ঢাকা উত্তর মেয়র প্রার্থী ফজলে বারী মাসউদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৫-এ সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর নির্বাচনী ইশতেহার…

সম্মানিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনবাসী,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্,
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আমাদের প্রিয় ও গর্বের শহর। ঢাকা শহরের রয়েছে এক বিশাল ঐতিহ্য এবং গৌরবময় ইতিহাস। প্রায় চারশত বছর পূর্বে মোগল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপিত হয়েছিল। অনেক ঘটনা বহুল উত্থান-পতনের পর ঢাকা এখন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজধানী। দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৪ বছর। ৪৪ বছরের মধ্যে ঢাকা সিটিতে অনেক চেয়ারম্যান, প্রশাসক ও মেয়রগণ আসীন ছিলেন। বিভিন্ন উন্নয়ন ও কাম্যমানের নাগরিক সুবিধা প্রদানের কথা বলে ঢাকা সিটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সরকার নিয়োগ দিয়েছেন জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে দু’জন সরকারী কর্মকর্তাকে।

নাগরিকগণ একান্ত আশাবাদী ছিলেন, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাগণ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তিতে সিটি কর্পোরেশনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে, কিন্তু সে আশা দূরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্বাচিত মেয়রগণ সিটির উন্নয়নের জন্য, সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য বারংবার সিটির জনগণের সাথে মুখরোচক বহু ওয়াদা দিয়েছেন। কেউ ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ওয়াদা করেছেন, কেউবা মেগাসিটিতে উন্নীত করার কথা বলেছেন। কেউ আবার বিশ্বমানের মহানগরী গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কেউ আধুনিক ডিজিটাল মহানগরী গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

প্রিয় মহানগরবাসী,
আমরা দেখতে পাই বিগত মেয়রগনের দেয়া সকল ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি, দেখানো সকল স্বপ্ন ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বূলিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা আজ বসবাসের অনুপোযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বের নোংরা ও পরিবেশ দূষণ সিটিগুলোর তালিকায় ঢাকা সিটির নাম উঠেছে। ঢাকা সিটিতে বসবাসরত অনেকের মুখে আক্ষেপ ও দু:খের কথা শুনা যায়। তাঁরা বলেন, চাকুরী বা ব্যবসা না থাকলে ঢাকায় থাকতাম না। বাধ্য হয়েই ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। মনে চায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। ঢাকায় থাকতে আর মনে চায় না। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে শত অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, ঢাকায় জনদূর্ভোগ খুব মারাত্মক, স্বাস্থ্য টিকে না। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ, যানজট, ধুলা-বালু, বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সঙ্কট, অপ্রতুল পানি সরবরাহ, অনেক সময় সাপ্লাইকৃত পানি মুখে নেয়া যায় না, নিত্য ব্যবহার্য কাজ-কর্মে পানি ব্যবহার করা যায় না, পানি দিয়ে দূর্গন্ধ আসে, রোগ-ব্যাধির আধিক্য, ঠিকমত গ্যাস সরবরাহ থাকে না এছাড়া জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, খাবারে মারাত্মক ভেজাল, হাইজ্যাক-ছিনতাই, মাদকদ্রব্যের অবাধ ছড়াছড়ি, জান-মালের নিরাপত্তার মারাত্মক হুমকী, শিক্ষার পরিবেশ সঙ্কট, যানজটের কারণে কোন কাজই ঠিকভাবে করা যায় না, গন্তব্যে ঠিক মত পৌঁছা যায় না। এছাড়াও মানব জীবনে হতাশা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা নিত্য নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বাহির থেকে কোন ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে কাজে আসলে পরিবেশগত কারণে যথাসম্ভব ঢাকা থেকে দ্রুত চলে যান। এ হলো ঢাকা সিটির বাস্তব বেদনাময় করুন আংশিক চিত্র।

প্রিয় সিটি কর্পোরেশনবাসী,
ঢাকা আজ বসবাসের পরিবেশ হারিয়ে যেতে চলেছে, ঢাকার জৌলুস ও ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকীর মুখে। এ চরম দূরাবস্থার কারণ এবং এর সমাধান আমাদের উদঘাটন করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট হওয়া সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশনে কাংখিত মানের উন্নয়ন হল না কেন? বসবাসোপযোগী ঢাকা কেন হল না। কাম্যমনের নাগরিক সুবিধা কেন নিশ্চিত হল না? এ জিজ্ঞাসা সকল নাগরিকের। বারংবার মূখরোচক স্লোগানের ধোঁকায় আমরা আর কতবার নিপতিত হব। এত্থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।

প্রিয় সিটিবাসী,
ঢাকা নগরীর দুরাবস্থার জন্য কারা দায়ী; এ গোষ্ঠিকে চিহ্নিত করতে হবে, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ঢাকা সিটির উন্নয়নের পথে, অগ্রযাত্রার পথে যারা বারবার ছোবল মারে তাদেরকে ভোটের মাধ্যমে বয়কট করতে হবে। ঢাকা সিটির এ দূরাবস্থার জন্য মূল কারণ হল- দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, অপরিকল্পিত কর্মকান্ড ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ক্ষমতাসীন দলের অশুভ প্রভাব-প্রতিপত্তি। এ কারণে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড টেকসই হয় না। সিটি কর্পোরেশন আজ একটি অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠির সিন্ডিকেটে পরিনত হয়েছে। তা না হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সিটির এ করুন দশা হতে পারে না। এ সিন্ডিকেটের কারনেই ঢাকা সিটি আজ বিশ্বের অন্যতম মানব বসবাসের অনুপযোগী সিটিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য সিটির তুলনায় ঢাকা সিটির পরিবেশ দুষণের সূচক অনেক উর্ধে। ঐতিহ্যবাহী-গৌরবময় ঢাকা আজ অনেকটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

প্রিয় নগরবাসী,
আপনারা যদি সুস্থ পরিবেশে বাঁচতে চান, শান্তি-সুখে থাকতে চান, তাহলে এ অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাংতে হবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব-দৌরাত্ম থেকে ঢাকা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসোপযোগী শান্তির নগরীতে পরিনত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের।

প্রিয় ঢাকাবাসী,
সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে এর অনেক তিক্ত মাশূল আমাদের দিতে হবে। নতুন প্রজন্ম অনেক হুমকীর মুখে পড়বে। জনজীবনে আরো মারাত্মক অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসবে। জনজীবন যে কতো দূর্বিসহ হয়ে ওঠবে যা কল্পনাও করা যায় না। কোন বুদ্ধিমান এক গর্তে দু;বার পড়ে না; অর্থাৎ কোন বুদ্ধিমান একই ভূল দ’বার করে না। এ দূরাবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য এদেশের শান্তিকামী ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ‘সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন’। সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন এবং আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আমি শেখ ফজলে বারী মাসউদ মেয়র পদে কমলালেবু মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।

প্রিয় সিটিবাসী,
আমাদের সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে, পরিবর্তন ঘটাতে হবে সিটির সমগ্র কর্মকান্ডে, পরিবর্তন ঘটাতে হবে নীতি ও নেতৃত্বের, সংস্কার ও সংশোধনী আনতে হবে নাগরিক সেবা প্রদানের বিধিমালায়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, টেন্ডারবাজী ও টেন্ডারগুছের অশুভপ্রবনতা থেকে সিটি কর্পোরেশনকে মুক্ত রাখতে হবে। উন্নয়নের নামে নিম্নমানের কাজ কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ‘সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন’ নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে করছে। নগরবাসীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য যতগুলো সংস্থা গড়ে ওঠেছে তার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন থেকে জনগণের সত্যিকারের কল্যাণ ও কাম্যমানের উন্নয়ন নির্ভর করে মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সততা, যোগ্যতা ও তাঁদের গৃহীত নীতি, পরিকল্পনা ও ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগীতার ওপর। মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সততা, যোগ্যতা ও তাঁদের গৃহীত নীতিসমূহ এবং সরকারের সহযোগীতা যত উন্নত হবে জনগণের কল্যাণ ও নগরীর উন্নয়নও তত উন্নত হবে। পক্ষান্তরে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যদি সৎ ও যোগ্য না হন এবং সরকারের সহযোগীতা কাঙ্খিতমানের না থাকে, তাহলে তাঁদের নির্বাচনী ওয়াদা ফাঁকাবুলি ও ধোকাবাজিতে পরিণত হবে। তাঁদের থেকে নাগরিকের প্রকৃত কোনো কল্যাণ ও নগর উন্নয়নের কোন আশা করা যায় না। এ বাস্তবতা সামনে রেখেই সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন-এর পক্ষে আমি ৩০ দফা কর্মসূচি সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং সকলের সহযোগীতা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে একটি উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শান্তির নগরী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করব, ইনশাআল্লাহ্।

নির্বচনী ইশতেহার নিম্নরূপ-

১. সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত, কার্যকর ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সিটি কর্পোরেশনে সংঘটিত দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় অশুভ প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে নগরবাসীকে সচেতন করা হবে। নগরবাসীর অভ্যন্তরীন মূল্যবোধকে উন্নত করার জন্য ব্যবহারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। কারণ একজন সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনও অন্যের ক্ষতি তো দূরের কথা দেশ ও মানুষের অকল্যাণ চিন্তাও করতে পারে না। সিটি কর্পোরেশনের গণপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে সততা ও যোগ্যতার সাথে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুরস্কৃত করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা, কর্মচারী যদি কোন দুর্নীতি বা অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তবে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিটি অফিসে ‘অভিযোগ বাক্স’ স্থাপন করা হবে এবং দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

২. সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা সিটিকে ভেজালমুক্ত করা হবে। খাবারে ভেজাল, বিষক্রিয়া ও খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও ইনসাফভিত্তিক বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়।

৩. দেশী-বিদেশী নগরউন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। তাদের পরামর্শে এবং বাস্তবতার নিরিখে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক মেগাসিটিতে রূপান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল, হংকং, সিংগাপুর এবং কুয়ালালামপুরকে অনুসরণ করা হবে।

৪. নগরবাসীর জীবনমান সুন্দর-স্বাচ্ছন্দ রাখার স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। রাস্তা-ঘাট, পয়ঃনিষ্কাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হবে।

৫. জনজীবন শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে সকল প্রকার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নির্মূল করা হবে। মাদক, ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপসাংস্কৃতিক কর্মকা- কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জাতির ভবিষ্যত ছাত্র ও যুবসমাজের চরিত্রবিধ্বংসী কর্মকান্ড কোনরূপ বরদাশত করা হবে না।

৬. এদেশে শতকরা ৮০ভাগ মানুষ শ্রমিক। শ্রমিকদের সাথে সুন্দর ব্যবহারের আচরণবিধি করা হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার যাতে ব্যাহত না হয়, এ ব্যাপারেও একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ঢাকা মহানগরীতে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। তাদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।

৭. নারী নির্যাতন, নারী অপহরণ, এসিড নিক্ষেপসহ এরূপ জঘন্য কর্মকা-সমূহ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। যৌতুকমুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি ঘোষণা করা হবে। মায়ের জাতি নারী সমাজের সম্মান-মর্যাদা রক্ষার্থে বিজ্ঞাপনের নামে নারীদের অশোভনীয়-অশ্লীল প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে। লোকাল বাসে ১০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য আলাদা বাসের সুব্যবস্থা করা হবে। নারীশিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হবে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য শিশুপার্ক নির্মাণ করে নারী ও শিশুবান্ধব শহরে রূপান্তর করা হবে।

৮. পঙ্গু ও কর্মোক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত মহানগরী ঘোষণা করা হবে। স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রিকশাা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি ও ট্যাক্সি চালকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদেরকে মালিকানায় উন্নীত করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকেও এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হবে। সাথে সাথে বেকারদের কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

৯. যানজট নিরসনে পুলিশ-প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধন করে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আরও ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিং-এ যানবাহনের জন্য ওভারপাস বা আন্ডারপাস এবং বাস বে নির্মাণ করা হবে। নগর পরিবহনে যাত্রী ওঠা-নামার সুবিধার্থে নিরাপদ বে তৈরি করা হবে। পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ফুটপাথ তৈরি করা হবে। বর্তমান ফুটপাথসমূহ দখলমুক্ত করে চলাচলের উপযুক্ত করা হবে। রাস্তা পারাপারের জন্য প্রবীণ, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীসহ সকলের উপযোগী পর্যাপ্ত নিরাপদ ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।

১০. সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাঁদের জানমাল ও সম্মানের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হবে। তাঁরা যাতে শঙ্কামুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন, তার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

১১. সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সব ধরনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘর্ষ নিরসনকল্পে সকল ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান সম্প্রীতি-সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১২. সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ ও আমানত রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের বেদখল হয়ে যাওয়া সকল সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ স্থাপনাসমূহ আইনানুযায়ী ভেঙ্গে ফেলা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকা- সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য ন্যায্য ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

১৩. ব্যবসায়িক কর্মকা- গতিশীল ও নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশে এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কন্নোয়নে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪. মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৫. মসজিদের নগরী ঢাকার জনগণ একটি সুস্থ ও গতিশীল সংস্কৃতি লালন করে আসছেন। আমাদের সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যকে রক্ষা, লালন ও বিকশিতকরণ এবং যেকোন অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয়- এমন সকল প্রাণবন্ত ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।

১৬. পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ দূষণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অবাধে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা হবে। মহানগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ধুলাবালিমুক্ত রাখার সুব্যবস্থা করা হবে।
বৃক্ষনিধন বন্ধ এবং রোপনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করে ঢাকা শহরকে একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ শহরে রূপান্তর করা হবে।

১৭. দেশী-বিদেশী নগর বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরিকরণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৮. ক্ষুদ্র যানবাহন- রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী ইত্যাদি যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি মওকুফ করে দেয়া হবে।

১৯. ছিন্নমূল ও ভ্রাম্যমান হকারদের হয়রানী বন্ধের জন্য তাঁদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। পরিচয়পত্রধারীদের কোন রকমের পুলিশী এবং অন্যান্য অশুভ শক্তির হয়রানী বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০. পথিক এবং ভ্রাম্যমান মানুষের জন্য নতুন ২০০০ স্যানিটারী টয়লেট নির্মাণ করা হবে।

২১. জনসভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যাতে কোনরূপ রাস্তা-ঘাট বন্ধ এবং অহেতুক যানজট না হয়, সে লক্ষ্যে ২০টি মাঠ বরাদ্দ দেয়া হবে।

২২. সু-স্বাস্থ্য রক্ষায় সুপেয় পানির প্রয়োজন পূরণে ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে ঢাকা মহানগর উত্তর-এর প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। বস্তি এলাকায় পানির সরবরাহ সহজলভ্য করা হবে।

২৩. বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। যাতে উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। বাসা ভাড়া সহনশীলাবস্থায় আনয়নের জন্য বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০% কমানো হবে। হোল্ডিংবিহীন বাড়ীর হোল্ডিং নম্বর প্রদানে সহজ ব্যবস্থা প্রণনয় করা হবে।

২৪. যাত্রীসেবা উন্নত করণের লক্ষ্যে বিআরটিএর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিএনজি’র লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। যাতে মালিকরা ড্রাইভারের কাছ থেকে দৈনিক জমার নির্দিষ্ট টাকা ন্যায়সঙ্গতভাবে নিতে পারেন। মিটার ব্যবহারে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, যাতে মালিক ও চালকদের যথাযথ স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।

২৫. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে নগরের প্রতিটি থানায় সুলভে উন্নত চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য ১টি করে উন্নতমানের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।

২৬. ধুলা, ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিটি বিষয়ে একটি করে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। যাতে তড়িৎ গতিতে উপরোক্ত সমস্যাগুলো নিরসন করা যায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং মশা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী নিষ্কাষণ ব্যবস্থাকে উন্নততর করা এবং মশার প্রজননস্থলগুলোকে ধ্বংস করার স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বল্পমেয়াদে ওষুধ ছিটিয়ে নগরীকে মশামুক্ত করা হবে।

২৭. সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ছোট-বড় সকল রাস্তা-ঘাট, পানির লাইন, ক্যাবল লাইন, ইলেকট্রিক লাইন, সুয়ারেজ লাইন ও আইল্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্মত করা হবে।

২৮. ক্ষুদে টোকাইদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ফ্রি শিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

২৯. প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। এলক্ষে যানবাহনে এবং রাস্তা-ঘাটে চলাচলে সবাই যাতে তাদের সাহায্য এগিয়ে আসে, সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ব্যপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।

৩০. খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাস, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ রোধপল্পে এলাকার মানুষকে সংগঠিত করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোটারগণের প্রতি আবেদন,
সম্মানিত শান্তিকামী ও মুক্তিকামী ভাই ও বোনেরা!
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, অপরিকল্পিত কাজকর্ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়নমূলক কাজে-কর্মে ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপ চলে আসছে, তা নিরসন করে জনজীবনকে স্বাচ্ছন্দময় করে গড়ে তোলার জন্য আসন্ন সিটি নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে ঢাকার ভবিষ্যৎ। আপনারা সম্মিলিতভাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর আমূল পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে আমি শেখ ফজলে বারী মাসউদও আপনাদের খাদেম হিসেবে কাজ করতে একান্ত আগ্রহী। একাজে সফলতা অর্জনের জন্য আমি আপনাদের দোয়া চাই। আমি ইশতেহারে যে সকল কথা বলেছি জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তা বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ। আমার প্রতি এদেশের শান্তিকামী, মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক মানুষের ভালোবাসা, পীর-মাশায়েখ এবং ওলামায়ে কেরামের দোয়া এবং তত্ত্বাবধান রয়েছে। এটাই আমার কাজের প্রেরণা।

আমি সকলের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, শান্তি-মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করছি।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের সহায় হোন, আমীন।

সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন সমর্থিত
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী
শেখ ফজলে বারী মাসউদ
প্রতীক : কমলালেবু



মন্তব্য চালু নেই