তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের দাবি ( ভিডিও )

তুরস্কে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে সেনাবাহিনী। ‘স্বৈরশাসন সংহত হতে থাকায়’ এবং ‘সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ায়’ এ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। নতুন সরকার পরিচালনায় ‘পিস কাউন্সিল’ নামে একটি পরিষদ করে সেনাবাহিনী বলেছে, তুরস্কজুড়ে মার্শাল ল (সামরিক শাসন) জারি করা হয়েছে। এখন থেকে রাষ্ট্র এই পিস কাউন্সিলের অধীনে চলবে।

শুক্রবার (১৫ জুলাই) এশার নামাজের পর থেকে তৎপর হয়ে মধ্যরাত নাগাদ ক্ষমতা দখলের এ দাবি করে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী ও তাদের দখল করা কিছু সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর দিচ্ছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, সেনাবাহিনী ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালীকেন্দ্রিক দু’টি প্রধান যোগাযোগ সেতু বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারার আকাশে যুদ্ধবিমান দিয়ে চক্কর দিচ্ছে। তারা দখলে নিয়েছে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার সব প্রধান সড়ক।

বাতিল করা হয়েছে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারা এয়ারপোর্টসহ তুরস্কমুখী ও বহির্মুখী সকল ফ্লাইট। আঙ্কারায় থেকে থেকে গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় কিছু সম্প্রচার ও সংবাদমাধ্যমও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় একটি সম্প্রচারমাধ্যমে সেনাবাহিনী দাবি করে, রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব এখন তাদের হাতে। তবে ‘আইনের শাসন’ চলবে। এছাড়া, শিগগির নতুন সংবিধান প্রণীত ও কার্যকর হবে। আর এখন থেকে কার্যকর হবে মার্শাল ল সামরিক শাসন।

অন্য এক সূত্রে জানা গেছে তুরস্কে সেনাবাহিনীর একটি অংশ এরদোয়ান সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি টেলিভিশনে (টিআরটি) সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তারা পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

কিন্তু টেলিভিশনে ঘোষণা যারা দিয়েছে তারা সেনাবাহিনীর কোন অংশ সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানা যাচ্ছে না।

তবে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিমি এ ধরনের কোনো তৎপরতার কথা অস্বীকার করছেন। যদিও শুক্রবার তিনি যখন গণমাধ্যমকে এ কথা বলছিলেন তখনও রাজধানী আঙ্কারার আকাশে অনেক নিচে দিয়ে যুদ্ধ বিমান উড়ছিল এবং ইস্তাম্বুল শহরের সব সংযোগ সেতুতে সেনাবাহিনীর যুদ্ধযান রেখে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেনাবাহিনীর একাংশের এ কর্মকাণ্ড বৈধ নয়। আর এটাকে কোনো সেনা অভ্যুত্থান বলা যাবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার সরকার এখনো ক্ষমতায়।

এদিকে ইস্তাম্বুলে বসফরাস এবং ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতুর যোগাযোগ যুদ্ধযান মোতায়েন করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানী আঙ্কারায় গোলাগুলির শব্দও পাওয়া গেছে বলে জানা যাচ্ছে। ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে ট্যাঙ্কও মোতায়েন করা হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। আঙ্কারায় পুলিশ সদরদপ্তরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, টেলিভিশনে ঘোষণায় সেনাবাহিনীর ওই অংশটি বলেছে, এই সরকার তুরস্কের গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার শাসন ব্যবস্থা মুছে ফেলেছে। দেশ এখন একটি ‘পিস কাউন্সিল’ এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই কাউন্সিল সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যতো দ্রুত সম্ভব একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হবে বলেও ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ইলদ্রিমি এনটিভি চ্যানেলকে ফোনে বলেছেন, ক্ষমতা দখলের একটি চেষ্টা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ ধরনের কোনো চেষ্টা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করবো না।

যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদেরকে এর জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হবে বলে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান নিরাপদেই আছেন। তবে এর বেশি কিছু জানাতে পারেনি মার্কিন গণমাধ্যমটি।

প্রেসিডেন্টের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যারা ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে তারা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কোনো বিবৃতি দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়।

আরো খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেনা সদরদপ্তরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তুর্কি সেনাপ্রধান।

এই ঘটনাকে একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অকল্পনীয় বর্ণনা করছেন বিবিসির আঙ্কারা করেসপন্ডেন্ট। দেশটিতে সর্বশেষ সেনাঅভ্যুত্থান হয়েছিল ১৯ বছর আগে। জনগণ ভেবেই নিয়েছিল সেনা হস্তক্ষেপের দিন শেষ।

আপডেট ৪.৫০ মিনিট: ট্যাঙ্ক থেকে তুর্কির পার্লামেন্ট ভবনের কাছে গুলিবর্ষণ করা হইয়েছে। আঙ্কারা এবং ইস্তাবুলেও গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

তুর্কি পতাকা হাতে মানুষ রাস্তায় নামছে। কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।

আপডেট ৪.১০ মিনিট: তুর্কিতে সেনা অভ্যুত্থানের করা মাশুল দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ফেইস টাইমের মাধ্যমে টিভিতে লাইভ সম্প্রচারে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট। টিভিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সেনাবাহিনী কখনোই সফল হবে না। এরা সংখায় বেশি নয়, এদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট এরদোগান।’

তুর্কির পার্লামেন্ট বিল্ডিং ট্যাঙ্ক দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছে। ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে গোলাগুলি হচ্ছে। এনাডলো নিউজ এজেন্সি টুইট বার্তায় জানায়, প্রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স আঙ্কারায় গোলাগুলি হয়েছে এবং মিলিটারি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়।

turkey-coup-ankara-streets-july-15-2016

আপডেট ৩.২৭ মিনিট: তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল থেকে সম্প্রচার করা হয় তুর্কি এখন ‘পিচ কাউন্সিল’ এর আওতায় রয়েছে যা এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তুর্কি আর্মি সবকিছু তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। সাংবিধান, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, রুল অব ল সব পরিবর্তন করা হবে। টিভিতে প্রচারিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরদোগান সরকারের করা ডেমোক্রেটিক এবং সেকুল্যর নিয়মকে বাদ দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সব চুক্তি এখনও বৈধ আছে। অন্য দেশের সাথে তৈরি করা সুসম্পর্ক বজায় থাকবে বলে আশা করছে সেনাবাহিনী।

স্কাইপে সিএনএনকে তুর্কিস প্রেসিডেন্ট রিকাপ এরদোগান সবাইকে রাস্তায় নামতে বলেন এবং সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থানকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

আপডেট ৩.০৭ মিনিট: স্থানীয় সময় ১০.৫০ মিনিটে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী শহর দখল করার চেষ্টা করছে। আতাতুর্ক এয়ারপোর্টে সব ফ্লাইট আপাতত বন্ধ রয়েছে।

লন্ডন থেকে আসা গাব্রেইল টার্নার নামের একজন গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘সারাদিন জুড়েই শহরে অনেক পুলিশ এবং মিলিটারি আর্মি দেখা গেছে। তবে মূল মিশনে সেনাবাহিনী মাঠে নামে সন্ধ্যার পরে।’

turkey-coup

তিনি বলেন, ‘আজকে সারাদিনই শহর জুড়ে অনেক পুলিশ ছিল। সব জায়গায় ছিল পুলিশ। আমি মনে করেছিলেন এটা স্বাভাবিক কিন্তু আমার সাথে থাকা দুই তুর্কি মেয়ে আমাকে বলল এটা স্বাভাবিক না। আমরা ইস্তাম্বুল শহরের মাঝে ছিলাম। সেখানে প্রতিটি প্রবেশ পথে এবং বাহির হবার পথে অনেক পুলিশ ছিল যাদের সবার হাতেই ছিল অস্ত্র।’

সন্ধ্যার পর ৮টার দিকে একটি পুলিশ হেলিকপ্টার খুব নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। দেখে মনে হচ্ছে এরা কিছু খুঁজছে। তারপর ১০.৩০ এ আমি কারাকয়ে ছিলাম, তখন দেখলাম সবাই মোবাইলে চোখ রাখছে। পাশেই একটি বার রয়েছে, বারের একজন বলল আর্মি সবকিছু দখল করে নিয়েছে।

তারপর আরও একটু যাবার পর আমার বন্ধু বলল, বুসফরাসের ব্রিজ আটকে দিয়েছে আর্মিরা। আকাশে আর্মির হেলিকপ্টার উড়ছিল। আমরা সবাই তখন একটি ক্যাফের ভিতর চলে গেলাম। সবাই মোবাইলে টেক্সট করছে।



মন্তব্য চালু নেই