তিনিই ছিলেন সেলফির জনক!

এ যুগে আমরা আমাদের আটপৌরে জীবনের খাওয়াদাওয়া, বেড়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুকেই যেন সবিস্তারে প্রকাশ করতে চাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তা সে ফেসবুক-টুইটারে একটা ‘স্ট্যাটাস’ দিয়েই হোক কিংবা একটা ছবি প্রকাশ করে। এ প্রবণতায় এখন সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে রাজত্ব করছে সেলফি। সাম্প্রতিক এ ধারণাটি দুনিয়ার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, দ্রুতই অভিধানেও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে তা। অক্সফোর্ড অভিধান সেলফিকে ‘২০১৩ সালের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অভিধানটিতে সেলফির অর্থ—‘এমন ছবি যা নিজে নিজে তোলা হয়েছে, সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামেরায় তোলা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা।’

কিন্তু কয়েক শ বছর আগের দুনিয়ার মানুষ কি ভুলেও এমন যুগের কথা ভেবেছিল? সাধারণ মানুষের ভাবনায় তা থাকুক বা না থাকুক চিত্রশিল্পীদের মধ্যে কেউ? আর কোনো চিত্রশিল্পী না জানলেও সম্ভবত ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী রেমব্রান্ট ফ্যান রিজিন সেলফি সম্পর্কে কিছু না কিছু জানতেন! আজ থেকে প্রায় চার শ বছরেরও বেশি আগে জন্মগ্রহণকারী রেমব্রান্ট মাত্র ৬৩ বছরের জীবনে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৮০টার মতো আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছিলেন!

১৬০৬ সালে এখনকার নেদারল্যান্ডসের লেইডেনে জন্মেছিলেন রেমব্রান্ট। নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে জীবন কাটে এই চিত্রশিল্পীর। জীবনীকারদের মতে, রেমব্রান্টের জীবনের নানা টানাপোড়েনের সাক্ষ্য হয়ে আছে জীবেনর বিভিন্ন পর্যায়ে আঁকা তাঁর আত্মপ্রতিকৃতিগুলো। হিসেবে কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও পেইন্টিং, প্রিন্ট ও ড্রইং মিলিয়ে রেমব্রান্টের আত্মপ্রতিকৃতির সংখ্যা তাঁর আঁকা মোট চিত্রকর্মের প্রায় ২০ ভাগ বলেও মনে করেন কেউ কেউ। শিল্পকলার ইতিহাসে এত বড়মাপের আর কোনো শিল্পীই এত বিপুল সংখ্যক আত্মপ্রতিকৃতি আর আঁকেননি। ইউরোপীয় চিত্রশিল্পের পুরোধা শিল্পী রেমব্রান্ট মারা যান ১৬৬৯ সালে।

শিল্প সমালোচকেরা রেমব্রান্টের আত্মপ্রতিকৃতিগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে থাকেন। প্রথম পর্যায়টি রেমব্রান্টের তরুণ বয়সের। এ সময়ে তিনি প্রতিকৃতিতে আলো-ছায়ার খেলা এবং নানা অভিব্যক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এসব প্রতিকৃতিতে তাঁর শিল্পীসত্ত্বার উন্মেষের তীব্রতা টের পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে রেমব্রান্টের ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি। এ সময়ে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং অভিজাত সাজে নিজের অবস্থান সম্পর্কে এক ‘সচেতন’ রেমব্রান্টকে দেখা যায়। দামি পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে অভিব্যক্তিতে শিল্পাঙ্গনের সফলতা এবং আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নতির বিষয়গুলোও যেন স্পষ্ট ফুটে আছে এসব ছবিতে। আর তৃতীয় পর্যায়টি শুরু হয়েছে প্রায় সাত বছরের বিরতি দিয়ে ১৬৫২ সালে। জীবনের শেষ পর্যায়ের এসব প্রতিকৃতিগুলোকে রেমব্রান্টের জীবনের আঁকা শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মগুলোর অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন অনেকেই। শিল্পী জীবনের পূর্ণতার পাশাপাশি এসব ছবিতে জীবনের নানা উপলব্ধিকে দারুণ জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রেমব্রান্ট।



মন্তব্য চালু নেই