তারেক রহমানকে ফেরাতে সহায়তা করবে না যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র নেতা তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

যুক্তরাজ্য সরকারের কূটনীতিক অংশের একটি সূত্র  জানিয়েছে, বাংলাদেশের চলামান পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেই দেশটি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করবে। এর আগে এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের একাধিক কূটনীতিক এবং বাংলাদেশের একাধিক সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলাপ করে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কেউই এ বিষয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের লাইব্রেরি থেকে গত ২১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট : অগ্রগতি প্রতিবেদন জানুয়ারি, ২০১৫’ শীর্ষক একটি নোট প্রকাশ করেছে। ওই নোটে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই দুই নেতাকে ‘ঝগড়াটে মহিলা’ (বেটলিং বেগম) বলে মন্তব্য করে বলা হয়, বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সহযোগিতার হাত উঠিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের কাছে তারেক রহমান বিষয়ে একাধিকবার জানতে চাইলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এলান ডানকান এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় আন্ডার সেক্রেটারি লিন ফেদারস্টোন, এমপি গত বছর বাংলাদেশ সফর করেন। তাদের কাছে তখন তারেক রহমান সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউই কোনো মন্তব্য করেননি।

বাংলাদেশের একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং বঙ্গবন্ধু ভক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘কূটনীতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া চিঠির কারণে তারেক রহমানের যুক্তরাজ্যে বসবাস করার প্রক্রিয়া আরো শক্ত হলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সম্পর্কে নিন্দা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ও ফোরাম বিবৃতি দিয়েছে। তারেক রহমান এখন যুক্তরাজ্য সরকারকে এসব বিবৃতির বিষয় উল্লেখ করে নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকারের কথা জানাবেন। যুক্তরাজ্য সরকার যখন দেখবে যে, নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ ও নিরীহ জনগণের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে, তখন তারা তারেক রহমানকে ফেরানোর বিষয়ে সরকারকে সহায়তা করবে না।’

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ৮০’র দশকে যখন কর্নেল (অব.) এম এ তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়, তখন নিরাপত্তার অভাবে জাসদের নেতা আ স ম রব জার্মানিতে আশ্রয় নেন। শুধু আ স ম রবই নন জাসদের অনেক নেতাই তখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে জার্মান সরকারের আশ্রয় লাভ করেন। ওই সময়ে বাংলাদেশের সরকারও তাদের ফেরত আনতে জার্মানির সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ে দেশে রাজনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না থাকায় জার্মানি বাংলাদেশ সরকারকে কোনো সহায়তা করেনি।

তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘তারেক রহমানকে ফেরত আনতে, সহায়তা চেয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রীকে পাঠানো চিঠি, তার হাতে পৌঁছেছে। আমরা আশাবাদী যে, অতি দ্রুত তাকে বাংলাদেশে আনতে পারব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘চিঠিতে বলেছি যে, তারেক রহমান ২০০৮ সালে বিভিন্ন মামলায় জামিনে থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য মুচলেকা দিয়ে যুক্তরাজ্য যান। এরপর থেকে তিনি সপরিবারে সেখানে বসবাস করছেন। আইনের চোখে তিনি একজন পলাতক আসামি।’

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তিনি জাতির জনককে ব্যঙ্গ করে এবং ইতিহাস বিকৃতি করে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারেক রহমান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালে হত্যার চেষ্টা করেন। হত্যা চেষ্টার মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই