থামছে না বানভাসি মানুষের হাহাকার : পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকলেও নেই বিতরণ

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভূঞাপুরে বন্যা কবলিতরা এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। এমনকি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের খোঁজ নেয়নি সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা। ফলে ত্রাণের জন্য বানভাসিদের মধ্যে চলছে হাহাকার। লোকজন না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তবে প্রশাসন থেকে বার বার বলা হচ্ছে, বন্যায় তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তেমন ত্রাণ সহায়তা পায়নি বন্যা কবলিত মানুষেরা।

উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারের বন্যায় অর্জুনা ইউনিয়নে দুই ধাপে ১৯ মেট্রিক টন চাল, গাবসারায় ১৯ মেট্রিক টন, ফলদায় ৫ মেট্রিক টন, গোবিন্দাসীতে ৯ মেট্রিক টন, অলোয়ায় ৯ মেট্রিক টন ও নিকরাইল ৯ মেট্রিক টনসহ ৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রথম ধাপে ৩ লাখ টাকা নগদ ও দ্বিতীয় ধাপে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অর্জুনাতে ২৩ গ্রামের ৩৪৫২ পরিবার, গাবসারায় ২৫ গ্রামের ৪৯৫০ পরিবার সম্পূর্ণ, গোবিন্দাসীর ৮ গ্রামের ৭৯০ পরিবার, নিকরাইলে ১২ গ্রামের ১৮০০ পরিবার, ফলদায় ৭ গ্রামের ৭২০ পরিবার ও অলোয়াতে ৫ গ্রামের ৪৮০ পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরেজিমেনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী, অর্জুনা, নিকরাইল ও গাবসারা ৪টি ইউনিয়ন যমুনানদী কেন্দ্রিক। গত তিন সপ্তাহ আগে যমুনা নদীর পানি বাড়ায় গাবসারা পুরো ইউনিয়ন, অর্জুনা, গোবিন্দাসীর আংশিক গ্রাম প্লাবিত হয়।

পরে যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রভাবিত হওয়ায় নিকরাইল ইউনিয়ন, গোবিন্দাসী ইউনিয়নের গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া সড়ক ও গোবিন্দাসী-নিকরাইল সড়ক ভেঙে যাওয়ায় অলোয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়াও ফলদা ইউনিয়নেও বন্যার পানি প্রবেশ করায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। উপজেলায় আশ্রয়ণ কেন্দ্র না থাকায় মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। বন্যায় ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিজ দায়িত্বে স্কুলঘর, মাদরাসা ও উচু বাঁধসহ বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব-তারাকান্দি সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বন্যাদুর্গতরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক সপ্তাহ ধইর্যা রাস্তার উপর পলিথিন দিয়া তাম্বু কইরা রইছি। কেউ দেখবার আহে নাই। কোনো সাহায্যও পাই নাই।

গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, জরুরিভাবে চরাঞ্চলে কমপক্ষে ৬/৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা দরকার। না হলে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে।

এছাড়াও বন্যা কবলিতরা অভিযোগ করে বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে পানির সঙ্গে বসবাস করছি। অথচ কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বার আমাদের খোঁজ নেয়নি, ত্রাণতো সেটা বহুদূর। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল জানান, `বন্যাদুর্গত এলাকায় বিতরণের জন্য ত্রাণ হিসেবে দুই ধাপে ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।`



মন্তব্য চালু নেই