তরুণীদের পছন্দের নায়করা

তরুণ–তরুণীদের পছন্দের তারকা থাকে সব সময়ই। গান, খেলা কিংবা অভিনয়জগতের হতে পারেন সেই তারকা। পছন্দের তারকা হয়ে যান নিজের পছন্দের নায়ক কিংবা নায়িকা। এঁরা তাদের ‘ড্রিমবয়’ বা ‘ড্রিমগার্ল’। এই সময়ের তরুণীদের পছন্দের ‘নায়ক’ কারা, তা জানার চেষ্টা করেছি আমরা। ঢাকার ৩০ জন তরুণীর সঙ্গে মুঠোফোন এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে জানা হয়েছে তাদের পছন্দের তারকার কথা। এই তরুণীদের সবাই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এ প্রতিবেদন। পরবর্তী কোনো সংখ্যায় আমরা জানার চেষ্টার করব তরুণদের পছন্দের কথা।

একসময় ভক্তরা তাদের স্বপ্নের নায়ক বা নায়িকার একখানা ছবি পেতে পত্রিকা, ম্যাগাজিনের জন্য অপেক্ষা করতেন। প্রিয় তারকার একখানা পোস্টার জোগাড় করাটাও ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। এখন তারকাদের সঙ্গে স্রেফ এক ‘ক্লিক’ দূরত্ব। ঘরের দেয়ালে নয়, এ যুগের ভক্তরা ফেসবুকের কাভার ফটোতে টাঙিয়ে রাখেন পছন্দের নায়কের ছবি। খাম-ডাকটিকিটের ঝামেলা নেই, চাইলে ইনবক্সেই চিঠি পাঠানো যায়। হরদম ছবি দেখতে ইনস্টাগ্রাম তো আছেই!

নায়ক, গায়ক, ক্রিকেটার, নাকি মডেল? কোন তারকারা এই সময়ের তরুণীদের হৃদয়ে কাঁপন তোলেন? কাদের নিয়ে অনলাইনে লিখতে গিয়ে এ সময়ের মেয়েরা ইমোটিকন জুড়ে দেন? স্বপ্নের নায়কদের ঘিরে তাদের ভাবনা, কল্পনা, পাগলামিগুলোই বা কেমন? কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।

তরুণীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পাওয়া গেল বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তারকার নাম। গায়ক অর্ণবে ‘ডুব’ দিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার অপেক্ষায় আছেন, ‘কবে’ দেখা হবে নেমেসিস ব্যান্ডের জোহাদের সঙ্গে। অভিনেতা আরিফিন শুভ অনেকের মন ছুঁয়েছেন। একটা সময় ছিল, যখন অভিনয় বা সংগীতজগতের তারকাই বেশি ছিলেন পছন্দের তালিকায়। খেলোয়াড় বলতে ভিনদেশি কেউ। তবে এখন ‘ড্রিমবয়’ তালিকায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেশ।

তরুণীদের সঙ্গে এই আলাপ করতে গিয়ে সবকিছু ছাপিয়ে বেশি উচ্চারিত হলো যার নাম, তিনি গায়ক–অভিনেতা তাহসান! এখন শোনা যাক পছন্দের তারকাদের নিয়ে তরুণীদের কথা। ‘তাহসানের কোনো নাটক দেখিনি এমন হয়নি। সময় পেলে ইউটিউবেও তার নাটকগুলো বারবার দেখি’—বললেন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের এক ছাত্রী। ক্রিকেটার সাব্বির রহমানের ভয়-ডরহীন সবুজ চোখ বিপক্ষ দলের বোলারদের বুকে কাঁপন তুলুক বা না তুলুক, একজনের ভেতরে ঠিকই তোলপাড় বইয়ে দেয়।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া। ‘বিপিএলের সময় বরিশাল বার্নার্সের একটা খেলার আগে তাকে দেখেছিলাম। সেই থেকে ক্রাশ খেয়েছি! তাকে দেখলে আমি মনে মনে নব্বইয়ের দশকের প্রেমের গান শুনতে পাই, সঙ্গে স্লো মোশনের স্বপ্ন দেখি!’ হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘আমাকে এখন সবাই সাব্বির রহমানকে নিয়ে খ্যাপায়।

আব্বুও! বলে, কিরে, তোর সাব্বির তো চার মেরেই আউট হয়ে গেল!’ আরেক তরুণ ক্রিকেটার তাসকিনের ভক্তসংখ্যাও কম নয়। কলেজপড়ুয়া এক ভক্তকে পাওয়া গেল, তাসকিনের ইনজুরির খবর পেয়ে তার মন ভীষণ খারাপ। প্রতিদিন পত্রিকা খুলেই আগে দেখেন তাসকিনের সুস্থতার কোনো খবর আছে কি না।

শুধু দেশের ক্রিকেটাররাই নন, বিদেশি খেলোয়াড়দের পাগলাটে ভক্তও আছেন কেউ কেউ। স্প্যানিশ ফুটবলার ফ্যাব্রিগেস নিশ্চয়ই জানেন না, প্রতিবছর তার জন্মদিনে বাংলাদেশের এক তরুণী নিজের হাতে কেক তৈরি করেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সামিরা বলছিলেন, ‘বন্ধুদের নিয়ে আমি তার জন্মদিন উদ্যাপন করি। দেশের বাইরে থেকে ফ্যাব্রিগেসের জার্সি আনিয়েছি। যখন সে বার্সেলোনাতে খেলত, তখন একবার স্পেনেও যেতে চেয়েছিলাম।’ ফ্যাব্রিগেস ছাড়াও এখনকার তরুণীদের ভিনদেশি স্বপ্নের নায়কদের তালিকা বেশ লম্বা। ফারিয়া বিনতে জামান যেমন ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস তারকা পল ওয়াকারের ভক্ত। বড় পর্দায় ফিউরিয়াস সেভেন দেখেছেন ১৩ বার, প্রতিবারই হল থেকে বেরিয়েছেন চোখ মুছতে মুছতে।

এ ছাড়া তরুণীদের পছন্দের তালিকায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসন, টম ক্রুজ, সাবেক ওয়ান ডিরেকশন তারকা জায়ান মালিক, ভারতীয় নায়ক রণবীর কাপুরসহ অনেকেই।

স্বপ্নের নায়ককে নিয়ে মাতামাতি থাকবেই। মুশকিল হলো, কেউ কেউ স্বপ্নে বুঁদ হয়ে বাস্তবকে তুচ্ছ করে ফেলেন। মনোবিদরা মনে করেন, ভক্ত হতে গিয়ে কেউ যেন অন্ধভক্ত হয়ে না যায়।

চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর পর আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। অতি আবেগে ভেসে অনেক তরুণী নিজেকেই হারিয়ে ফেলেন। বাড়াবাড়ির দিক থেকে বাইরের দেশে সবচেয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত জাস্টিন বিবারভক্তরা। এই তো কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এই গায়কের এক তরুণী ভক্ত মাথার একপাশের চুল কেটে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছেন। কারণ? বিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় তার একপাশের চুলগুলো নাকি বিবারের কাঁধ ছুঁয়ে গিয়েছিল! আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখে আজকের তরুণ–তরুণীরা কোনো তারকার ভক্ত হবেন—এমনটাই আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

* প্রতিবেদনে যাদের মতামত দেওয়া হয়েছে, তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে

‘ব্যক্তিগত জীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’
আহমেদ হেলাল
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
তারকাদের ভক্তরা তাদের অনুসরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। খেয়াল রাখতে হবে, ফ্যান (ভক্ত) হতে গিয়ে কেউ যেন ফ্যানাটিক (অন্ধভক্ত) হয়ে না যায়। যখন দেখব, কারও প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণের কারণে আমার ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আমি নিজের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষতি করব না। আবার আমি যার ভক্ত, তার সামাজিক জীবনেও ব্যাঘাত ঘটাব না। তারকাদেরও এ ক্ষেত্রে কিছুটা দায়িত্ব নিতে হবে।-প্রথমআলো



মন্তব্য চালু নেই