দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের পদধ্বনি, খেজুর গাছে রস পাতার প্রস্তুতি

শাইখ সিরাজ : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের আগমন বার্তা জানান দিচ্ছে গাছিদের খেজুর গাছ কাটার ব্যস্ততা। খেজুর গাছের বাগানে ও মাঠে চলছে রস পাতার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। কয়েকদিনেই নামবে শীত, সে সঙ্গে নামবে রসগুড়ের আমেজ।

শীত এখনও আসেনি। তবে আসতেও যে বাকি নেই তা বলে দিচ্ছে প্রকৃতি। সূর্যকিরণ কিছুটা তির্যক এখন, বলা যায় তাপ দিচ্ছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে গাছিদের হাতের ছোঁয়ায় সেজে উঠতে শুরু করেছে খেজুর গাছ। এই একটি মৌসুম যেন তাদের।

চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় স্থানীয় কয়েকজন গাছি জানান, ১৩ থেকে ২০ বছর এ কাজের সাথে যুক্ত থাকার কথা। পারিবারিকভাবে এই পেশা গ্রহণের কথা জানান তারা।

গাছ কাটার কাজটিও শিল্পে আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল। রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার ব্যাপার।

স্থানীয় এক গাছি জানান, এইটা (কাটা অংশ) চাইছে দেয়ার পরে দিন পনেরো শুকাবে। না শুকাইলে পরে রস ঘোলা হবে। শক্ত কাঠ কাটা এবং চাছার জন্য ব্যবহার করা দুই ধরনের দা দেখান তিনি।

সারা বছর জমি মালিকের হলেও শীত মৌসুমের কয়েকমাস খেজুর গাছগুলো হয়ে যায় গাছিদের। স্থানীয়দের সঙ্গে রয়েছে একটি চুক্তিও।

স্থানীয় এক গাছি বলেন, ‘গাছের মালিক এই গাছের মাথাটা বিক্রি করে দেয়। এক মৌসুমে ১২০-১৩০ টাকায়। কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত আমার সময়। আমরা পাটালি করি আর গুড় করি ওটা ওই মালিক দেখবে না।’

তবে গ্রামবাসী বলছেন, গাছ যেমন কমে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে গাছির সংখ্যাও।

তাদের একজন জানান, যেহেতু এই গাছ কাটা খুব পরিশ্রমের কাজ এবং এর থেকে খুব সন্তোষজনক আয় হয় না। এর কারণে মানুষ দিনে দিনে এই কাজগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে।

আরেকজন জানান, আমারও এই দুইশোর উপরে ছিলো গাছ ছিলো। আমি অনেকগুলো কেটে ফেলেছি। নিজে কাটতে পারি নাই, গাছিও পাই না বলে।

তবে কারো কারো বিশ্বাস, যতই সংকট আসুক, এই ঐতিহ্য শেষ হবার নয়।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘না, বন্ধ হবে না এইটা। পারিবারিকভাবে চলতে আছে। আমার ছেলে কাটে। ছেলের আবার ছেলে কাটবে।’

লেখক : কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই



মন্তব্য চালু নেই