তৃণমূলে নাম নেই, কিন্তু কেন্দ্রের পছন্দ আইভী

বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের তিন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে দলের সূত্রগুলো বলছে, এ পদে কেন্দ্রের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন আইভী। এ কারণেই কিছুদিন আগে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে একটা স্পষ্ট ধারণার জন্য তৃণমূলের মতামত নেওয়া হয়। তবে সে মতামত চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে একটা বিভক্তি রয়েছে, এটা তারা জানে। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এটা দেখা গেছে। কয়েক দিন আগে আইভীকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। বর্তমান মেয়র আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান সাংসদ হওয়ায় আইন অনুযায়ী প্রার্থী হতে পারবেন না। এরপরেও আইভীকে বাদ দিয়ে তৃণমূল কীভাবে অন্যদের মনোনয়ন দিল, এটা তাঁদের অবাক করেছে।

আইভিকে ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে—এমন খবর শুনে চমকে যান আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি আর গেল না।’

তৃণমূলের বাইরে বাছাই করা প্রার্থীর বাইরে কি স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘যাঁরাই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনবেন, তাঁদের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সাক্ষাৎকার নিয়ে মনোনয়নের জন্য চূড়ান্তভাবে বিবেচনা করবেন।’ এ ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকা পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের আরেকজন সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তৃণমূলের মতামতকে তাঁরা সম্মান করেন। কিন্তু তাঁদের বাছাই করা প্রার্থীর মধ্যে অনেক সময় যোগ্যতম কেউ বাদ পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ড বিভিন্ন জরিপের সহায়তা নিয়ে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী বাছাই করে থাকে।

সোমবার নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এরপর গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগকে তার অন্তর্ভুক্ত থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বর্ধিত সভা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কমপক্ষে তিনজনের একটি প্যানেল সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানোর কথা বলা হয়।

কেন্দ্রের নির্দেশের পর মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে। বর্ধিত সভা শেষে মুখপাত্র হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সভার সভাপতি চন্দন শীল বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে কেন্দ্র থেকে তিনজনের নাম চাওয়ায় বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশীদ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের নাম পাঠানো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইভীর নাম কেউ সভায় প্রস্তাব করেছেন কি না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভায় আনোয়ার হোসেন ছাড়া অন্য কারও নাম কেউ প্রস্তাব করেননি।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীলের সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাসহ নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। ২৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। যাচাই-বাছাই ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ।খবর প্রথম আলো’র।



মন্তব্য চালু নেই