‘ড. ইউনূসের সমাধান যুক্তরাষ্ট্রেও ফল দিয়েছে’

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. ইউনূস বিশ্বের দরিদ্রতা দূর করতে যে ধারণা দিয়েছেন এবং বাস্তবে প্রয়োগ করেছেন, তা মানুষের উপকারে এসেছে। ড. ইউনূস এমন কিছু সমাধান দিয়েছেন যা বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতেও দারুণ ফল দিয়েছে।

সোশ্যাল বিজনেস ডে উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট এ কথা বলেন।

পাঠকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের দেওয়া বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল- ‘আজ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি বাংলাদেশের সোশ্যাল বিজনেস এবং অনান্য উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যে অবদান রেখেছে তা উদযাপন করতে এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যপূরণ করতে সামনের বছরগুলোতে কীভাবে আরও বেশি করে অবদান রাখা যায় তা শিখতে। প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে প্রথম সোশ্যাল বিজনেস হিসেবে গণ্য করেন যা ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করে। সারাবিশ্বের ২০ কোটিরও বেশি মানুষ বিশেষ করে নারীরা মাইক্রোক্রেডিটের সুবিধা নিতে পারে। এ বিপ্লব ঘটানো পরিবারগুলো পুরো বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে বাস করে।’

‘সোশ্যাল বিজনেসের ধারণাটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত অর্থনীতির ক্ষেত্রেও কার্যকর। ২০০৮ সালে গ্রামীণ আমেরিকা তৈরি করার মধ্য দিয়ে প্রফেসর ইউনূস এমন কিছু সমাধান নেন যা বাংলাদেশের গ্রামগুলো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতেও দারুণ ফল নিয়ে এসেছে। যদিও আমাদের দেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং নাগরিকদের জীবন ব্যবস্থার মানদণ্ডের গড় সর্বোচ্চ কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এখনো অনেক আমেরিকান দরিদ্র জীবনযাপন করেন। এ দরিদ্রতা সামঞ্জ্যসহীনভাবে নারীদের ওপর প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের এক-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবারের প্রধান নারী কিন্তু তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। বাংলাদেশে যেমন, গ্রামীণ আমেরিকা ঠিক একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এ কমিউনিটিগুলোর নারীদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে দেখে যার ফলে এ পরিবারগুলো দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে উঠে আসতে পারে।’

‘গ্রামীণ আমেরিকা বর্তমানে ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে এবং ৪৭ হাজারের বেশি নারীর কাছে পৌঁছেছে। এই কৌশল নারীদের নেটওয়ার্ক, অর্থনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার মূলধন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের সুযোগ দেয়। গ্রামীণ আমেরিকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে কাজ করছে এবং ২৬ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোগ ৫৭ হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে যা দ্বারা এটির প্রভাব পরিমাপ করা যায়।’

‘যুক্তরাষ্ট্রে সোশ্যাল বিজনেস বলতে বোঝায় নতুন উদ্যোগ গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব এবং ব্যবসা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখা। অলাভজনক উপদেষ্টা দ্য ব্রিজস্প্যান গ্রুপের মতে, গত দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায় শিক্ষা দেওয়া স্কুলগুলো তাদের বিদ্যমান পাঠক্রম ব্যবসায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামাজিক সুবিধার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে তা দ্রুত বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে যা সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলেরই ৯০ জনের চেয়ে বেশি শিক্ষক গবেষণা করছেন এবং সামাজিক উদ্যোগ পাঠক্রমটি উন্নয়নে কাজ করছেন। অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেক শীর্ষ প্রোগ্রামের একাডেমিক কেন্দ্র রয়েছে যারা সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করছে। অসংখ্য শিক্ষার্থী এ সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করার সুযোগ খোঁজে যাতে করে তারা নিজেদের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ঝালিয়ে নিতে পারে পরবর্তীতে নিজেদের প্রতিষ্ঠান শুরু করার জন্য যা বিশ্বের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো এবং উদ্যোক্তারাও তা অনুসরণ করছে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল সমাধানের জন্য। হার্ভার্ড বিজিনেস স্কুল রিভিউয়ের মতে, এমবিএ প্রোগ্রাম আজ শিল্পের নেতাদের তৈরির পাশাপাশি তারা সামাজিক কল্যাণের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে।’

“এই উৎসাহ, নতুন উদ্যোগ গঠনে নিয়ে যায় যার লক্ষ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিক্ষার সুযোগ। স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার পানি, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং সুন্দর জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। গ্লোবাল এন্টারপ্রিনারশিপ মনিটর, দ্য গ্রেট সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ সেনসাস এবং অন্য পরিমাপকগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে হাজার থেকে লাখো নতুন প্রতিষ্ঠান নিদের সোশ্যাল বিজনেস বলে মনে করে। উদ্যোক্তা এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের সমর্থন দেওয়া আমাদের পররাষ্ট্র দফতরের লক্ষ্যগুলোর অংশ। দু’সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ওবামা আমাদের ‘স্পার্ক গ্লোবাল এন্টারপ্রিনারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে কথা বলেছেন। এ প্রোগ্রামটির লক্ষ্য ২০১৭ সালের মধ্যে উঠতি উদ্যোক্তা এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য এক হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করা। আমাদের লক্ষ্য এ তহবিলের অর্ধেক দিয়ে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সমর্থন দেওয়া। এ সব অগ্রণী উদ্যোক্তাদের নতুন আবিষ্কার সারা পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভাবী মানুষদের জন্য সামাজিক সুবিধা নিয়ে আসবে। পৃথিবীর কঠিন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনারা যে অবদান রাখছেন তা প্রেসিডেন্ট আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এ সময়ে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তা কোনো দেশ একা সমধান করতে পারবে না। মানুষের দারিদ্র্য দূর করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা, রোগবিস্তার প্রতিরোধ করা, সামাজিক উদ্যোক্তাদের ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া এবং তাদের সংগঠিত করতে সাহায্য করা যাতে করে আরও অনেক বেশি মানুষ একত্রিত হয়ে সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।”



মন্তব্য চালু নেই