তামাকের ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন হবে

বাংলাদেশে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সম্মেলনে গৃহীত ‘ঢাকা ঘোষণা’কে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থনও জানান তিনি।

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী সম্মেলন ঢাকা ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়েছে।

আইপিইউয়ের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, শ্রীলংকার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পিকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, ভুটানের জাতীয় সংসদ সংগুর স্পিকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের মজলিসের স্পিকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তামাকের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রথম পদক্ষেপে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহন করা হবে। এর উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং একইসঙ্গে সরকারের আয় বৃদ্ধি করা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন ও সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তামাকজনিত রোগ বালাই এবং অসংক্রমক রোগের প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের এবং এর বাইরে সংসদকে তৎপর হতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। একইভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ থাকবে অগ্রণী ভূমিকায়। এই পথযাত্রায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের উচ্চাভিলাষী ২০৩০ (এসডিজি ২০১৬-২০৩০) এজেন্ডা গ্রহন করেছে বাংলাদেশ। এমডিজি বাস্তবায়নের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এমডিজির সাফল্যের ওপর ভর করে এসডিজি বাস্তবায়নে প্রস্তত হচ্ছে। এজন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। এমডিজি পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে অতিদরিদ্রের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। শহর ও গ্রামীণ দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মত মৌলিক বিষয়ে সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে সংসদের গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসডিজির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনের আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা সত্বেও গত ৭ বছর ধরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর ছিল। গত এক দশকে রফতানি আয় ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণের কাছাকাছি। বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে ২০১২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এরপর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এভাবেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।



মন্তব্য চালু নেই