ডিম্বাশয়ের সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার লক্ষণসমূহ

ডিম্বাশয়ের ভেতরে তরলে পরিপূর্ণ থলির নেয়া গঠনকে ওভারিয়ান সিস্ট বলে। নারীর জীবনের শিশু অবস্থা থেকে মেনোপোজ পরবর্তী অবস্থা পর্যন্ত যে কোন পর্যায়ে হতে পারে এই সিস্ট। ডিম্বাশয়ের সিস্টের ধরণ, সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার লক্ষণ ও কারণ জানবো আজ।

ডিম্বাশয়ের সিস্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে :

১। ফাংশনাল সিস্ট ও ২। প্যাথলজিক্যাল সিস্ট

১। ফাংশনাল সিস্ট

মাসিক চক্রের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে ফাংশনাল সিস্ট। যদি ফলিকল থেকে ডিম্ব নিঃসৃত না হয় তাহলে এ ধরণের সিস্ট বিকাশ লাভ করে, একে ফলিকিউলার সিস্ট বলে। যদি ফলিকল থেকে ডিম্ব নিঃসৃত হওয়ার পরেও এর ভেতরের তরল বের হয়ে না যায় তাহলেও সিস্ট বিকাশ লাভ করতে পারে, এ ধরণের সিস্টকে করপাস লুটিয়াম সিস্ট বলে। ফাংশনাল সিস্ট সাধারণত অক্ষতিকর হয়ে থাকে।

২। প্যাথলজিক্যাল সিস্ট

ডিম্বাশয়ের বাহিরের প্রাচীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে অথবা ডিম্ব তৈরি করে যে কোষ তার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে প্যাথলজিক্যাল সিস্ট। কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ডিম্বাশয়ে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয় অথবা এটি ফেটে যায়। প্যাথলজিক্যাল সিস্ট সাধারণত অক্ষতিকর হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মারাত্মক হতে পারে। এধরণের সিস্ট আবার তিন ধরণের হয়ে থাকে –

· ডারময়েড সিস্ট – এ ধরণের সিস্টে চুল, ত্বক বা দাঁতের টিস্যু থাকতে পারে এবং এরা খুব কমই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হয়।

· সিস্টাডেনোমাস – এ ধরণের সিস্ট পানি বা মিউকাসের মত তরলে পূর্ণ থাকে।

· এন্ডোমেট্রিওমাস – কখনো কখনো জরায়ুর ভেতরের প্রাচীরের কোষ যাকে এন্ড্রোমেট্রিয়াম বলে, সেগুলো জরায়ুর বাহিরেও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই টিস্যুগুলোর কিছু ডিম্বাশয়ের সাথে যুক্ত হয় এবং সিস্ট গঠন করে। এই সিস্টগুলো রক্তে পরিপূর্ণ থাকে।

কিছু নারীদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হতে দেখা যায়। ডিম্বাশয়ে অনেক ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হলে এই সমস্যাটি হয়।

সাধারণত ডিম্বাশয় সিস্টের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না এবং এটি যেকোন সময় ভালো হয়ে যেতে পারে। লক্ষণ প্রকাশিত হলেও তা হয় খুব হালকা ধরণের। যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল –

· অনিয়মিত পিরিয়ড

· তলপেটের স্ফীতি

· শ্রোণী অঞ্চলে বা পিঠের নীচের দিকে ব্যথা

যদি ডিম্বাশয়ের সিস্ট বিদীর্ণ হয়ে যায় তাহলে সমস্যা তৈরি হয়। পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা আছে যে নারীদের তাদের সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিস্ট ফেটে যাওয়ার পরে যদি রক্তপাত হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে।

ডিম্বাশয়ের সিস্ট বিদীর্ণ হলে শ্রোণী অঞ্চলে তীব্র ব্যথা ও অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে। ডিম্বাশয়ের সিস্ট ফেটে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হল :

১। পেটে তীব্র ব্যথা হওয়া

সিস্ট ফেটে গেলে হঠাৎ করে তীব্র ও সূক্ষ্ম ব্যথা হয় এবং কিছু নারীর ক্ষেত্রে উদরের নীচের অংশে অবশ হওয়ার মত ব্যথা হয়। সাধারণত ব্যথা শুরু হয় শরীরের সে পাশ দিয়ে যেখানে সিস্ট ফাটে। গবেষণায় দেখা গেছে ডিম্বাশয়ের সিস্ট ডান পাশে বিদীর্ণ হয়। গবেষকদের মতে এটি হয় ডিম্বাশয়ের রক্তনালীর বিভিন্নতার কারণে, যার ফলে ডান ডিম্বাশয়ে অধিক চাপ পড়ে এবং ডানপাশের সিস্ট ফেটে যায়।

২। রক্তপাত

পিরিয়ডের সময়ে সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা ঘটে বেশি। সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার লক্ষণ বুঝতে না পারার এটি একটি কারণ। রক্তপাত অনেক বেশি হলে তা হতে পারে মারাত্মক। সাধারণত ফাংশনাল সিস্টগুলোতেই রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে করপাস লুটিয়াল সিস্ট এর দেয়ালে প্রচুর রক্তনালী থাকে এটি বিদীর্ণ হলে রক্তপাত হয় বেশি – গবেষকেরা বলেন।

৩। পেটে চাপ অনুভব করা ও স্ফীত হওয়া

সিস্ট উদরের অনেকটা অংশ দখল করে নেয় এবং অন্য অঙ্গের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যদিও সিস্ট ফেটে যাওয়ার পরে চাপ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু সিস্টের তরল যখন ছড়িয়ে যায় তখন অনেক বেশি পেট ফাঁপার সমস্যা তৈরি হয়।

৪। বমি

মাথাঘোরানো, বমি বমি ভাব, বমি এবং নিম্নমাত্রার জ্বর হওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার।

ডিম্বাশয় সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার কারণ :

সাধারণত ডিম্বাশয় সিস্ট যখন অনেক বড় হয়ে যায় তখনই তা বিদীর্ণ হয়। বিভিন্ন কারণে এই সিস্ট বিদীর্ণ হতে পারে-

· হরমোনের ওঠানাম – সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হচ্ছে মাসিক চক্র এবং হরমোনের ওঠানামা। ফাংশনাল সিস্ট বিদীর্ণ হওয়া ক্ষতিকর নয় এবং কোন চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়না।

· গর্ভাবস্থা – গর্ভাবস্থায় সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্বতঃস্ফূর্ত হিমোপেরিটোনিয়াম অথবা আঘাত ছাড়াই সিস্ট ফেটে গেলে তা জীবন সংশয়কারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে হয়।

· অ্যান্টি- কোয়াগুলেশন থেরাপি – যে নারীরা রক্ত জমাট না বাঁধার ঔষধ সেবন করেন অথবা রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের ঘাটতিতে ভোগেন তাদের করপাস লুটিয়াম সিস্ট বিদীর্ণ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় রক্ত জমাট বাঁধার অস্বাভাবিকতার কারণে।

· কোষ্ঠকাঠিন্য – মল আটকে থাকলে তা সিস্টের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং ফেটে যেতে পারে।

· আঘাতের কারণে বা হঠাৎ কোন নড়াচড়ার সময় যেমন- ব্যায়াম করলে, খেলাধুলার সময় অথবা উপুর হয়ে কিছু তোলার সময় সিস্ট ফেটে যেতে পারে।

· এছাড়াও সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের সময় বড় সিস্ট ফেটে যেতে পারে। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, এটোপিক প্রেগনেন্সি এবং যকৃৎ বা প্লীহা থেকে রক্তপাতের কারণেও সিস্ট ফেটে যেতে পারে।

সূত্র: দ্যা হেলথ সাইট



মন্তব্য চালু নেই