তৃতীয় শক্তির নাগরদোলা আর দুলবে না : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উনি (খালেদা জিয়া) চান দেশে এমন একটি শক্তি আসুক যারা নাগরদোলায় দুলিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাবে। ওই নাগরদোলা আর দুলবে না। তৃতীয় শক্তির আশীর্বাদে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন না দেখে গণতন্ত্রের চর্চা করুন এবং মানুষের জন্য কাজ করুন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, যেভাবে মানুষ মেরেছে, যেভাবে লাঠিপেটা করেছে তাতে জনগণ আর তাদের (বিএনপি) ক্ষমতায় আনবে না। আগামী নির্বাচনেও জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। বিএনপি-জামায়াত যতদিন ক্ষমতায় ছিল ততদিন ইতিহাস বিকৃতি অব্যাহত থাকে। এত ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা পৃথিবীর কোনো দেশে ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াতের ইতিহাস বিকৃতির কারণে এ দেশের তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কেউ কেউ খেতাবও পেয়েছেন। তবে তারা মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বাস করতেন কি না- তা নিয়েই সন্দেহ আছে। কারণ, তারাই এদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজাকার-আলবদর নেতাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। যারা ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা রাজাকারদের গাড়িতে লাগিয়েছে তারাই এখন কী করে গণতন্ত্রের কথা বলেন?

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনোই স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নতি চাননি। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছেন। ২১ বছর এদেশের মানুষকে বিভক্ত করা হয়েছিল। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে এ দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে নিজেরা অর্থের পাহার গড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ইতিহাস বিকৃতি থেকে এ দেশ মুক্তি পায়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এ দেশের মানুষ কিছু পেয়েছে। ’৭৫-এর পর থেকেই এ দেশে বার বার মিলিটারি শাসন এসেছে আর বাংলাদেশের মানুষ বার বার সংগ্রাম করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বারবারই আমাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশনা দিতেন, প্রতিটি বাঙালি তা মেনে চলতেন। দেশ স্বাধীন হয় বঙ্গবন্ধুর ডাকে। আওয়ামী লীগ মাত্র ৯ মাসে দেশের সংবিধান দিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছে-এসবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য সম্ভব হয়েছে।

১৯৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির কারচুপির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আয়নায় চেহারা দেখুন, চেহারা শুধু সাজুগুজু করার জন্যই নয়। আমরা গণতন্ত্র এনেছি, গণতন্ত্র অব্যাহত রাখবো। এর আগে জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে বিএনপির কারচুপির নির্বাচন শুরু হয়েছিল। এছাড়া মাগুরা ও মিরপুরের নির্বাচনেও বিএনপির চেহারা ফুটে উঠেছে। আজ তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে। গত নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নেননি। কারণ, তিনি জানতেন যে, ভোট পাবেন না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তাই যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ভোট পাবে না জেনেই নির্বাচন বর্জন করে। আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।

এ সময় দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকা ও যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার নির্দেশ দেন তিনি।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য রাখেন।



মন্তব্য চালু নেই