তিন মানদণ্ডে নতুন মুখ আসবে আ.লীগে

আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদসংখ্যা বাড়ায় আওয়ামী লীগের আগামী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রায় ডজন খানেক নতুন মুখ আসতে পারে। দলের সাংগঠনিক গতিশীলতার প্রয়োজনে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণ যেমন দরকার; তেমনি এর ঝুঁকির দিকটি মাথায় রাখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাই যোগ্য তরুণদের খুঁজে বের করতে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতাদের আমলনামা দেখছেন দলীয় হাইকমান্ড।

ক্ষমতাসীন দলটির সূত্র জানায়, এ জন্য দলের হাইকমান্ড তিনটি যোগ্যতা (ক্রাইটেরিয়া) সামনে রেখে সম্ভাব্য নতুন মুখ বাছাইয়ে হাত দিচ্ছে শিগগির। তিন যোগ্যতা হলো- রাজনৈতিক দক্ষতা, দলীয় আনুগত্য, পরিপক্বতা (ম্যাচিউরিটি)।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারণী এক নেতা বলেন, সাবেক ছাত্রনেতারাই ভবিষ্যতে দলকে নেতৃত্ব দেবে; তাই দলে জায়গা দিতে হবে তাদের। কিন্তু সব সাবেক ছাত্রনেতাকে একসঙ্গে দলে জায়গা দেয়া যাবে না।

ওই নেতা বলেন, ইতিমধ্যে পাইপলাইনে অনেক দক্ষ ছাত্রনেতা রয়েছেন, যাদের অনেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন।

এক-এগারোর সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের ক্রমান্বয়ে মূল রাজনীতিতে আনা হবে। এবার যদি ১০ জন আসে, আগামীতে এর সংখ্যা আরো বাড়বে।

সূত্র জানায়, অনেকেই দলীয় কর্মকা-ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন অতীতে। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে দক্ষতার পাশাপাশি দলীয় আনুগত্যও দেখা হবে। অনেকে অতীতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। দলে বিভাজন-গ্রুপিংয়ে জড়িত ছিলেন। এসব বিষয়ও উঠে আসবে। আবার অনেকে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এখন সম্মেলন সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। নিয়মিত দলীয় কার্যালয় ও দলের বিভিন্ন সভা-সেমিনারেও যোগ দিচ্ছেন। অনেকে এতটা নিষ্ক্রিয়ও ছিলেন যারা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসেও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাননি। কিন্তু এখন পদপ্রত্যাশী।

সূত্র জানায়, ত্যাগ ও দলীয় আনুগত্যের প্রশ্নেও অনেক ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু সর্বশেষ তাদের ম্যাচিউরিটি (পরিপক্বতা) দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন বিশ^নেতারা। বৈশ্বিক অনেক সমস্যা নিয়ে বিশ^নেতারা মতামতও নেন। তাই তার সঙ্গে দলীয় নীতিনির্ধারণের বৈঠকে বসার মতো পরিপক্বতাও থাকতে হবে নতুন নেতাদের।

সূত্র জানায়, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ এখনো আওয়ামী লীগকেই তাদের ভরসার জায়গা মনে করে। তাদের কথা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে। তাই এ ধাঁচের রাজনীতির জন্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে পরিপক্বতা দরকার। কিন্তু এমন অনেক সাবেক ছাত্রনেতা আছেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য পরিপক্ব নন।

ওই নেতা বলেন, দল ক্ষমতায় আসার পর অনেকে বিত্তশালী হয়েছেন। এসব খবর সারা দেশের ওয়াকিবহাল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানেন। তাদের ওপর আস্থা রাখবেন না অনেক প্রবীণ আওয়ামী লীগার।

এ ছাড়া দীর্ঘদিনের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে এমন নতুন মুখ খুঁজছে দলীয় হাইকমান্ড। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন ঠিকভাবে না হলে আবার দলীয় কর্মকা- পরিচালনায়ও ব্যাঘাত ঘটটার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়েই তিন যোগ্যতার মাপকাঠিতে কমিটিতে ডজন খানেক নেতাকে জায়গা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি দলের এক বৈঠকে সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কৌশলগত দিক থেকে যেটা দেখি সেটা হলো নতুন আইডিয়া। আমাদের ঐতিহ্য আছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে টেকনোলজি যুক্ত করব। এটা চলমান একটা ধারা। ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয়ে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনে নয়া নেতৃত্ব আসবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। প্রবীণের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এনার্জির (শক্তি) জন্য নতুন রক্ত সঞ্চালন হবে।’



মন্তব্য চালু নেই