তারানকো-বিসওয়ালের আলোচনায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বৈঠকে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বুধবার বিকালে ওয়াশিংটনে বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠক হয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক সহকারী মহাসচিব তারানকোর, যিনি গত বছর নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য ঢাকা এসেছিলেন।

বিসওয়াল-তারানকোর বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

এক ই-মেইল বার্তায় একটি প্রভাবশালী অনলাইন নিউজ পোর্টালকে তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়াসহ বৃহত্তর অঞ্চলের নানা ইস্যুতে নিয়মিত আলোচনার অংশ হিসেবে বুধবার জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সঙ্গে তিনি (বিসওয়াল) বৈঠক করেন।
“আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানান।”
বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর ওপর তারা গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা।

এদিকে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিকও ওই বৈঠক নিয়ে কথা বলেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে কর্মরত সহকারী মহাসচিব তারানকো বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

“এ কারণেই তিনি বিভিন্ন মহলে কথা বলছেন। কারণ মহাসচিব সবসময়ই বাংলাদেশের স্থিতি ও উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
আগের দিন প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক পরিচয় দানকারী এক প্রবাসী বিএনপি নেতার প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধে নাশকতায় প্রাণহানিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন ডুজারিক।

সে সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন,“মহাসচিব বান কি মুন সাবেক সহকারী মহাসচিব (রাজনীতি বিষয়ক) অস্কার ফারনান্দেজ-তারানকোকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি তা করছেন।”

হরতাল-অবরোধে নাশকতায় প্রাণহানির নিন্দা জানিয়ে ডুজারিক বলেন, “আমরা নিরীহ মানুষের জীবননাশের নিন্দা অব্যাহত রেখেছি।চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান আমাদের প্রত্যাশা।”

এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করা এবং দুদিন ধরে তাকে ‘খাবার সরবরাহে বাধা’ দেওয়ার অভিযোগ করে এ বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া জানতে চান।

জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব উদ্বিগ্ন এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।

“এ প্রেক্ষাপটেই তার (মহাসচিব) সহকারী তারানকো পরিস্থিতি গভীরভাবে অনুসরণ করছেন।”
গত সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত দপ্তরের দায়িত্বে আছেন তারানকো। এর আগে তিনি জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক দপ্তরের সহকারী মহাসচিব থাকাকালে তাকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব হয়।

গত সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে ২০১২ ও ২০১৩ সালে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হয়ে তিন দফায় ঢাকা এসেছিলেন তারানকো।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিন দিনের সফরে এসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর দুই দলের নেতাদের আলোচনার টেবিলে এনেছিলেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা ছাড়াই সে সময় ঢাকা ছাড়েন তিনি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তার দেশের পক্ষে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চল দেখভালের দায়িত্বে আছেন।



মন্তব্য চালু নেই