তিতাসের জিয়ারকান্দিতে শত বছরের পুরানো কবরস্থানে জোরজবরদস্তিতে বসবাস

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামে শত বছরের পুরানো কবরস্থানে জোরজবরদস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে একটি পরিবার।

উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের মৃত আবিদ মোল্লার পুত্র মোঃ শহীদ মোল্লা (৫২) ওই কবরস্থানে প্রথমে ১ চালা চাউনিযুক্ত ১টি ছোট ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করলেও পর্যায়ক্রমে শহীদ মোল্লা ৪ চালা ঘর ও পরে পাকা ভিটিযুক্ত ঘর নিমার্ণের পাশাপাশি ভাউন্ডারি তৈরি করে জোরজবরদস্তি করে বসবাস করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

উক্ত ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে পান যে, মোঃ শহীদ মোল্লা স্বপরিবারে, কুমিল্লা জিলার অন্তর্গত গোপালপুর মৌজার জিয়ারকান্দি গ্রামে সি,এস, খতিয়ান নং ৯৪২, দাগ নং ৫৪৯২-এ উল্লেখিত কবরস্থান চিহ্নিত স্থানে, যার তিন দিক দিয়েই বেষ্টিত বহু কবর এবং বেশ কয়েকটি পাকা কবর বর্তমান কবরস্থানে পাকাপোক্ত ঘর-বাড়ি নিমার্ণ করে বসবাস করছেন।

এব্যাপারে জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। এই কবরস্থানে বহু মানুষের কবর রয়েছে। এটা এলাকার সবচেয়ে বড় কবরস্থান। এই কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। এখানে জোরপূর্বক কারো বসবাস কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবৈধ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অতঃপর তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাই’।

এলাকার প্রবীণ দলিল লেখক আব্দুল হালিম মোল্লা (৬৫) বলেন,‘ ব্রিটিশ আমল হতেই এই কবরস্থানটি নানা কারণে সুখ্যাতি অর্জন করে। এর মধ্যে অন্যতম, এই জায়গাটি তুলনামূলকভাবে বেশ উঁচু। বর্ষাকালে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে মৃতদের কবর দেওয়া হত। আমার দাদা ও বাবার কবরসহ বহু মুরব্বীদের কবর রয়েছে এই কবরস্থানে। আমরাও এই কবরস্থানে জায়গা দান করেছি। আমরা চাই, এই কবরস্থানের সুরক্ষা এবং অবৈধ দখলমুক্ত প্রাচীরে ঘেরা ও গাছগাছালির ছায়াময় সুন্দর পরিবেশ’।

স্থানীয় সমাজকর্মী মোঃ নাজিম উদ্দিন সরকার (৫৭) বলেন,‘ এই কবরস্থানে অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসা মৃতদের কবর দেওয়া হয়। আমাদের জন্মের বহু পূর্বে স্থানীযরা এই কবরস্থান তৈরি করেন। সম্প্রতি প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে মাটিও ভরাট করা হয়েছে কবরস্থানে। এই কবরস্থান কারো বসবাসের জন্য নয়, এই কবরস্থান মৃতদের কবর দেওযার জন্যই। আমরা এখানে কোনভাবেই কারো বসবাস মেনে নেবো না’।

জিয়ারকান্দি গ্রামের হাজী মোঃ আব্দীন প্রধান, মোঃ আনোয়ার হোসেন ও মোঃ আক্তার হোসেন বলেন,‘ এই কবরস্থান শুধু আমাদেরই নয়, এটি পুরো তিতাসবাসীর। এর পবিত্রতা রক্ষা এবং সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। অবৈধ দখলদার-বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ দৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।

এব্যাপারে অভিযুক্ত শহীদ মোল্লার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন,‘ ভাই, আমি গরীব মানুষ। আমার সহায়-সম্বল বলতে কিছু নেই। কোথাও গিয়ে জায়গা কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য আমার নেই’।



মন্তব্য চালু নেই