করে নতুন কমিটি দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনের পাশাপাশি দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনও এ সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠন গোছানো ও সংগঠনকে শক্তিশালী করা হবে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতোমধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন। শোকের মাসের কর্মসূচি তিনি তত্ত্বাবধান করেছেন। ৪০ দিন ব্যাপী এ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে। প্রতিদিনই একাধিক কর্মসূচি থাকছে। প্রায় প্রতিদিনই সৈয়দ আশরাফ শোকের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

সেই সঙ্গে সংগঠনোর গোছানোর কাজও তিনি তত্ত্বাবধান করবেন। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক অধ্যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাণ্ডের শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে এ বছর ৪০ দিন ব্যাপী শোকের কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শোকের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।

এরপর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

গত বছর থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। তবে এই তৃণমূল সম্মেলন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অনেক আগে থেকেই এ পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান। এ সময়ে অধিকাংশ জায়গায় সম্মেলন শেষ হয়েছে। সারাদেশে সাত বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের তৃণমূল পর্যায়ের সব সম্মেলন ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। অন্য ছয়টি বিভাগে জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু সম্মেলন বাকি আছে।

ছয় বিভাগের মোট ১৮টি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও চাঁদপুর জেলাও রয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রায় সবগুলোর কমিটির মেয়াদই শেষ হয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং তাঁতী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

কোনো কোনো কমিটির মেয়াদ ১০/১২ বছর পার হয়ে গেছে। এছাড়া গত জুলাই মাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং কৃষক লীগেরও।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের আগে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠগুলোর সম্মেলন শেষ করা হবে।

আগামী ৬ নভেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, শোকের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। এখন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যে সব জেলা বা তৃণমূলের সম্মেলন বাকি আছে, এ মাস থেকেই সেগুলোর সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। এ সময়ে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনও হবে।

তিনি বলেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আছে। এ সভায় সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যে সব সম্মেলন বাকি রয়েছে, সেগুলো শেষ করে ফেলবো। এমাসেই আবার সম্মেলনের কাজ শুরু হচ্ছে। আমার জানা মতে, চলতি মাসে চার-পাঁচটি জায়গায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দ্রুতই সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনও হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের হলো, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলনের তারিখ হয়েছে। বাকিগুলোও হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম তো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এ মাস থেকেই জেলা, উপজেলা বা তৃণমূলের যে সব সম্মেলন বাকি আছে, সেগুলো আবার শুরু হয়ে যাবে।

ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করা হবে। -বাংলানিউজ।



মন্তব্য চালু নেই