“তুমি আছো পাশে, আমাদের এই জার্নি এখন মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত চলবে “

ভোর বেলা ঘুম ভাংল তীব্র শীতে।এত শীত লাগছে যে আমি থরথর করে কাপছি।চোখ মেলে দেখি আমার গায়ে কম্বল নেই।বুঝলাম এটা নিঝুমের কাজ।আমার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে সে প্রতিদিনই কিছু না কিছু করবেই।মোবাইল ফোনের ঘড়িতে দেখলাম ভোর পাচটা বাজে।এত ভোরে আমার ঘুম ভাংগানোর কারণ হলো আমাদের দুজনের একসাথে ফজরের নামায পড়া।নিঝুমের সাথে আমার বিয়ের আজ মাত্র তিন মাস হলো।আমি বরাবরই বিয়ে নামক বস্তু থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি।কিন্তু মেয়েটির সাথে কথা বলে আমার তাকে এত পছন্দ হয়ে যায় যে আমি আবির বিয়ের জন্যে পাগল হয়ে যাই।বিয়ের একমাস আগে থেকে তার সাথে যে কতবার ফোনে কথা বলেছি তার ইয়ত্তা নেই।সব কথা যেন আমিই বলতাম,সে শুধুই শুনতো আর হু হ্যা বলতো।খুবই লজ্জা পেত তখন আমার সাথে কথা বলতে।বিয়ের পরও সে আমাকে আপনি আপনি করেই কথা বলতো।এই তিন মাসে সে অনেকটাই সহজ হয়েছে আমার সাথে।এখন তো আমাকে তুমি তুমি করে বলেই তার সাথে টুকি টাকি রাগও করে যা আমার অসম্ভব ভালো লাগে।এই যেমন গত তিনদিন ধরে সে চেষ্টা করছে পাচ ওয়াক্ত নামায পড়ার।কিন্তু হচ্ছে না।ফজরের নামায তো আরো হচ্ছে না।আমাকেও তার সাথে ট্রেনিং দিচ্ছে সে।আজ আমার গা থেকে কম্বল সরানোর উদ্দেশ্য এটাই।আমি বিছানাতে উঠে বসতেই নিঝুম ওয়াশ রুম থেকে ওযু করে বের হলো।

-এই যাও যাও,ঝটপট ওযু করে আসো তো।নামাযের সময় হয়ে গিয়েছে।

আমি হাই তুলে বললাম,নিঝুম আজ থাক?কাল থেকে…

-না।কোন কাল থেকে না।আজ এখন থেকেই।যাও যাও যাও। আহ,বসে আছো কেন?ওঠো না।

আমি ওগত্যা কাপতে কাপতে ওঠলাম।মনে মনে ভাবছি পানিতে হাত ভেজাবো কিভাবে।ওয়াশ রুমে যেতেই দেখি সে আধা বালতি গরম পানি করেই রেখেছে।বুঝলাম সে বেশ সিরিয়াস।আমরা নামায পড়লাম।পড়ে আমি আর ঘুমালাম না।অফিসে যেতে হবে।অফিস বনানীতে।আমি একটা ফোন কোম্পানীতে চাকরী করছি।সাতটায় বের হতে না পারলেই কঠিন জ্যামে আটকা পড়বো।আমি বের হওয়ার আগে নিঝুম বেশ ব্যস্ত থাকে।নাস্তা বানানো,মাকে চা দেওয়া,ঔষুধ খাওয়ানো সবই।আমরা দু ভাই।আমি আর বড় ভাই।বড় ভাবি ও তাদের ছেলে সুপ্ত,আমার মা এই কয়েকজন নিয়ে আমাদের সংসার।আমার বড় ভাই একজন কর্পোরেট অফিসার আর ভাবি একজন সরকারি চাকরিজীবি।আমরা চলে যাওয়ার পর বাসায় একা থাকে নিঝুম আর মা।আমার মা চান নিঝুম চাকরি করুক কিন্তু নিঝুমের কোন আগ্রহ বোধ আমি দেখি না।

প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে আমার নিঝুমকে একটা চিঠি দিতে হয়।নিঝুমও আমাকে দেয়।গত মাস থেকে এই সিস্টেম চালু হয়েছে।আমার খুব ভালো লাগে ওর চিঠি পড়তে।কিন্তু আমি কি লিখবো বুঝতে পারি না।আজ Fiona Davidson এর একটা কবিতা লিখলাম।

May be a little romance is needed

Lightening our days in all this grey

To place a smile on our faces.

You cant have too much romance

In a life that’s filled with sadness

Making us laugh with pleasure.

Give me some romane to dazzle me

To make my heart sing out loud and make me feel I’m alive.

নিচে লিখলাম ‘ভালবাসি তোমাকে’।

নিঝুম আজ বিরিয়ানি বানান শিখবে তার শাশুরি এর কাছ থেকে।তার এ প্রস্তুতি নিচ্ছে।নতুন নতুন রান্না শেখা আজকাল তার শখে পরিনত হয়েছে।মায়ের ঘরে জেতেই দেখে সুপ্ত কে কলে নিয়ে বসে আছেন।

-মা,আজ ঠিক করেছি বিরিয়ানি বানাব।আপ্নি একটু শিখিয়ে দেবেন?

-হা অবশ্যই।মন তা একটু খারাপ নিঝুম।

-কি হয়েছে মা?

-তোমার শশুরের কথা মনে পরছে।তোমাকে তো দেখে যেতে পারে নি।আবির এর বয়স যখন ১৪ তখন মারা যায়।আমি যে এই জীবনে কি কষ্ট করেছি তা আমি আর আল্লাহ এ জানেন।ব্যাংক থেকে লোনে টাকা নিয়েছি ওদের পড়াশনার খরচের জন্যে।কি দিনটাই না গিয়েছে আমার।এখন ২ ভাই এ প্রতিষ্ঠিত আমার আজ সুখের দিন।বড় বউ চাকরী করছে একটা নাতি এসেছে ঘরে। আজ বড় আফসোস হয় জানো তমার শশুর বেচে থাকলে কি আনন্দই না পেতেন।

-মা,আমি বুঝতে পারি আপনার কষ্ট।আমি ত দুয়া করি উনার জন্যে

-নিঝুম,তুমি পড়াশুনা করেছ চাকরী কর না কেন?আমি কিন্তু Typical শাশুরি দের মত না।আমি চাই আমার ছেলের বউরাও চাকরী করুক।কেন চাই জান?কারন আমি বুঝি এর মর্ম।আমি নিজে চাকরি করেছি তোমার শশুর মারা যাওয়ার পর।সেদিন যদি আমি চাকরি না করতাম তাহলে এভাবে মানুষ হত আমার দুই ছেলে?এজন্যেই আমি বলি প্রতিটি মেয়ের এ চাকরি করা উচিত।At least,নিজের পায়ে দাড়িয়ে স্বাবলম্বি হওয়া উচিত।তুমি কিছু কর না তাই আমি চাই তুমিও কিছু একটা কর।

নিঝুম মাথা নিচু করে বললো ‘ঠিক আছে মা,করব’

-নাও,সুপ্ত কে ধর তো আমি আসছি রান্নাঘরে।

নিঝুম সুপ্ত কে কলে নিয়ে নিজের ঘরে গেল।তার অনেক মন খারাপ লাগছে।ফোন চেক করে দেখল আবির মেসেজ দিয়েছে ‘আজকের চিঠিটা অনেক সুন্দর ছিলো।‘ নিঝুম রিপ্লাই দিল ‘আমার না অনেক মন খারাপ লাগছে’।

নিঝুম আজ যে চিঠি লিখেছে তা ছিলো ‘প্রতিদিন ভাবি ভালবাশি বলবো তোমাকে।বিয়ের তিন মাস হল তবুও মুখোমুখি বলতেই পারলাম না।কি যে হয় আমার’

নিঝুম এর একটু মন খারাপ লাগছে যে মা তাকে এমন করে বললেন।তবে কি তার দাম কমে যাচ্ছে?তার আসলেই চাকরি করতে ইচ্ছে করে না।সংসার করতেই সে ব্যাস্ত।

আমার আজ কাজ একটু বেশি এ।অফিসে আজ যেতেই মাহবুব সাহেব জানালেন সামনের সোমবার কক্সবাজার যেতে হবে।অফিস থেকে কনফারেন্সে নিয়ে যাবে।এরই মধ্যে তানিযা আসলো।সে নতুন জয়েন করেছ গত পরশু।আমাকে বললো-কি খবর আবির ভাই?

-এই ত।তোমার কি অবস্থা তানিযা?

-চলে আর কি।

-আজ কাজ কেমন?

-এই ত।একটা রিপোর্ট লিখতে হবে।

-অহ!

-চলেন না কফি খেয়ে আসি?

-এখন না তানিযা।কাজ আছে।

-অহ কাজ ত পরেও করা যায়।

-না তানিযা।পরে যাব।

-অকে।

মাহবুব ভাই আমাক বললেন-এই মেয়ে থেকে দুরেই থাক ভাই।তোমার সাথে এত কথা বলে শুধু। আমি হাসলাম।-কি যা তা বলেন।আমার সাথে এক্তু ফ্রেন্ডলি এজন্নেই হয়ত।আপনি কথা বলেন আপনার সাথেও ঠিক এ কথা বলবে।

বাসায় ফিরলাম রাত ৮তায়।নিঝুম বললো-এত দেরি করলে?সন্ধার পর থেকে অপেক্ষা করছি তোমার জন্যে।

-রাস্তায় অনেক জাম নিঝুম।আমি ৬ টায় বের হয়েছি।

ফ্রেশ হয়ে বসার পর খেয়াল করলাম নিঝুম আমার সাথে কম কথা বলছে।বুঝলাম আমার কোন দোষ।আমি বুঝতে পারি সে আমার উপর রাগ করলে কারন রাগ করলে সে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।আমি ভাবার চেষ্টা করলাম যে আমি কি করেছি।আমার মনে পরল দুপুরের এস।এম।এস এর জবাব আমি দি নি।সে লিখেছিল তার অনেক মন খারাপ লাগছে।আমি অফিসের কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছি তাকে রিপ্লাই দিতে।তার রাগ ভাঙ্গানতা একটু কঠিন এ বটে।সুপ্ত কে কোলে করে সে নিয়ে আসলো।ওকে আদর করে দিচ্ছে আর জানালা দিয়ে চাদ মামা কে দেখাচ্ছে।

-ওই যে বাবা দেখ চাদ।আমার সোনামনি কে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।চাদ কে ডাকো তো পাখি।আয়ে চাদ আয়ে।কই চাদ?আমার বাবু তাকে ছুয়ে যাও তো চাদ…

আমি আমার ফোনে এর প্লেলিস্ট থেকে একটা গান ছাড়লাম তার মন ভাঙ্গাবার জন্যে ‘Mere samne wali khirki mein ek chand sa tukra rehta hain,afsos hain k who humse kuch ukhra ukhra rehta hain.’

নিঝুম একটু হাসলো।সুপ্ত কে বড় ভাবির রুমে দিয়ে আসলো।আমার পাশে এশে বসলো।আমি ওকে বললাম

-সরি নিঝুম।Extremely সরি।

-Its okay।

-দেশের বাইরে চলে যাই ছল?

-কি করবেন ওখানে গিয়ে শুনি?

-কামলা খাটব।

-হা হা হা!! আর আমি?

-তুমি শেফ হয়ে যাও।রান্না করবে।Restaurent খুলবো।বেশ চলবে।বাইরের দেশের খাবারের দোকান খুব চলে।বাঙ্গালি রেস্তরা।

-উফ বাদ দাও ত।শোন,তমার এই Computer টা তো পরে আছে খামোকা।আমাকে এটা তে নেট কানেকশান লাগিয়ে দেবে?আমি ফেসবুক use করতে চাই।কতদিন যাই না ফেসবুক এ।

-অকে ম্যাডাম কালই এ দেব।আরে তোমাকে ত বলতে ভুলেই গিয়েছি যে সোমবার কক্সবাজার যেতে হবে।অফিসিয়াল কনফারেন্স আছে।১রাত থাকতে হবে।

-আমার তো শুনেই মন খারাপ লাগছে।আমি কখন সমুদ্র দেখি নাই আবির।

-নিয়ে যাবো তোমাকে দাড়াও।আমরা ২জন যাব।তাহলে এক কাজ করি আমার ফোনে এ ফেসবুক চ্যাট software install দিয়ে নি।তাহলে তোমার সাথে chat করতে পারব।

-না না।দেখ তোমার কাজের ক্ষতি হবে।তুমি তো সারাক্ষনই আমার সাথেই chat করবে আমি জানি।

-যখন journey করব তখন না হয় chat করব।তোমাকে details জানাব কক্সবাজার এর beauti।সবার সামনে তো আর ফোন কানে দিয়ে বসে থাকা যাবে না।তাই chat ই করব।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

পরদিন আমার কক্সবাজার যাওয়ার কথা।নিঝুম কে রেখে একা কক্সবাজার যেতে আমার খুব খারাপ লাগছিল।কিন্তু কি আর করার।অফিস এর কাজ।যেতেই হবে।যাওয়ার আগেও সে আমাকে ২তা চিঠি দিল।তাকে একবার আমার বুকের মাঝে চেপে ধরলাম।সারা রাস্তা তার সাথে chat করে কাটল।নিঝুম ক দেখলাম ফেসবুক এ আমাদের বিয়ের ছবি upload করেছে।প্রফাইল পিকচারে ওর আর আমার ছবি দিয়েছে।Relationship status এ লিখা Married with Abir hossain.

মাহবুব ভাই আমক একটা গান শুনতে দিলেন।বললেন-শুনেই দেখ।ভাল লাগবে।আমি কানে হেডফোন দিতেই অবাক হলাম কারন গানের কথাগুলো এমন-

‘নিঝুম রাতে এসো রে বন্ধু চাদ দেখতে আমার বাড়ি,তারায় তারায় গাথব মালা জোছনা দিয়ে এ সারি।

হ্রদয় মাদুর পেতে দেব,দেব স্বপ্নের খেয়া পাড়ি।‘

আমি এই লাইন গুলো নিঝুম এর ওয়ালে শেয়ার করলাম।অনেকে লাইক দিল দেখলাম।নিঝুম হয়ত ঘুমিয়ে পরেছে।এখন বাজে রাত ২ টা।আমার বাস চলছেই।

নিঝুম এর account এ একটা মেয়ে মেসাজ দিয়েছে ‘আবির কে আমি অনেক পছন্দ করি।হোপ তোমার এতে কোন আপত্তি নেই নিঝুম।হা হা হা!!’

নুযহাত তমা মেয়েতার ID।নিঝুম খুব অবাক হল।কে এই মেয়ে?আচ্ছা,আবির তার সাথে ফাযলামি করছে না তো?সে মেয়েতার প্রফাইল চেক করল।ছবি দেওয়া একটা মেয়ের ওয়ালপেপার এর।তৈমন কন ইনফো দেওয়া নেই।সে back করল ‘কে আপনি?’

-আবির ক পছন্দকারি।

-মানে?

-মানে আবার কি?বুঝে নাও?Oh girl!!Dont act like a child.

নিঝুম computer বন্ধ করে দিল।তার শরীর খারাপ লাগছে।

আজ সারাদিন আমার কাজ ছিল।কাজ শেষে ছবি তুলতে গেলাম।সমুদ্রের ধারে কিছুক্ষন বসে থাকলাম একা একা।খারাপ লাগছিল পাশে নিঝুম নেই বলে।অদ্ভুত সে অনুভুতি।তাকে ফোন দিলাম।

-নিঝুম?

-হা বল আবির।

-কি কর?

-মাথা তা প্রচন্দ ব্যাথা।খুব খারাপ লাগছে।শুয়ে আছি।তুমি?

-অহ।আমি জানো সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি।তোমার কথা খুব মনে পরছে।তোমার হাত ধরে ঠিক এখানেই বশে থাকতে ইচ্ছে করছে।

-আমরা যাব ত একদিন।মন খারাপ কর না।

-কি আনব তোমার জন্যে?

-নীল কাচের চুড়ি।

-আর?

-তুমি জান না আমার কাচের চুড়ি পেলে আর কিছুই লাগে না?

-আচ্ছা আনব।এখন রাখি?

-শোন?

-হা বল?

-তমা নামে কাওকে চেন?

-তমা?

-না কিছু না।আচ্ছা রাখ।

-না না বল।Who is this toma?

-আরেহ কিছু না বাবা।

আমি ফোন রেখে দিলাম।বেশ ঠান্ডা লাগছে।উঠতে যাবো এমন সময় পিঠে কে যেন স্পর্শ করল

-আবির?

আমি উঠে দাড়িয়ে ঘুরে দাড়াতেই অবাক হলাম।ফারিয়া এখানে?

-ফারিয়া,তুমি?

-হা।ঘুরতে এসেছি বন্ধু দের সাথে।তুমি?

-অফিস এর কাজে এসেছি।

-অহ।

আমি অনেক অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।এতদিন পর ফারিয়ার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবি নি।ফারিয়াও কিছুতা অপ্রুস্তুত।আমি বললাম-তারপর খবর কি তোমার?

-এই তো ভাল।চলে আর কি।তোমার?

-আমি ভাল আছি।

-বিয়ে করেছ শুনলাম তিন মাস হল।

আমি একটু চুপ থেকে বললাম, হু

-অহ।কেমন লাগছে বিবাহিত জীবন?

-ফারিয়া,Honestly বলতে আমি আমার বিবাহিত জীবন নিয়ে অনেক সুখী একজন মানুশ।

-বুজেছি।তোমার বউ অনেক সুন্দর তাইনা?

-কার কাছে কামন জানি না।তবে আমার কাছে পৃথিবীর সেরা সুন্দরি।

-অনেক ভালবাস?

-হু বাসি।ও আমাকে এত ভালবাসে যে আমি বাসতে বাধ্য।

-চল একটু হাটি ওদিকটায়?

-চল।

ফারিয়া বলল,আমি ভাবি নি এভাবে আমাদের দেখা হয়ে যাবে।

-Its ok,faria.Be relaxed.

-অফিস কেমন চলছে?

-আমার অফিস ভাল লাগে না।Income করতে হবে তাই।

-অহ।আচ্ছা তুমি কি এখনো ঘুম থেকে উঠতে লেট কর?মনে আছে কত ক্লাস যে তুমি মিস করেছ এভাবে।আর তোমাকে আমি বলতাম ভবিষ্যতে এরকম করলে তোমাকে অনেক উপায়ে ঘুম থেকে জাগাব।কখনো গায়ে পানি ঢেলে আবার কখনো কানের কাছে ঘন্টা বাজিয়ে।

আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম-ফারিয়া,এসব বাদ দাও না Please.হ্যা আমি এখন ঘুম থেকে উঠতে পারি না।তবে নিঝুম এর গত কয়েকদিনের training এ আমার ভোরে উঠা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।আজ তো ও আমার পাশে ছিল না তবুও আমি ভোর ৫ টায় উঠে পরেছিলাম।উঠে নামাযও পরেছি।

ফারিয়া চুপ করে হাটতে থাকলো।

-তোমার কি আমাকে মনে পরে আবির?মন থেকে উত্তর দেবে Please?

-ফারিয়া,তুমি এখন এসব কথা বলছ কেন?

-জানতে এচ্ছে করছে খুব।শুধু এটুকু বল?

-না,পরে না।দেখ সময় অনেকদিন পার হয়েছে।আমি বিয়ে করেছি।নতুন জীবন শুরু করেছি।ভুলে গিয়েছি সব।তুমিও পারবে।মনে যে পড়ে না তা না।পরে কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি।নিঝুম তোমার সম্প্রকে সব কিছু জানে।বিয়ের আগে তোমার কথা সব এ বলেছি।তোমাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম এটা ঠিক।তুমিও তাই।তুমি চাও নি তখন আমাকে।তোমার cariar এর জন্যে তুমি England চলে যাও।আমার সাথে কোন যোগাযোগ কর নি।কত খুজেছিলাম তোমাকে।২ বছর কেটে গেল তাও না।আমি তোমার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।আমি দিন দিন অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বিয়ে করব না।বাসা থেকে নিঝুম কে ঠিক করল।বড় ভাবি ত জানতোই তোমার কথা।নিঝুম কে দেখে আর ওর সাথে মিশে যেন আমি Heavenly feelings পেলাম একটা।

-আবির,তুমি যাও।আমি এখানে কিছুক্ষন একা থাক্তে চাই।

নিঝুম computer অন করল।আবার নুযহাত নামের মেয়েতি মাসাজ দিয়েছে

-আজ আবির এর সাথে সময় কাটালাম।এত্ত কিউট কেন তোমার জামাই?

নিঝুম এর মাথায় যেন আগুন ধরে গেল।কে এই মেয়ে?তার কিছুই ভাল লাগছে না।আবির এর আগে এক্তা সম্পর্ক ছিল সে জানে।ফারিয়া নাম।কিন্তু সে মেয়ে বাইরে থাকে।যাই হোক যদি দিয়েও থাকে,তাকে কেন এ ধরনের মেসেজ দেবে?আবির এর সাথে থাকার প্রস্নই উথে না ফারিয়া দেশের বাইরে থাকে।

আমি ঢাকায় পৌছালাম রাত ৯ টায়।খুব ক্লান্ত শরীর নিয়ে।ফ্রেশ হয়ে নিঝুম কে ধরে বললাম,সরি তমার জন্য নীল কাচের চুড়ি আনতে ভুলে গিয়েছি।

-জানি ভুলে যাবে।

-বাহ বা এত রাগ?রাগলে সত্যি তোমাকে অনেক কিউট লাগে।

-ভাল।

ওর হাত ধরে পড়িয়ে দিলাম।আমি ঠিকই এনেছি কিন্তু অভিনয় করলাম।কিন্তু নিঝুম কে একটু অন্যরকম মনে হল।ও আমাকে বললো- নুযহাত কে চেন?

-নুযহাত?

-তমা?

-আচ্ছা কি হয়েছে তোমার একটু বলবে?সেদিন থেকে কি আবল তাবল বকছ?নুযহাত,তমা এরা কারা?আমি চিনি না।কি হয়েছে খুলে বল ত?

-কিছু হয় নি আবির।চল ঘুমাই।তুমি ক্লান্ত আজ।পরে কথা হবে।

নিঝুম প্রচুর গান শনে।গান ছাড়া সে অচল।কিন্তু আজ তার মন ভাল নেই।আবির কে বলা দরকার।কিন্তু সে আবির কে অনেক ভালবাসে আর সে অনেক বিশ্বাস করে।এটা জিগ্গেশ করা মানে তার অবিশ্বাস কে মুল্য দেওয়া হবে।আবির আজ কাল তাকে চিঠিও লিখছে না।বলে ও নিজেই যে কাজের চাপ।তবুও তার ভাল লাগছে না।আবির কে জরিয়ে ধরে কাদতে ইচ্ছে করছে তার।ফেসবুক account আজ ই inactive করে দেবে সে।পিসি অন করল।ফেসবুক এ গেল।আবার মেসেজ।

‘আবির আসলে তোমাকে ভালবাসে না।ও বাধ্য তোমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাই।তোমার মত মেয়ে আসলে আবির কে deserve করে না।‘

নিঝুম এর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।

আমি বাসায় ফিরলাম আজ রাত ৮ টায়।নিঝুম আজ আমার সাথে কথাই বলছে না।কি জানি হয়েছে ওর ঠিক বুঝতে পারছি না।আমার সাথে অর একটী gap তৈরী হচ্ছে।

-নিঝুম তোমার কি হয়েছে বলবে?

-কিছু না আবির।

-কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে।

-তোমার সাথে ফারিয়া এর দেখা হয়েছিল কক্সবাজার এ?

আমি চমকে উঠলাম।ফারিয়ার সাথে দেখা হয়েছে এ কথা আমার মনেই নেই নিঝুম কে বলতে।কিন্তু ও জানল কিভাবে?

-হা হয়েছিল।কিন্তু…

-তার মানে ওটা ফারিয়া

নিঝুম ঠান্ডা গলায় বললো।

-কোনটা ফারিয়া?

-তুমি আমাকে বল নি কেন আবির?

-আমার মনে ছিল না নিঝুম।তুমি কিভাবে জান?কি আশ্চর্য

-তুমি কি আমার সাথে বিয়েতে খুশি না?সত্যি করে বলবে.

-কি যা তা বলছ নিঝুম তুমি?ছি! এ কথা তুমি কিভাবে বললে?

-ফারিয়া আমাকে মেসেজ দেয় আমার ফেসবুক এ।

-What?No way,Faria is not that type girl!আমি ওকে চিনি ও কখনই তোমার আমার মাঝে আসবেনা।

নিঝুম আমাকে ওর মেসেজ গুলো দেখাল।আমি বুঝলাম না ফারিয়া আমন কেন করবে?’আজ আবির এর সাথে সময় কাটালাম।এত কিউট কেন তোমার জামাই?’ এই মেসেজ তা সেদিন এ দেওয়া যেদিন ফারিয়ার সাথে আমার দেখা হয়েছিল।ফারিয়া?এরকম ত ও না।প্রফাইল ভালভাবে চেক করলাম।কিছুই বের করতে পারলাম না।আমি নিঝুম কে বললাম-নিঝুম,Please believe me.I don’t want to hide anything from you.It was just a mistake.Only a mistake nothing else.I forgot to tell you.

আমি মেসেজ এর সময় গুলো দেখলাম।একটা জিনিশ ক্লিয়ার হলাম এটা ফারিয়া না।

-আবির,তুমি কিভাবে শিউর হলে যে এটা ফারিয়া না?

-কারন,মেসেজ তার টাইম দেখ।ফারিয়ার সাথে আমার যেদিন দেখা হয় তার আগের দিন রাতে তোমাকে এই মেসেজ টা দিয়েছে সে।এর আগে আমি বা ফারিয়া কেও এ জানতাম না যে আমরা কেও কক্সবাজার আছি।

-তাহলে এটা কে আবির?

-Do you have trust on me,nijhum?

-Yes.

-তাহলে আমার উপর বিশ্বাস রাখ।

-আমি করি তোমাকে।

-গুড

এই ঘটনার প্রায় ২সপ্তাহ কেটে গেলেও আমি উদ্ধার করতে পারলাম না এটা কে?এখন নিঝুম এর ফেসবুক এ মেসেজ আসে তার।নিঝুম এখন আর পাত্তা দেয় না।তবে আমার জানার ইচ্ছে হয় কে সে?

আজ আমার অফিস এর পিসি ঠিক মত কাজ করছে না।অথচ জরুরি একটা মেইল চেক করতে হবে।আমার পাশে রুমেই বসে তানিযা।অর পিসি থেকেই কাজ সারতে হবে বুঝলাম।ওর রুমে নক করতে দেখি ভেতরে কেও নেই।মাহবুব ভাই কে জিজ্ঞেশ করাতে জানলাম বস ডেকেছে তাকে।আরেকজনের পিসি একেতো না বলেও কাজ করা যায় না।কিন্তু আমাকে মেইল টা দ্রুত চেক করতে হবে।তানিযা কিছু মনে করবে না।আমি দ্রুত অর পিসি তে বসলাম।অপেরা মিনি মিনিমাইয করা।ফেসবুক অন।এখন ইয়াহ তে যেতে হলেও মিনিমাইয করা অপেরা তা লারয করতে হবে।আমি না করতে চেয়েও করলাম।অন করে যা দেখলাম তাতে আমি অবাক।নুযহাত তমা নামের সেই ID।নিঝুম আর তমার সমস্ত কনভারসেশান।তার মানে এতদিন তানিযাই নিঝুম কে এসব মেসেজ পাঠাত?তানিযা রুমে ঢুকে আমাকে অর পিসি তে বসতে দেখে কাঠ হয়ে গিয়েছে।ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।তানিযার কাছে জানতে চাই কেন সে আমন করেছে?

-আমি যখন নতুন আসি আপনার সাথে কথা বলে ভীষণ দূর্বল হয়ে যাই আপনার প্রতি।আমি জানতাম না আপনি বিবাহিত।তাই আপনারর সাথে এত কথা বলতাম।কক্সবাজার যাবার পথে ফেসবুক অন করে দেখি আপনারর রিলেশানশিপ status এ আপনি married with নিঝুম দেওয়া।আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল।আমার মনের ভেতর একটা খারাপ ইচ্ছে জাগে যে আপনারর সংসার ভেঙ্গে ফেলা।তাই আমি উনা কে অরকম মেসেজ দিতাম।আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি ভুল করেছি

আমি নিঝুম কে সব বলি।তানিযা এতদিন আমাকে নিয়ে লিখতো নিঝুমকে।ফারিয়ার সাথে হঠাত দেখা হয়ে যাওয়াতে কাকতালীয় ভাবে coxbazar এর দেয়া মেসেজটা মিলে গিয়েছিলো।সে আমাকে বিশ্বাস করে অনেক।তবুও জিজ্ঞেশ করি-তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার সাথে আমি খুশি নই?

-দেখ আবির,আমি তোমাকে নিয়ে অরকম কিছু ভাবি না।তবু ফারিয়ার কথা শুনে আমার খারাপ লাগছিল।কারন ফারিয়া ছিল তমার প্রথম ভালবাসা।প্রথম ভালবাসার অনুভুতি অন্যরকম হয়।আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাস।

-নিঝুম,সত্যি কথা বলতে আমার ফারিয়া কে নিয়ে কোন Regret নেই।হা সে ছিল একসময়।আমি খুশি ছিলাম তার সাথে

কিন্তু সময়ের সাথে আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি।ফারিয়া কে জে আমার মনে পরে না থিক তা না।মনে পরে কিন্তু আমি আসলে ভাবি না।তুমি সব এ জান আমার ফিলিংস এর কথা।তুমি আমার বর্তমান আর ভবিষ্যতও।তোমাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না।আমাদের এই journey এখন মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত চলবে।সেখানে কারো কোন বাধা নেই…

লেখক: Jenifar Karim



মন্তব্য চালু নেই