তাহিরপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকরা দিশেহারা

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০টি হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মাঝে আবার মরার উপর খারার গাঁ শনি ও মাটিয়ান হাওরে শিলা বৃষ্টি এবং ঝড়ে কোটি টাকার বেশি ফসলের ক্ষতি হেেয়ছে। এর পরও হাজার হাজার কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় বাঁেধ এ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা যায় নি। বাঁধ রক্ষায় ফাঠল ও দেবে যাওয়া অংশে সংস্কারের কাজ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ হাওর পাড়ে কৃষকগন দিন-রাত। আর কষ্টের ফলানো সোনার ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঝড়ছে কৃষকের চোখের পানি।

উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে উৎপাদিত ২শ কোটি টাকার ফসলের উপর নির্ভর করেই জীবন জীবিকা চলে হাজার হাজার কৃষকের। কিন্তু এ বছর বাঁধ ভেঙ্গে ও কয়েক দফা শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের আঘাতে হাজার হাজার কৃষকের সোনার ফসল একে বারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আর এই ফসল ফলাতে কৃষকরা এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে নেওয়া ঋন নেওয়ায় পরিশোধ নিয়ে হতাশায় দিন পার করছে হাওর পাড়ের কৃষকরা।

অভিযোগ রয়েছে-গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এই উপজেলার ২৩টি হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ভাগ কাজও শেষ করে নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পিআইসিগন নিজেদের খেয়াল খুশি মত বাঁধের উপর থাকা গাছ-পালা কেটে পরিস্কার না করে,বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোন রকম দায় সারা ভাবে বাঁধ নির্মান করে। নিদির্ষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে,বস্তায় মাটি ভড়ে,বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ শুনে নি। এসব অনিয়মের কারনে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে বাঁধ গুলো ভেঙ্গে যায়।
জানাযায়-তাহিরপুর উপজেলার

সামসাগর,বেরবেড়িয়া,দশহালিয়া,লামগুল,কলমা,গলগলিয়া,উলান,কাইয়ারখাল,রাজনগর,নোয়াল হাওরের প্রায় ৮শত হেক্টর কাঁচা,আধা পাকা বোরো জমির ধান বাধঁ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া হাওরের কাচাঁ,আধা পাকা ধান এখন কাটছে কৃষকগন। উপজেলার হালি,মইয়ার হাওর,খরচার,বারাম হাওর,বোয়ালমারা,নাওটানা,মহালিয়া শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,নারিকেল তলা,বলদার হাওর,লালুয়া গোয়ালা বাঁধ,মেশিন বাড়ির বাঁধ,টাঙ্গুয়ার হাওর সহ বিভিন্ন হাওরের বাঁধ দেবে গেছে ও ফাঠল দেখা দিয়েছে আর সেই ফাটল দিয়ে অল্প অল্প করে পানি হাওরে প্রবেশ করছে।

সাদেক আলী,শোভন,উত্তম পুরকাস্ত,অপু তালুকদার সহ হাওর পাড়ের কৃষকগন জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি বালির বাঁধ বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করে কোটি কোটি টাকার কষ্টের সোনার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মাঝে আবার কয়েক দিনে শিলা বৃষ্টি,ঝড়ের আঘাতে যে জমিতে ২০মন ধান হত সেখানে ৩-৪মন ধান পাব সব শেষ। এই ফসল ফলাতে আমরা বিভিন্ন এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ঋন নিয়েছি কিভাবে ঋন পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান-হাওরের বাঁধ গুলো খুবেই যুকিপূর্ন অবস্থায় ছিল এবং এখনও আছে। বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে ও কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। এ বছর উপজেলায় ১৮৩০০হেক্টর ধান চাষ করা হয়েছে। বাধঁ ভেঙ্গে ৮০০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে সাড়ে ১২হাজার হেক্টর অক্রান্ত হয়েছে। হাওরের আগাম বন্যা আসতে পারে তাই কৃষকদের বোরো ধান ৮০ভাগ পাকলেই সেই ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি বিভিন্ন এনজিও,শিক্ষক ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় ।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি,সঠিক ভাবে বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে হাওরের প্রতিটি বাঁধ খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় এখনও আছে। বাঁধ রক্ষায় আমি সর্বক্ষনেই হাওরে অবস্থান করছি। প্রাকৃতিক দূর্যোগের উপর কারো হাত নেই এবার শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে শনি হাওর ও মাটিয়ান হাওরে হাওরের অর্ধেকের বেশি ক্ষতি হয়েছে তা খুব দুঃখ জনক। তবে বাঁধ নির্মান অনিয়মকারীদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান-হাওরের প্রতিটি বাঁধ ঝকিঁপূর্ন যেখানে সমস্যা মনে হয়েছে বাঁধ রক্ষায় আমি নিজে সহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,ওসি সাহেব সকলকে নিয়ে কাজ করেছি আমার সব অফিসিয়াল কাজ বাধ দিয়ে। গত কয়েক দিনে শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।

জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন-আমি নিজে বিভিন্ন হাওরের বাঁধ রক্ষা জন্য এলাকাবাসী কে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবার শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে ফসলেন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর যারা বাঁধ নির্মানে অনিয়ম করছেন তাদের বিরোদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই