ঢাকা-হাতিয়া-মনপুরা-চরফ্যাশন রুটের লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ

ফজলে আলম, ভোলা প্রতিনিধি॥ বিগত তিন দশক ধরে ঢাকা-ভোলা-দৌলতখান- মনপুরা-হাতিয়া-চরফ্যাশন-বেতুয়া নৌ-রুটের কয়েক লক্ষ যাত্রী সাধারণ জিম্মি হয়ে আছে। ওই রুটে একক লঞ্চ সার্ভিস চালানোর কারণে বছরের পর বছর যাত্রীরা জুলুম-শোষন-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। খেয়াল খুশিমতো ভাড়া আদায়, যাত্রীদের মারধরসহ নানান অভিযোগ রয়েছে টিপু লঞ্চ কোম্পানির মালিক, স্টাফ ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তাদের বেপরোয়া আচরণের মূলে ওই কোম্পানির মালিকের সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের মুখে মুখে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা ভোলা হাতিয়া ও মনপুরার মানুষ প্রতিনিয়ত জীবন জীবিকার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেচেঁ আছে। কারও ব্যবসা, কারও চাকুরী, কেউ বা আবার দিনমজুরি করতে উপকূল ছেড়ে পাড়ি জমান ঢাকা কিংবা দূরের কোন শহরে। কিন্তু কাংঙ্খিত গন্তব্যে পৌছানোর আগেই টিপু লঞ্চ মালিক ও স্টাফদের হাতে নানামুখি অত্যাচার ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। নানান ভাবে নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের। বিভিন্ন ঘাট ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে এমভি টিপু লঞ্চ মালিকের একক রাজত্বের অজানা কথা।এই রুটে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে টিপু কোম্পানির মালিকানাধীন মাত্র একটি জলযান। তবে তিনি আরও কয়েকটি কোম্পানির লঞ্চ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে টিপুর কড়াল গ্রাস থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ পাচ্ছে না উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষ। তার কথাই শেষ কথা। এক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোন অন্যায় অনিয়মের প্রতিকার করছেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জলপথের যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রেখেছে এমভি টিপু লঞ্চ মালিক পক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময়ে এসব রুটে নতুন নতুন কোম্পানির লঞ্চ নামানোর প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া গেলেও মেসার্স ফারহান নেভিগেশন কোম্পানি, মেসার্স আগরপুল নেভিগেশন এন্ড কোম্পানি, মেসার্স পানামা সিপিং লাইন্স, মেসার্স হাবিবা নেভিগেশন এন্ড কোম্পানির জাহাজ ছাড়া অন্য কোম্পানির লঞ্চ এ রুটে পার্মিট পায়নি। না পাওয়ার পিছনে রয়েছে টিপু কোম্পানির ক্ষমতার দাপট ও অনৈতিক প্রভাব। অভিযোগ রয়েছে, গোলাম কিবরিয়া টিপু ভোলার এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। টিপুর দৌরাত্ম্যের কাছে অন্য কোন কোম্পানি রুট পারমিট না পাওয়ায় একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ এমভি টিপু লঞ্চের মালিক গোলম কিবরিয়া টিপুর কাছে জিম্মি হয়ে আছে।

এসব বিষয়ে অনেক যাত্রী প্রতিবাদ করতে গিয়ে পঙ্গু জীবন জাপন এমনকি মিথ্যা মামলায় জেলও খেটেছেন। আবার অনেক যাত্রীকে নদীতে নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার হেলাল উদ্দিন নামের একযাত্রীকে গোলাম রহমান টিপু গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে। তিনি এখন ঢাকায় গুলশানে ভিক্ষা করছেন। টিপু কোম্পানির সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন কিংবা স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। ওই কোম্পানির মালিক এককালে সংসদ সদস্য ছিল। সেই সুবাধে বিভিন্ন সময় অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন প্রতিবাদী যাত্রীদের উপর। ৮০ দশকের বহুল আলোচিত জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা তিব্বত হত্যার অন্যতম আসামী। সেই গোলাম কিবরিয়া টিপু এখন উপকূলীয় লঞ্চ যাত্রীদের কাছে মূর্তিমান আতংক।

এদিকে ওই নৌ-রুটে যাতে অন্য কেউ বে ক্রসিং-এর অনুমতি না নিতে পারে তার জন্য বেশ ক’বছর আগে ঢাকার আদালতে মামলাও করেছিলেন টিপু। ওই মামলা খারিজও হয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটি এ’র দূর্নীতিবাজ কিছু অসাধু কর্মকর্তার খামখেয়ালীপনার কারণে অন্য কেউ জাহাজ চালানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এক মালিকের একক আধিপত্যের কারণেই ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া ও চরফ্যাশন রুটে দৈনিক মাত্র একটি লঞ্চ তার ইচ্ছেমতো যাতায়াত করে। নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার লাখ-লাখ মানুষের জন্য যাতায়াতের মাধ্যম মাত্র একটি লঞ্চ।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, হাতিয়া মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশনসহ আরো কিছু রুটে চলে গোলাম কিবরিয়া টিপুর লঞ্চ। আসা-যাওয়ার নেই কোন টাইম টেবিল। গন্তব্যে পৌছাতে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতীক্ষা করতে হয় সাগর পাড়ের মানুষকে। মাঝে মধ্যে কোন ধরণের ঘোষণা ছাড়াই যাত্রা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। ফলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। অন্যদিকে বিআই ডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। তারা গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নতুন লঞ্চ নামানোর অনুমতি না দিয়ে নানান তালবাহানা করছে। অথচ টিপু কোম্পানির লঞ্চের তুলনায় অন্যান্যরা অরো বড়, নিরাপদ, বৈরী আবহাওয়ায় চলাচলের উপযোগী জাহাজ বানিয়ে পরিচালনার জন্য বিআইডাব্লিউটিএ অধিদপ্তরে গিয়ে উল্লেখিত রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি পান নি। তবে অন্যান্য কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানান, দেশের নৌপথে সরকার জাহাজ তৈরীর প্লান দেয়। সরকার অনুমোদিত প্লান এর বিপরীতে লগ্নি করে ব্যাংক। অথচ বিআইডাব্লিউটিএর অফিসারদের লোভের কারণে ব্যবসায়িরা ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তাই টিপু লঞ্চের জিম্মিদসা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভূক্তভোগীরা দক্ষিণাঞ্চলের এসব রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ঈদের আগেই দ্রুত নতুন লঞ্চ নামানোর দাবী জানান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আমার লঞ্চ স্টাফদের কাছে কোন যাত্রী হয়রানির মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এমন কি আমার কাছে কোন যাত্রীই জিম্মি নয়। সরকারের নিয়ম মেনেই আমি লঞ্চ পরিচালনা করছি।



মন্তব্য চালু নেই