ঢাকার আহ্বানে লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকার আহ্বানে লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের শ্রম বাজারের কথা মাথায় রেখে ঢাকা থেকে লিবিয়াকে বলা হয়, আপাতত বাংলাদেশ শ্রমিকদের ভিসা না দেওয়ার জন্য। ঢাকার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে লিবিয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের (বিশেষ কারিগরি ক্ষেত্র বাদে) ভিসা না দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বাংলাদেশীদের লিবিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছি। ওই দেশ নিরাপদ নয়। লিবিয়া সরকারের নিষেধাজ্ঞার আগে আমরাই বাংলাদেশীদের লিবিয়ায় যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বুধবার জানান, লিবিয়ার পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল নয়। দেশটিতে দেশী-বিদেশী সকলেরই নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গত এক বছরে লিবিয়ায় কমপক্ষে চার বাংলাদেশী নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া গত তিন মাসে মুক্তিপণ দিয়ে দেশটির সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে দুই বাংলাদেশীর মুক্তিলাভের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, লিবিয়া-বাংলাদেশ উভয় দেশের এক শ্রেণীর দালালচক্র বাংলাদেশী নিরীহ মানুষদের বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার টোপ দেয়। এমন পরিস্থিতির শিকার বাংলাদেশী অনেকের সঙ্গে আলাপ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে, দালালচক্র লিবিয়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য এক বাংলাদেশীর কাছ থেকে গড়ে ১০ লাখ টাকা নেয়। আবার লিবিয়া পৌঁছার পর ওই বাংলাদেশীদের জিম্মি করে ইউরোপ যাওয়ার জন্য আরও ১০ লাখ টাকা নেয়।

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পেরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, ওই অসাধু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত লিবিয়ার দূতাবাসও জড়িত।

ঢাকায় নিযুক্ত লিবিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ওই সময় তাকে বলা হয়, আপাতত বাংলাদেশীদের জন্য লিবিয়ার ভিসা যাতে ইস্যু করা না হয়।

লিবিয়া সরকার এর পর পরই শনিবার দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকারের মুখপাত্র হাতেম উরাইবি শনিবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশী শ্রমিকরা আর লিবিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তারা (বাংলাদেশী) লিবিয়ার ফার্মে কাজ করতে আসেন। কিন্তু পরে অবৈধভাবে ইউরোপে যান। সরকারের অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া ওই সাক্ষাতকারে উরাইবি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে এর থেকে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, লিবিয়ার চলমান সহিংস সংঘর্ষে গত এক বছরে চার বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার সিরত শহরের দক্ষিণপ্রান্তের একটি তেলক্ষেত্রে কর্মরত ২১ বাংলাদেশীকে গত মার্চে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে লিবিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে দুই বাংলাদেশী হেলাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন অপহৃত হন। দীর্ঘ ১৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতায় তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃত গোষ্ঠীর হাত থেকে উদ্ধার করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই