ড্রোনের উত্থানের বছর

২০১৫ সালে পৃথিবীতে যত ধরনের প্রযুক্তি পণ্য উদ্ভাবিত হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ড্রোন। তাই এই বছরটাকে বলা হচ্ছে ড্রোনের উত্থানের বছর। এ বছরে হরেক রকমের, নানা কাজের ড্রোন তৈরি হয়েছে। এই বছরই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্টেশন বিভাগ ব্যক্তিগত ড্রোন উড়ানোর ক্ষেত্রে সনদ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া ড্রোনের অবাধ ব্যবহার ঠেকাতে ড্রোন ধরতে উদ্ভাবিত হয়েছে নানা প্রযুক্তি। আসুন দেখে নেয়া যাক এ বছরে ড্রোন দিয়ে কী কী কাজ করানো হয়েছে।

পণ্য পরিবহন
ড্রোন উড়ানো এখন আর শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাণিজ্যিক কাজে কিংবা পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। এবছরের শেষের দিকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট অ্যামাজন তাদের প্রথম ডেলিভারি ড্রোন উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে। এই ড্রোনের সাহায্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করা হবে।

ড্রোন ধরবে ড্রোন
জাপান সরকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তায় ব্যবহার করবে ড্রোন। জাপানের পুলিশ বাহিনী, প্রধানমন্ত্রী ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হবে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে একটি ড্রোন জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ছাদে নামে। যদিও এতে কোনও ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে টোকিওর পুলিশ প্রশাসন। কোনো ড্রোনকে যদি সন্দেহজনক ভাবে আকাশে উড়তে দেখা যায় তবে প্রথমে লাউড স্পিকার দিয়ে তাকে সতর্ক করা হবে। অপারেটরের কাছ থেকে কোন সাড়া না পাওয়া গেলে ওই সন্দেহজনক ড্রোনটিকে ধরতে পুলিশ তাদের নিজস্ব ড্রোন পাঠাবে। জাল দিয়ে সেটিকে ভূমিতে নামিয়ে আনা হবে।

নকল ধরবে ড্রোন
চীনে পরীক্ষায় নকল বন্ধ করতে ব্যবহার করা হবে ড্রোন। চীনে ন্যাশনাল কলেজ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় নকল ঠেকাতে ব্যবহার করা হবে এই প্রযুক্তি। ড্রোনের ব্যবহার যে কত রকমের হতে পারে সেটা এবার বোঝা যাবে। চীনা ভাষায় এই পরীক্ষাকে বলা হয়ে ‘গাওকাও’। পৃথিবীর অন্যতম কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বলা হয় এটিকে।

ড্রোন ধরতে জ্যামিং সিস্টেম
বর্তমানে সময়ে বেশ জোরেশোরেই ড্রোনের উত্থান ঘটেছে। গোয়েন্দা নজরদারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। ড্রোনের যথেচ্ছা ব্যবহার ঠেকাতে যুক্তরাজ্য নতুন যন্ত্র আবিস্কার করেছে। এই যন্ত্র দিয়ে উড়ন্ত ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সম্ভব।

এই যন্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে ‘এন্ট্রি ইউএভি ডিফেন্স সিস্টেম’। যৌথভাবে এটি তৈরি করেছে বিলাইটার সার্ভিলেন্স সিস্টেম, চেস ডায়নামিক এবং এন্টারপ্রাইজ কন্ট্রোল সিস্টেমস লিমিটেড।

এই যন্ত্রে আছে রাডার, ইলেক্টো অপটিক্যাল ক্যামেরা এবং জ্যামিং সিস্টেম। যা দিয়ে উড়ন্ত রোবটকে পথভ্রষ্ট করে দেয়া যাবে।

সাংবাদিকতায় ড্রোন
কানাডায় সাংবাদিকতা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ড্রোনের সাহায্যে টেলিভিশনের প্রতিবেদন তৈরির ওপর বিশেষ কোর্স পড়ানো হচ্ছে। স্মার্টফোনের সহায়তায় নিয়ন্ত্রিত ড্রোনের সাহায্যে ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ ধরনের ক্যামেরা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এসব ক্যামেরায় সময়ের অতি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে ঘটে যাওয়া সূক্ষ্ম দৃশ্যও ধারণ করা সম্ভব হবে।

মশা মারতে ড্রোন
মশা মারার ক্ষেত্রে কামান দাগানোর কথা প্রায়ই আসে। কিন্তু ক্ষুদ্র এই প্রাণি মারতে কামান দাগানো হোক আর নাই হোক, ড্রোনের ব্যবহার করা যেতেই পারে। আর তাইতো, জামার্নিতে মশা মারতে একটি ড্রোনের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ১২ কিলোগ্রাম ওজনের ড্রোনটি থেকে যে ‘বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্ট’ ছড়ানো হবে, তা মশার কীট বিনষ্ট করার ক্ষমতা রাখে।

ড্রোনের সামরিক ব্যবহার
ড্রোন যে শুধু ছবি তোলার কাজে ব্যবহার হয়, এমন নয়। বরং যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা নজরদারিতে এর ব্যবহার আরো ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ড্রোন ব্যবহার করছে যুদ্ধের কাজে, জঙ্গি দমনে। তবে এতে বেসামরকি প্রাণহানিও ঘটছে।

দেশে কৃষি গবেষণায় ড্রোনের ব্যবহার
কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পটুয়াখালীতে কৃষি গবেষণায় ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন । দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা কাজ চালানো হচ্ছে।

প্রায় এক মাস ধরে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার জৈনকাঠি, কলাপাড়ার পূর্বআমীরাবাদসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ড্রোন দিয়ে গবেষণার কাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়াও বরিশাল সদরের উলানবাদনা গ্রামে ড্রোন দিয়ে গবেষণার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।



মন্তব্য চালু নেই