তোমরা যারা বই মেলায় যাওনি

স্যার, একটি উপকার করতে পারবেন ? চেষ্টা করে দেখবো। কী করতে হবে? ‘আমি যেন তার বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হই, সে যেন তার সন্তানদের নিয়ে বই মেলায় যায়।’ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করা শিক্ষার্থী শিহাব এভাবেই অভিযোগ করে বলেছিল, বই মেলায় যেতে না পারার বেদনার কথা। একথাটি আমাকে দারুণ ভাবে ব্যথিত করেছে। পাশাপাশি আশ্চার্য হয়েছি ! পিতারা এমন কেন হয় ?

দুটি বর্ণের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নাম ‘বই’। একুশের চেতনা থেকেই বই মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শত শত বইয়ের দোকান বসেছে। যে কেউ বই শব্দটি শুনলে সে অতীত জীবনের স্মৃতি স্মরণ করে। কেউ ছোট সময়ে লেখা পড়ার সুযোগ পায়নি বলে আফসোস করে। আবার কেউ বই পাঠের অভ্যাস থেকে আনন্দ অনুভব করে। কিন্তু সন্তানরা পাঠ্য বই পেয়ে বই পায়নি বলে আফসোস করে। এ আবার কোন বই ? এটা বই মেলা ঘুরে ঘুরে পছন্দের কেনা বই। মেধা বিকাশের জন্য সন্তানকে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। উৎসাহের প্রথম ¯তরটি হলো পরিবার। পড় ! পড়!! পড় !!! এভাবে বলতে থাকলে সন্তান পড়তে শেখে না। পড়ার মধ্যে আনন্দ কোথায় তা বোঝানো উচিৎ। শেখা বিষয়টি যখন বিনোদনের সাথে হবে তখনই কোন সন্তান নিজ আগ্রহে শিখতে চাইবে। শিক্ষার পরিবেশ যেখানে আছে সে স্থান স্বেচ্ছায় খুঁজে নেবে। পিতা-মাতা বা অভিভাবক সচেতন হলেই ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ স্থানগুলো নির্বাচন করবে। বই মেলা তেমনই ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ স্থান।

প্রাথমিক জীবনে অনেক শিক্ষার্থীর মেধা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যতই শ্রেণি অতিক্রম করে ততই মেধার বিকাশ ঘটে। বই পড়া ও কেনার প্রতি সন্তানের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে বিধায় সেভাবে পরিচালনা করতে হয়। মেলাতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে বইয়ের দোকানগুলো সাজানো হয়। তাই সন্তানের মেধা, দক্ষতা, শ্রেণি, বয়স , ভবিষ্যৎ, ধর্ম , আদর্শ চরিত্র গঠন ইত্যাদি চিন্তা করে বই সরবরাহ করলে সন্তানরা বিভ্রান্ত হওযার সুযোগ কম থাকবে। কেননা ভুল কিংবা অজ্ঞতাবশত সন্তানের সিদ্ধান্ত সঠিক নাও হতে পারে। তাই বই ক্রয়ের পূর্বে গুরুত্বের সাথে এ বিষয়গুলো ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

mabdulkahhar@gmail.com
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার

৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদ্বশ শ্রেণি পার করে ফেললো তবুও বই মেলায় যাওয়া হলো না। প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাস এলে ওরা উজ্জিবীত হয়। একুশের চেতনা ধারণ করে। কিন্তু ‘সামনে পরীক্ষা, এ বছর মেলায় যাওয়া যাবেনা। ভবিষ্যতে যাওয়ার অনেক সময় পাবে’ বলে অধিকাংশ অভিভাবকরা তার সন্তানদের বুঝিয়ে থাকেন। এভাবেই অনুৎসাহিত করা হয়। সন্তানরা তখন মন খারাপ করে বসে থাকে। পাঠে মন দিতে কষ্ট হয়। এভাবে করেই সন্তানরা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সুস্থ বিবেক পরিচয় বহন করে সন্তানের এমন মতকে প্রধান্য দেয়া হলে তাদের আগ্রহ যেমন বাড়ে তেমনি সে সব বিষয় কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়ার বিষয়টি অধিকাংশে সুনিশ্চিত হয়। এক ঘেয়েমিভাবে কোন সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলে হীতে বিপরীত হয়।

অনেক পরিবার এমন আছে যে, বই মেলায় যাওয়ার আগ্রহ নেই তবে বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে বহুবার। সংসারের নানা উপকরণ ক্রয়ের জন্য যথা সময়েই চলে গেছেন বাণিজ্য মেলায়। তখন সন্তানের সময় নষ্ট হয় তা চিন্তা করা হয় নি। বই মেলার প্রতি যেন তাদের ক্ষোভ। অভিভাবকের দৃষ্টি ভঙ্গি কি এমন হওয়া উচিৎ ? মোটেই নয়। শিহাবের পরিবারের মতো এভাবে অসংখ্য অভিভাবক আছেন যারা সন্তানের ভবিষ্যৎ শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই মেধার বিকাশ খুঁজে বেড়ান। কিন্তু পাঠ্য বইয়ের বাইরেও যে অসংখ্য বই আছে, যা মেধার বিকাশে সহায়তা করে। সে কথা তারা মানতে নারাজ। বই মেলায় যওয়া, বই কেনা, বই পড়া, দেশ-বিদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সং¯কৃতিসহ ক্যারিয়ার বিষয়ের নানা বইমেলাতে পাওয়া যায়। লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়। এ সব বিষয় জানাটাও একুশের চেতনার অংশ। ইতিবাচক চিন্তা লালন করলেই তাদের পক্ষে মেলাতে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব। তোমরা যারা বই মেলায় যাওনি বা যেতে পারনি, তারা অভিভাবককে বুঝিয়ে বলো তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অথবা তোমার বিদ্যালয়ের শিক্ষককে বিষয়টি অবহিত করো। কোন না কোন সমাধান পাবে নিশ্চয়।

অভিভাবকরা চাইলে সময় করে সন্তানদের নিয়ে বই মেলা ঘুরে আসতে পারেন। এতে সন্তানরা বই পাঠে আগ্রহী হবে। অন্যের বই কেনা দেখে নিজেই বই কিনতে আগ্রহী হবে। বইয়ের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি হবে। নতুন কিছু ভাবতে সহায়তা করবে। চিন্তা শক্তির উন্নতি ঘটবে। লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সাথে পরিচিত হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। লেখক হওয়ার আকাংঙ্খা জাগবে। এ বিষয়গুলো অভিভাবকরা গভীরভাবে উপলব্ধি করলে সন্তনরা ফিরে পাবে এক নতুন জীবন। সর্বোপরি বই বিনোদন ও মেধা বিকাশের অনন্য এক মহাসমুদ্র।



মন্তব্য চালু নেই