ঢাবির ৮৬ শিক্ষার্থীর ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করায় ৮৬ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলা অনুষদের পক্ষ থেকে কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন বিভাগের মোট ৮৬ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ক্যাটাগরি তিনটি হলো- ডিনস মেরিট লিস্ট অব এক্সিল্যান্স, ডিনস মেরিট লিস্ট অব অনার এবং ডিনস মেরিট লিস্ট অব একাডেমিক রিকগনিশন।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যাদের সিজিপিএ ৪.০০ রয়েছে তারা ডিনস অব মেরিট লিস্ট অব এক্সিল্যান্স ক্যাটাগরিতে, যাদের সিজিপিএ ৩.৮৫ অথবা এর ওপরে রয়েছে তারা ডিনস মেরিট লিস্ট অব অনার ক্যাটাগরিতে এবং যাদের সিজিপিএ ৩.৬৫ অথবা এর ওপরে রয়েছে তারা ডিনস মেরিট লিস্ট অব একাডেমিক রিকগনিশন ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ৮৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে আরবি বিভাগ থেকে। এ বিভাগ থেকে মোট ১৩ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। এ ক্ষেত্রে ১০ জন শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।

এ ছাড়া বাংলা বিভাগের তিনজন, ইংরেজি বিভাগের চারজন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পাঁচজন, উর্দু বিভাগের পাঁচজন, সংস্কৃত বিভাগের চারজন, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের একজন, ইতিহাস বিভাগের সাতজন, দর্শন বিভাগের সাতজন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নয়জন, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের চারজন, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের দুজন, সংগীত বিভাগের পাঁচজন, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চারজন এবং বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চারজন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন।

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, প্রত্যেক মানুষের মাঝে ভালো কিছু করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষা মানুষের এই সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি এই সম্ভাবনার যথাযথ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গঠনে কাজ করার জন্য শিক্ষিত সমাজ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপাচার্য সকল সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উদারতা প্রদর্শনের মাধ্যমেই শিক্ষার আসল লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিহার করতে হবে। জ্ঞানের আলোয় নিজেদের আলোকিত হতে হবে এবং সমাজ ও পৃথিবীতে সেই আলো ছড়িয়ে দিতে হবে।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে গৌবরময় ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ গৌরবের কথা শুনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ম্লান হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোমাদেরকে সমাজ পরির্বতনের অগ্রগামী হিসেবে দেখতে চাই। যেভাবে অতীতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রগামী হিসেবে দেখেছি।’

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন।

এ ছাড়া, কলা অনুষদের প্রাক্তন ডিন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কে এম মোহসীন, অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. তৌফিকুল হায়দার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শরিফ উল্লাহ ভূঁইয়া।

বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বিভাগের অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম উপস্থাপন করেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিসেস ফারহানাজ রব্বানী অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই