১০ বছর পর বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর

তিক্ততা দূরে রেখে উন্নয়ন প্রত্যাশা

আজ রোববার রাতে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। প্রায় ১০ বছর পর বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই ১০ বছরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয় পদ্মা সেতুর অর্থায়নকে কেন্দ্র করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে তিক্ততা শুরু হয়েছিল, তা এখন আর সেভাবে নেই। যেটুকু আছে, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের এই সফরের মাধ্যমে তা কেটে যাবে। তাঁদের মতে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। তাই পেছনের সমস্যা দূরে রেখে বাংলাদেশ চাইবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা। আর বিশ্বব্যাংক চাইবে এই উন্নয়নের অংশীদার হতে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গেলেও অবকাঠামো খাতে সংস্থাটির সহায়তার প্রয়োজন আছে। কেননা, অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বাস্তবায়ন সামর্থ্য খুবই দুর্বল। বাস্তবায়ন সামর্থ্য বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রশাসনিক যোগ্যতা কম। বিশেষ করে ইনস্টিটিউশনগুলোর সামর্থ্য বাড়েনি। এ বিষয়ে জোর দিতে হবে। ইনস্টিটিউশনগুলোর প্রশাসনিক যোগ্যতা না বাড়ালে কোনো তহবিলই আমরা সঠিকভাবে জনস্বার্থে ব্যবহার করতে পারব না। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমাদের বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা জরুরি।’

আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, পদ্মা সেতু নিয়ে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, বিশ্বব্যাংকপ্রধানের এই সফরের পর তা আর থাকবে না। তাঁর মতে, সামাজিক বিষয়গুলো, যেমন: স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষার উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের যে অন্তর্ভুক্তি এ দেশে আছে, তা বরাবরের মতোই থাকবে।

পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের আর তিক্ত সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক কাজী আলী তৌফিক। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের তিক্ত সম্পর্কের আর তেমন কিছু নেই। ওটা কেটে গেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। হতদরিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ “রোল মডেলে” পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এটাকেই তুলে ধরতে চায়।’

একই কথা জানালেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, যেসব দেশের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলো বিশ্বের সবার কাছে অনুকরণীয় হতে পারে, সেসব দেশে পরিদর্শনে যান বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। গত বছর তিনি গিয়েছিলেন ঘানাতে।

জাহিদ হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের যেভাবে জন্ম হয়েছিল, সে অবস্থার মধ্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনুকরণীয়। পরিসংখ্যানে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে দারিদ্র্যের যে হার বাংলাদেশে বলা হচ্ছে, বাস্তবে দারিদ্র্যের হার আরও কম। দুই দশকে বাংলাদেশে শুধু আয়ের প্রবৃদ্ধিই বাড়েনি, অন্যান্য ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এটাই এ সফরের কেন্দ্রবিন্দু। এটা থেকে অন্য দেশগুলো শিখতে পারবে।

এ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের করণীয় কী, তা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এখনো দুই কোটি হতদরিদ্র ও আরও দুই কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী আছে বাংলাদেশে, যা সংখ্যার দিক দিয়ে বিপুল। দুটো শ্রীলঙ্কার সমান। এটাকে কম ভাবলে চলবে না। অনেক অর্জন অর্জিত হলেও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বহুদূর যেতে হবে। এসব নিয়েই আলোচনা হবে।



মন্তব্য চালু নেই